পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. - মৃণালিনী । বালিকা বলিয়া বোধ হুইত, তাহার হেতু এই যে, মুখকাস্তি অনিৰ্ব্বচনীয় কোমল, অনিৰ্ব্বচনীয় মধুর, নিতান্ত বালিকাবয়সের ঔদার্য্যবিশিষ্ট ; সুতরাং হেমচন্দ্র ষে তাহার পঞ্চদশ বৎসর বয়ঃক্রম অনুভব করিয়াছিলেন, তাহ অন্যায় হয় নাই। মনোরমার বয়ঃক্রম যথার্থ পঞ্চদশ, কি যোড়শ, কি তদধিক- কি তন্ন্যুন, তাহা ইতিহাস লেখে না, পাঠক মহাশয় স্বয়ং সিদ্ধান্ত করিবেন । মনোরমার বয়স যতই হউক না কেন, তাহার রূপরাশি অতুল-চক্ষুতে ধরে না। বাল্যে, কৈশোরে, যৌবনে সৰ্ব্বকালে সে রূপরাশি দুল্লভ। একে বর্ণ সোনার চাপ, তাহাতে ভুজঙ্গশিশুশ্রেণীর স্তায় কুঞ্চিত অলকশ্রেণী মুখখানি বেড়িয়া থাকে ; এক্ষণে বাপীজলসিঞ্চনে সে কেশ ঋজু হইয়াছে ; অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃত নিৰ্ম্মল ললাট ; ভ্রমর-ভরস্পন্দিত নীলপুপতুল্য কৃষ্ণতার চঞ্চল লোচনযুগল ; মুহুর্মুহুঃ আকুঞ্চন-বিস্ফারণ প্রবৃত্ত রন্ধযুক্ত সুগঠন নাসা ; অধরেীষ্ঠ যেন প্রাতঃশিশিরে সিক্ত, প্রাতঃস্থৰ্য্যের কিরণে প্রোদ্ভিন্ন রক্তকুসুমাবলীর স্তরযুগল তুল্য ; কপোল যেন চন্দ্র করেজ্জিল নিতান্ত স্থির গঙ্গাপ্পুবিস্তারবৎ প্রসন্ন ; শাবকহিংসাশঙ্কায় উত্তেজিত হংসীর ন্যায় গ্রীব,--বেণী বাধিলেও সে গ্রীবার উপরে আবদ্ধ ক্ষুদ্র কুঞ্চিত কেশ সকল আসিয়া কেলি করে । দ্বিরদরদ যদি কুমুমকোমল হইত, কিংবা চম্পক যদি গঠনোপযোগী কাঠিন্য পাইত, কিংব চন্দ্রকিরণ যদি শরীরবিশিষ্ট হইত, তবে তাহাতে সে বাহুযুগল গড়িতে পারা যাইত— সে হৃদয় কেবল সেই হৃদয়েই গড়া যাইতে পারিত । এ সকলই অন্ত সুন্দরীর আছে। মনোরমার রূপরাশি অতুল—কেবল র্তাহার সৰ্ব্বাঙ্গীন সোঁকুমার্ষ্যের জন্ত ! র্তাহার বদন সুকুমার ; আধর, ক্রযুগল, ললাট সুকুমার ; সুকুমার কপোল ; সুকুমার কেশ । অলকাবলী যে ভুজঙ্গশিশুরূপী, সেও স্বকুমার ভুজঙ্গ’ শিশু। গ্রীবায় গ্রীবাভঙ্গীতে সোঁকুমাৰ্য্য ; বাহুতে বাহুর প্রক্ষেপে সোঁকুমাৰ্য্য ; হৃদয়ের উচ্ছ্বাসে সেই সোঁকুমাৰ্য্য ; সুকুমার চরণ, চরণবিন্যাস মুকুমার। গমন স্বকুমার, বসন্তবায়ুসঞ্চালিত, কুসুমিত লতার মন্দান্দোলন তুল্য ; বচন স্বকুমার, নিশীথসময়ে জলরাশিপার হইতে সমাগত বিরহসঙ্গীত তুল্য ; কটাক্ষ মুকুমার, ক্ষণমাত্র জন্ত মেঘমালাযুক্ত সুধাংশুর কিরণ-সম্পাত তুল্য ; আর ঐ যে মনোরম দেবী

আর বাণীজ লার্জ আবদ্ধ কেশরাশির কিয়দংশ এক হস্তে ধরিয়া, এক চরণ ঈষন্মাত্র অগ্রবর্তী করিয়া ষে ভঙ্গীতে মনোরম দাড়াইয়া আছে, ও ভঙ্গীও সুকুমার ; নবীন স্থৰ্য্যোদয়ে সদ্যঃ প্রফুল্লদলমালাময়ী নলিনীর প্রসন্ন ব্রীড়াতুল্য স্বকুমার । সেই মাধুৰ্য্যময় দেহের উপর দেবীপাশ্বস্থিত রত্নদীপের আলোক । পতিত হইল। পশুপতি অতৃপ্তনয়নে দেখিতে লাগিলেন। নবম পরিচ্ছেদ মোহিতা পশুপতি অতৃপ্তনয়নে দেখিতে লাগিলেন । দেখিতে দেখিতে মনোরমার সৌন্দর্য্যসাগরের এক অপূৰ্ব্ব মহিম। দেখিতে পাইলেন। যেমন স্বর্ষ্যের প্রথর করমালায় হাস্যময় অম্বুরাশি মেঘসঞ্চারে ক্রমে ক্রমে গম্ভীর কৃষ্ণকান্তি প্রাপ্ত হয়, তেমনই পশুপতি দেখিতে দেখিতে মনোরমার সোঁকুমাৰ্য্যময় মুখমণ্ডল গম্ভীর হইতে লাগিল ; আর সে বালিকাসুলভ ঔদার্য্যব্যঞ্জক ভাব রহিল না। অপূৰ্ব্ব তেজোভিব্যক্তির সহিত প্ৰগলভ বয়সেরও দুল্লভ গাম্ভীৰ্য্য তাহাতে বিরাজ করিতে লাগিল । সরলতাকে ঢাকিয়া প্রতিভ উদিত হইল। পশুপতি কহিলেন, “মনোরমা, এত রাত্রিতে কেন আসিয়াছ ?-এ কি ? আজি তোমার এ ভাৰ কেন ?” মনোরমা উত্তর করিলেন, “আমার কি ভাৰ দেখিলে ?” প। তোমার দুই মূৰ্ত্তি—এক মূৰ্ত্তি আনন্দময়ী, সরলা বালিকা—সে মূৰ্ত্তিতে কেন আসিলে না 7– সেই রূপে আমার হৃদয় শীতল হয় । আর তোমার এই মূৰ্ত্তি গম্ভীর, তেজস্বিনী, প্রতিভাময়ী, প্রখরবুদ্ধি শালিনী, এ মূৰ্ত্তি দেখিলে আমি ভীত হই। তখন বুঝিতে পারি যে, তুমি কোন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছ । আজি তুমি এ মূৰ্ত্তিতে আমাকে ভয় দেখাইতে কেন অসিয়াছ ? ম। পশুপতি, তুমি এত রাত্রি জাগরণ করিয়া কি করিতেছ? - প। আমি রাজকাৰ্য্যে ব্যস্ত ছিলাম—কিন্তু, তুমি— ম। পশুপতি, আবার ? রাজকাৰ্য্যে না লিঙ্গ’ গৃহদ্বারদেশে দাড়াইয়া আছেন,—পশুপতির মুখ+ •বলোকন জন্ত উন্নতমুৰী, নয়নতারা উর্দ্ধস্থাপনস্পন্দিত, ՀԵ