পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షిy 源 প। নিজকাৰ্য্যেই বল। রাজকাৰ্য্যেই হউক, আর নিজকাৰ্য্যেই হউক, আমি কবে না ব্যস্ত থাকি ? তুমি আজি জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন ? ম। আমি সকল শুনিয়াছি । প। কি শুনিয়াছ ? ম। যবনের সঙ্গে পশুপতির মন্ত্রণt—শাস্তশীলের সঙ্গে মন্ত্রণা—স্বারের পাশ্বে থাকিয়া সকল গুনিয়াছি । পশুপতির মুখমণ্ডল যেন মেঘান্ধকারে ব্যাপ্ত হইল । তিনি অনেকক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকিয়া কহিলেন;–“ভালই হইয়াছে। সকল কথাই আমি তোমাকে বলিতাম—না হয় তুমি আগে শুনিয়াছ। তুমি কোন কথা না জান ?” ম। পশুপতি, তুমি আমাকে ত্যাগ করিলে ? প। কেন, মনোরম ? তোমার জন্যই আমি এ মন্ত্রণা করিয়াছি । আমি এক্ষণে রাজভৃত্য, ইচ্ছামত কাৰ্য্য করিতে পারি না । এখন বিধবা-বিবাহ করিলে জনসমাজে পরিত্যক্ত হইব ; কিন্তু যখন আমি স্বয়ং রাজা হুইব, তখন কে আমায় ত্যাগ করিবে ? যেমন বল্লালসেন কৌলীন্তের নূতন পদ্ধতি প্রচলিত করিয়াছিলেন, আমি সেইরূপ বিধবাপরিণয়ের নূতন পদ্ধতি প্রচলিত করিব । মনোরম দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “পগুপতি, সে সকল আমার স্বপ্নমাত্র । তুমি রাজা হইলে, অামার সে স্বপ্ন ভঙ্গ হইবে । আমি কখনও তোমার মহিষী হুইব না ।” প । কেন মনোরম ? ম। কেন ? তুমি রাজ্যভার গ্রহণ করিলে আর কি আমায় ভালবাসিবে ? রাজ্যই তোমার হৃদয়ে প্রধান স্থান পাইবে ।--তখন আমার প্রতি তোমার অনাদর হইবে । তুমি যদি ভাল না বাসিলে—তবে আমি কেন তোমার পত্নীত্ব শৃঙ্খলে বাধ পড়িবে ? প। এ কথাকে কেন মনে স্থান দিতেছ? জাগে ভূমি—পরে রাজ্য। আমার চিরকাল এইরূপ থাকিবে । ম। রাজা হইয়া যদি তাহা কর, রাজ্য অপেক্ষা মছিৰী যদি অধিক ভালবাস, তবে তুমি রাজ্য করিতে পরিবে না । তুমি রাজ্যচ্যুত হুইবে । ন্ত্রৈণ রাজার ब्रांज थां८क नां । পশুপতি প্রশংসমান লোচনে মনোরমার মুখপ্রতি চাহিয়া রছিলেন ; কহিলেন, “যাহার বামে এমন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ..تي. *** সরস্বতী, তাহার আশঙ্কা কি ? না হয় তাহাই হউক। তোমার জন্য রাজ্য ত্যাগ করিব।” ম। তবে রাজ্য গ্রহণ করিতেছ কেন ? ত্যাগের জন্য গ্রহণে ফল কি ? প। তোমার পাণিগ্রহণ । ম। সে অাশা ত্যাগ কর । তুমি রাজ্যলাভ করিলে আমি কখনও তোমার পত্নী হুইব না । প । কেন, মনোরমা ? আমি কি অপরাধ করিলাম ? ম। তুমি বিশ্বাসঘাতক—আমি বিশ্বাসঘাতককে কি প্রকারে ভক্তি কুরিব ? কি প্রকারে বিশ্বাসঘাতককে ভালবাসিব ? প। কেন, আমি কিসে বিশ্বাসঘাতক হইলাম ? ম। তোমার প্রতিপালক প্রভুকে রাজ্যচু্যত করিবার কল্পনা করিতেছ ; শরণাগত রাজপুলকে মারিবার কল্পনা করিতেছ ; ইহা কি বিশ্বাসঘাতকের কৰ্ম্ম নয় ? যে প্রভুর নিকট বিশ্বাস নষ্ট করিল, সে স্ত্রীর নিকট অবিশ্বাসী না হইবে কেন ? পণ্ডপতি নীরব হইয়া রহিলেন । মনোরম। পুনরপি বলিতে লাগিলেন, “পশুপতি, আমি মিনতি করিতেছি, এই দুৰ্ব্ব ব্ধি ত্যাগ কর।” পশুপতি পূৰ্ব্ববৎ অধোবদনে রছিলেন, তাহার রাজ্যাকাজক্ষা এবং মনোরমাকে লাভ করিবার আকাজক্ষ উভয়ই গুরুতর । কিন্তু রাষ্ট্যলাভের যত্ন করিলে মনোরমার প্রণয় হারাইতে হয়, সেও অত্যাজ্য । উভয় সঙ্কটে তাহার চিত্তমধ্যে গুরুতর চাঞ্চল্য জন্মিল । তাহার মতির স্থিরতা দূর হইতে লাগিল । “যদি মনোরমাকেই পাই, ভিক্ষাও ভাল, রাজ্যে কাজ কি ?” এইরূপ পুনঃপুনঃ মনে ইচ্ছা হইতে লাগিল । কিন্তু তখনই আবার ভাবিতে লাগিলেন, “কিন্তু তাহা হইলে লোকনিন্দ, জনসমাজে কলঙ্ক, জাতিনাশ হইবে ; সকলের ঘৃণিত হইব । তাহ কি প্রকারে সহিব ?” পশুপতি নীরবে রহিলেন ; কোন উত্তর দিতে পারিলেন না । মনোরমা উত্তর না পাইয়া কহিতে লাগিল, “গুন পশুপতি, তুমি আমার কথার উত্তর দিলে না। আমি চলিলাম। কিন্তু এই প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে ইহজন্মে আমার সাক্ষাৎ হুইবে না ।” এই বলিয়া মনোরম পশ্চাৎ ফিরিল। পশুপতি রোদন করিয়া উঠিলেন । অমনই মনোরম আবার ফিরিল। আসিয়া পশুপতির হস্তধারণ করিল। পশুপতি তাহার মুখপানে চাহিয়৷ দেখিলেন। দেখিলেন, তেজোগৰ্ব্ববিশিষ্ট, ৯