পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃণালিনী কুঞ্চিভক্রবাচিবিক্ষেপকারিণী সরস্বতী-মুৰ্ত্তি আর নাই ; সে প্রতিভাদেবী অন্তৰ্দ্ধান হইয়াছেন ; কুসুমমুকুমারী বালিকা তাহার হস্তধারণ করিয়া তাহার সঙ্গে রোদন করিতেছে । মনোরমা কছিলেন, "পশুপতি, কাদিতেছ কেন ?” পশুপতি চক্ষুর জল মুছিয়া কহিলেন, “তোমার কথায় ।” ম। কেন, আমি কি বলিয়াছি ? প। তুমি আমাকে ত্যাগ করিয়া যাইতেছিলে । ম। আমি আর এমন করিব না । প। তুমি আমার রাজমহিষী হুইবে ? भ । श्इंद । পশুপতির আনন্দসাগর উছলিয়া উঠিল। উভয়ে অশ্রুপূর্ণলোচনে উভয়ের মুখপ্রতি চাহিয়া উপবেশন করিয়া রহিলেন । সহস মনোরম পক্ষিণীর দ্যায় গাত্ৰোখীন করিয়া চলিয় গেলেন । _ দশম পরিচ্ছেদ t_. ফাদ পূৰ্ব্বেই কথিত হইয়াছে যে, বাপীভীর হইতে হেমচন্দ্ৰ মনোরমার অনুবন্ত্ৰী হইয়া যবন-সন্ধানে আসিতেছিলেন । মনোরম ধৰ্ম্মাধিকারের গৃহ কিছু দূরে থাকিতে হেমচন্দ্রকে কহিলেন, “সম্মুখে এই অট্টালিকা দেখিতেছ ?” হেম । দেখিতেছি । মনে । ঐখানে যবন প্রবেশ করিয়াছে। হেম । কেন ? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়া মনোরমা কহিলেন, “তুমি এইখানেই গাছের আড়ালে থাক। যবনকে এই স্থান দিয়া যাইতে হুইবে ।” হেম । তুমি কোথায় যাইবে ? মনে । আমিও এই বাড়ীতে যাইব । হেমচন্দ্র স্বীকৃত হইলেন। মনোরমার আচরণ দেখিয়৷ কিছু বিস্মিত হইলেন। র্তাহার পরামর্শানুসারে পথিপাশ্বে বৃক্ষান্তরালে লুক্কায়িত হইয়া রহিলেন। মনোরম। গুপ্তপথে অলক্ষ্যে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। এই সময়ে শান্তশীল পশুপতির গৃহে আসিতেছিল। সে দেখিল যে, এক ব্যক্তি বৃক্ষান্তরালে লুক্কায়িত হইল। শাস্তুশীল সন্দেহ প্রযুক্ত সেই বৃক্ষতলে গেল । তথায় হেমচন্দ্রকে দেখিয়া প্রথমে চেীর অনুমানে কহিল, "কে তুমি ? এখানে কি করিতেছ?” পরে ২৯ তৎক্ষণাৎ হেমচন্দ্রের বহুমূল্যের অলঙ্কারশোভিত যোদ্ধৃবেশ দেখিয় কহিল, “আপনি কে ?” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “আমি যে হই না কেন ?" শ। । আপনি এখানে কি করিতেছেন ? হে । আমি এখানে যবনানুসন্ধান করিতেছি । শাস্তশীল চমকিত হইয়া কহিল, “ষবন কোথায় ?” হে । এই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিয়াছে। শাস্তশীল ভীত ব্যক্তির স্তায় স্বরে কহিল, “এ গৃহে কেন ?” হে । তাহা আমি জানি না । শা। এ গৃহ কাহার ? হে । তাহা জানি না । শা। তবে আপনি কি প্রকারে জানিলেন যে, এই গৃহে যবন প্রবেশ করিয়াছে ? হে । তা তোমার শুনিয়া কি হইবে ? শ। । এই গৃহ আমার । যদি যবন ইহাতে প্রবেশ করিয়া থাকে, তবে কোন অনিষ্ট কামনা করিয়া গিয়াছে, সন্দেহ নাই। আপনি যোদ্ধা এবং যবনদ্বেষী দেখিতেছি। যদি ইচ্ছা থাকে, তবে আমার সঙ্গে আসুন—উভয়ে চোরকে ধৃত করিব । হেমচন্দ্র সম্মত হইয়া শান্তশীলের সঙ্গে চলিলেন। শাস্তশীল সিংহদ্বার দিয়া পশুপতির গৃহে হেমচন্দ্রকে লইয়। প্রবেশ করিলেন এবং এক কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিলেন, “এই গৃহমধ্যে আমার সুবর্ণরত্নাদি সকল আছে, আপনি ইহার প্রহরায় অবস্থিতি করুন। আমি ততক্ষণ সন্ধান করিয়া আসি, কোন স্থানে যৰন লুক্কায়িত আছে।” এই কথা বলিয়াই শান্তশীল সেই কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন এবং হেমচন্দ্র কোন উত্তর দিতে না দিতেই বাহিরদিকে কক্ষদ্বার রুদ্ধ করিলেন । হেমচন্দ্র ফঁাদে পড়িয়া বন্দী হইয়া রহিলেন । একাদশ পরিচ্ছেদ মুক্ত মনোরম পশুপতির নিকট বিদায় হইয়াই দ্রুতপদে চিত্ৰগৃহে আসিল । পশুপতির সহিত শান্তশীলের কথোপকথন সময়ে শুনিয়াছিল যে, ঐ ঘরে হেমচন্দ্র রুদ্ধ হইয়াছিলেন। আসিয়াই চিত্ৰগৃহের দ্বারোন্মোচন করিল। হেমচন্দ্রকে কহিল, “হেমচন্দ্র, গৃহের বারি হইয়। যাও ”