পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃণালিনী হইল, অপরের নিবারিত হইল না। শুল অশ্বের গ্ৰীবাভলে বিদ্ধ হইল। সেই আঘাতপ্রাপ্তিমাত্র সেই রমণীয় ঘোটক মুমু হইয়া ভূতলে পড়িল । সুশিক্ষিতের ন্যায় হেমচন্দ্র পতনশীল অশ্ব হইতে লম্ফ দিয়া ভূতলে দাড়াইলেন এবং পলকমধ্যে নিজ করস্থ করাল শূল উন্নত করিয়া কলিলেন, “আমার পিতৃদত্ত শূল শক্ররক্ত পান না করিয়া কখন ফেরে নাই ।” তাহার এই কথা সমাপ্ত হইতে না হইতে তদগ্রে বিদ্ধ হইয়া দ্বিতীয় অশ্বারোহী ভূভলে পতিত হইল । ইহা দেখিয়া তৃতীয় অশ্বারেই অশ্বের মুখ rিরাইয়া বেগে পলায়ন করিল । সেই শান্তশীল । হেমচন্দ্র তখন অবকাশ হইয়া নিজ স্কন্ধবিদ্ধ তীর মোচন করিলেন । তার কিছু অধিক মাংস ভেদ করিয়াছিল—মোচনমাত্র অতিশয় শোণিতশ্রুতি হইতে লাগিল । হেমচন্দ্র নিজ বস্ত্র দ্বারা তাহার নিবারণের চেষ্টা করিতে লাগিলেন । কিন্তু তাহ নিৰ্ম্মল হুইল । లి ক্রমে হুেমচন্দ্র রক্তক্ষতি হেতু দুৰ্ব্বল হইতে লাগিলেন । তখন বুঝিলেন যে, যবন-শিবিরে গমনের অদ্য অার কোন সম্ভাবনা নাই। অশ্ব হত হুইয়াছে—নিজবল হত হইতেছে । অতএব অপ্রসন্ন-মনে, ধীরে ধীরে নগরাভিমুখে প্রত্যাবর্তন করিতে লাগিলেন। হেমচন্দ্র প্রান্তর পার হইলেন । তখন শরীর নিতান্ত অবশ হইয়। আসিল –শোণিতস্রোতে সৰ্ব্বাঙ্গ আৰ্দ্ৰ হইল । গতিশক্তি রহিত হইয়া আসিতে লাগিল। কষ্টে নগরমধ্যে প্রবেশ করিলেন । আর যাইতে পারেন না । এক কুটীরের নিকট বটবৃক্ষতলে উপবেশন করিলেন। তখন রজনী প্রভাত হইয়াছে । রাত্ৰিজাগরণ—সমস্ত রাত্রির পরিশ্রম— রক্তস্রাবে বলহানি—এই সকল কারণে, হেমচন্দ্রের চক্ষুতে পৃথিবী ঘুরিতে লাগিল । তিনি বৃক্ষমূলে পৃষ্ঠ রক্ষা করিলেন । চক্ষু মুদ্রিত হইল। নিদ্র। প্রবল হইল-চেতনা অপহৃত হইল। নিদ্রাবেশে স্বপ্নে যেন শুনিলেন, কে গাহিতেছে— “কণ্টকে গঠিল বিধি মৃণাল অধমে ।”