পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃণালিনী আমার একটি কথা শুন । স্ত্রীলোকের সতীত্বের অধিক আর ধৰ্ম্ম নাই ; ষে স্ত্রীর সতীত্ব নাই, সে শূকরীর অপেক্ষাও অধম । সতীত্বের তানি কেবল কার্য্যেই ঘটে, এমন নহে ; স্বামী ভিন্ন অন্য পুরুষের চিন্তামাত্ৰও সতীত্বের বিঘ্ন । তুমি বিধবা, যদি স্বামী ভিন্ন অপরকে মনেও ভাব, তবে তুমি ইহলোকে পরলোকে স্ত্রীজাতির অধম হইয়া থাকিবে । অতএব সাবধান হও । যদি কাহারও প্রতি চিত্ত নিবিষ্ট । হইয়া থাকে, তবে তাহাকে বিস্তুত হও ” মনোরম উচ্চহাস্ত করিয়া উঠিল ; পরে মুখে অঞ্চল দিয়া হাসিতে লাগিল, হাসি বন্ধ হয় না । হেমচন্দ্র কিঞ্চিৎ অপ্রসন্ন হষ্টলেন ; কহিলেন, *ক্সাসিতেছ কেন ?” ᎓᎓ মনোরমা কহিলেন, “ভাই, এই গঙ্গাতীরে গিয়৷ দাড়াও ; গঙ্গাকে ডাকিম৷ কহ, গঙ্গে, তুমি পৰ্ব্বতে ফিরিয়া যাও ” হে । কেন ? ম। স্মৃতি কি আপন ইচ্ছাধীন ? রাজপুল, কালসৰ্পকে মনে করিয়া কি সুখ ? কি ; তথাপি তুমি তাহাকে ভুলিতেছ না কেন ? হে । তাহার দংশনের জালায় ৷ ম। তোমাকে সে যদি দংশন না করিত ? তবে কি তাহাকে ভুলিতে ? হেমচন্দ্র উত্তর করিলেন না। মনোরম বলিতে লাগিল, “তোমার ফুলের মালা কালসাপ হইয়াছে, তবু তুমি ভুলিতে পারিতেছ না ; আমি, আমি ত পাগল—আমি আমার পুষ্পহার কেন ছিড়িব ?” হেমচন্দ্ৰ কহিলেন, “তুমি এক প্রকার অন্যায় বুলিতেছ না। বিস্মৃতি স্বেচ্ছাধীন ক্রিয়া নহে ; লোক আত্মগরিমায় অন্ধ হইয়া পরের প্রতি যে সকল উপদেশ করে, তন্মধ্যে “বিস্মৃত হও' এই উপদেশের অপেক্ষ হাস্তাম্পদ আর কিছুই নাই। কেহ কাহকেও বলে না, অর্থচিন্তা ছাড় ; যশের ইচ্ছা ছাড় ; জ্ঞানচিস্তা ছাড় ; ক্ষুধানিবারণেচ্ছা ত্যাগ কর ; তৃষ্ণানিবারণেচ্ছ ত্যাগ কর ; নিদ্রা ছাড় ; তবে কেন বলিবে, ভালবাসা ছাড় ? ভালবাসা কি এ সকল অপেক্ষা ছোট ? এ সকল অপেক্ষ প্রণয় নুন নহে— কিন্তু ধৰ্ম্মের অপেক্ষা নুন বটে । ধৰ্ম্মের জন্য প্রেমকে ংহার করিবে । স্ত্রীর পরম ধৰ্ম্ম সতীত্ব । সেই জন্য বলিতেছি, যদি পার, প্রেম সংহার কর।” ম। আমি অবলা ; জ্ঞানহীন ; বিবশ ; আমি ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম কাহাকে বলে, তাছা জানি না । আমি এইমাত্র জানি, ধৰ্ম্ম ভিন্ন প্রেম জন্মে ন । SDR) ঙ্গে । সাবধান, মনোরম ৷ বাসনা হইতে ভ্রাপ্তি জন্মে ; ভ্রাস্তি হইতে অধৰ্ম্ম জন্মে । তোমার ভ্রাস্তি পৰ্য্যন্ত হইয়াছে । তুমি বিবেচনা করিয়া বল দেখি, তুমি যদি ধৰ্ম্মে একের পত্নী, মনে অন্যের পত্নী হইলে, তবে তুমি দ্বিচারিণী হইলে কি না ? গৃহমধ্যে হেমচন্দ্রের অসিচৰ্ম্ম বুলিতেছিল ; মনোরম চৰ্ম্ম হস্তে লইয়া কহিল, “ভাই হেমচন্দ্র, তোমার এ ঢাল কিসের চামড়া ?” হেমচন্দ্র হস্ত করিলেন । মনোরমার মুখের প্রতি চাহিয়া দেখিলেন, বালিকা । সপ্তম পরিচ্ছেদ গিরিজায়ার সংবাদ গিরিজায় যখন পাটনীর গৃহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করে, তখন প্রাণান্তে হেমচন্দ্রের নবানুরাগের কথা মৃণালিনীর সাক্ষাতে ব্যক্ত করিবে না স্থির করিয়াছিল । মৃণালিনী তাহার আগমন-প্রতীক্ষায় পিঞ্জরে বদ্ধ বিহঙ্গীর ন্যায় চঞ্চলা হইয়া রহিয়াছিলেন ; গিরিজায়াকে দেখিবামাত্র কহিলেন, “বল গিরিজায়া, কি দেখিলে ? হেমচন্দ্র কেমন আছেন ?” গিরিজায়া কহিল, “ভাল আছেন।” মু। কেল, আমন করিয়া বলিলে কেন ? তোমার কথায় উৎসাহ নাই কেন ? যেন দুঃখিত হইয়া বলিতেছ ; কেন ? গি । সে কি ? মৃ ৷ গিরিজায়া, আমাকে প্রতারণা করিও না ; হেমচন্দ্র কি ভাল হয়েন নাই, তাহা হইলে আমাকে স্পষ্ট করিয়া বল । সন্দেহের অপেক্ষা প্রতীতি ভাল । গিরিজার এবার সহাস্তে কহিল, “তুমি কেন অনর্থক ব্যস্ত হও? অামি নিশ্চিত বলিতেছি, তাহার শরীরে কিছুই ক্লেশ নাই। তিনি উঠিয়া বেড়াইতেছেন ।” মৃণালিনী ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “মনোরমার সহিত র্তাহার কোন কথাবার্তা শুনিলে ?” গি । শুনিলাম । মু। কি শুনিলে ? গিরিজায়া তখন হেমচন্দ্র যাহা বলিয়াছেন, তাহ কহিলেন । কেবল হেমচন্দ্রের সঙ্গে যে মনোরম নিশাপৰ্য্যটন করিয়াছিলেন ও কানে কানে কথk বলিয়াছিলেন, এই দুইটি বিষয় গোপন করিলেন।