পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃণালিনী চলিলাম-আমার এখানে আর প্রয়োজন * মৃ। গিরিজায়া—যদি হেমচন্দ্র তোমাকে পীড়ন করিয়া থাকেন, তুমি স্থানান্তরে তাহার নিন্দা করিও । হেমচন্দ্র আমার প্রতি কোন অত্যাচার করেন নাই —আমি কেন তাহার নিন্দা সহিব ? তিনি রাজপুত্র —আমার স্বামী ; তাহাকে পাষণ্ড বলিও না । গিরিজায়া আরও রাগ করিল । বহুষত্বরচিত পর্ণশষ্যা ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া ফেলিয়া দিতে লাগিল । কছিল, “পাষণ্ড বলিব না ? —একবার বলিব ?” ( বলিয়াই কতকগুলি শয্যাবিষ্ঠাসের পল্লব সদৰ্পে জলে ফেলিয়া দিল ) “একবার বলিব ?—দশবার বলিব” ( আবার পল্লব নিক্ষেপ )—“শতবার বলিব* ( পল্লব নিক্ষেপ )–“হাজারবার বলিব ।” এইরূপে সকল পল্লব জলে গেল। গিরিজায়া বলিতে লাগিল, *পাষণ্ড বলিব না ? কি দোষে তোমাকে তিনি এত্ত তিরস্কার করিলেন ?” মৃ । সে অামারই দোষ--অামি গুছাইয়া সকল কথা তাহাকে বলিতে পারি নাই—কি বলিতে কি বলিলাম । গি । ঠাকুরাণি ! দেখ } যুণালিনী ললাট স্পর্শ করিলেন । গি। কি দেখিলে ? মৃ ৷ বেদন । গি । কেন হইল ? মু । মনে নাই । গি । তুমি হেমচন্দ্রের অঙ্গে মাথা রাগিয়াছিলে— তিনি ফেলিয়া দিয়া গিয়াছেন । পাতরে পড়িয় তোমার মাথায় লাগিয়াছে । মৃণালিনী ক্ষণেক চিন্তা করিয়া দেখিলেন–কিছু মনে পড়িল না। বলিলেন, “মনে হয় না ; বোধ হয়, আমি আপনি পড়িয়া গিয়া থাকিব ।” গিরিজায় বিস্মিত হইল । বলিল, “ঠাকুরাণি ! এ সংসারে আপনি সুখী |" মু । কেন ? গি। আপনি রাগ করেন না । মৃ । আমিই মুখী—কিন্তু তাহার জন্য নহে । গি । তবে কি সে ? মৃ । হেমচন্দ্রের সাক্ষাৎ পাইয়াছি । আপনার কপাল টিপিয়া 〈む নবম পরিচ্ছেদ স্বপ্ন গিরিজায়া কহিল, “গৃহে চল ।” মৃণালিনী কছিলেন, “নগরে এ কিসের গোলযোগ ?” তখন যবমসেনা নগর মন্থন করিতেছিল । - তুমুল কোলাহল শুনিয়া উভয়ের শঙ্কা হইল । গিরিজায় বলিল, “চল, এই বেলা সতর্ক হইয়া যাই ।” কিন্তু দুই জন রাজপথের নিকট পর্য্যস্ত গিয়া দেখিলেন, গমনের কোন উপায়ই নাই । অগত্যা প্রত্যাগমন করিয়া সরোবর-সোপানে বসিলেন । গিরিজায়া বলিল, “যদি এখানে উহার আইসে ?” মৃণালিনী নীরবে রছিলেন । গিরিজায়! আপনিই বলিল, “বনের ছায়ামধ্যে এমন লুকাইব,—কেহ দেখিতে পাইবে না ।” উভয়ে আসিয়া সোপানোপরি উপবেশন করিয়া রছিলেন । মৃণালিনী মানবদনে গিরিজায়াকে কছিলেন, “গিরিজায়া, বুঝি আমার যথার্থই সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত !" গি । সে কি ? মৃ । এই এক অশ্বারোহী গমন করিল ; ইনি হেমচন্দ্র । সখি—নগরে ঘোর যুদ্ধ হইতেছে ; যদি নিঃসহায়ে প্রভু সে যুদ্ধে গিয়া থাকেন—ন জানি, কি বিপদে পড়িবেন । গিরিজায়া কোন উত্তর করিতে পারিল দা । তাহার নিদ্রা আসিতেছিল । কিয়ৎক্ষণ পরে মৃণালিনীও দেখিলেন যে, গিরিজায়া ঘুমাইতেছে । মৃণালিনীও একে আহারনিদ্রাভাবে দুৰ্ব্বলা— তাহাতে সমস্ত রাত্রিদিন মানসিক ষন্ত্রণা ভোগ করিতেছিলেন, সুতরাং নিদ্র ব্যতীত আর শরীর বহে না—তাহারও তন্দ্রা আসিল । নিদ্রায় তিনি স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন । দেখিলেন যে, হেমচন্দ্র একাকী সৰ্ব্বসমরে বিজয়ী হইয়াছেন । মৃণালিনী যেন বিজয়ী বীরকে দেখিতে রাজপথে দাড়াইয়াছিলেন । রাজপথে হেমচন্দ্রের অগ্রে, পশ্চাতে কত হস্তী, অশ্ব, পদাতি ষাইতেছে । মৃণালিনীকে যেন সেই সেনাতরঙ্গ ফেলিয়া দিয়া চরণদলিত করিয়া চলিয়া গেল—তখন হেমচন্দ্র নিজ সৈন্ধবী তুরঙ্গী হইতে অবতরণ করিয়া তাহাকে হুস্ত ধরিয়া উঠাইলেন । তিনি যেন হেমচন্দ্রকে বলিলেন, “প্ৰভু ! অনেক যন্ত্রণ পাইয়াছি ঃ দাসীকে আর ত্যাগ করিও না ।” হেমচজ যেন ।