মৃণালিনী ভাবিয়া দিগ্বিজয় চক্ষু বুজিয়া রহিল। অকস্মাৎ তাহার পৃষ্ঠে দুম দাম্ করিয়া ঝর্ণটার ঘা পড়িতে লাগিল । গিরিজায় গলা ছাড়িয়া বলিতে লাগিল, “অtঃ মলে, ঘরগুলয় ময়লা জমিয়া রহিয়াছে দেখ— এ কি ? এক মিন্ষে ! চোর না কি ? মলো মিন্ষে, রাজার ঘরে চুরি ” এই বলিয়। আবার সম্মার্জনীর আঘাত । দিগ্বিজয়ের পিঠ ফাটিয়া গেল ।
- ও গিরিজায়, আমি ! আমি !" “আমি ! আরে তুই বলিয়াই ত খ্যাঙ্গরা দিয়া
বিছাইয়া দিতেছি।” এই বলিবার পর আবার বিরাশী সিক্কা ওজনে বftট পড়িতে লাগিল । “দোহাই ! দোহাই ! গিরিজায় ! আমি দিগ্বিজয় ।” “আবার চুরি করিতে এসে—আমি দিগ্বিজয় ! দিগ্বিজয় কে রে মিনৃযে ” কাটার বেগ আর থামে না । দিগ্বিজর এবার সকাতরে কহিল, “গিরিজায়া, আমাকে ভুলিয়া গেলে ?” গিরিজায়া বলিল, “তোর অামার সঙ্গে কোন পুরুষে আলাপ রে মিন্ষে ।” দিগ্বিজয় দেখিল, নিস্তার নাই—রণে ভঙ্গ দেওয়াই পরামর্শ। দিগ্বিজয় তখন অনুপায় দেখিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে গৃহ হইতে পলায়ন করিল। গিরিজায় সম্মার্জনীহস্তে তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইল । একাদশ পরিচ্ছেদ পুৰ্ব্বপরিচয় প্রভাতে হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যের অনুসন্ধানে যাত্রা করিলেন । গিরিজায় আসিয়া মৃণালিনীর নিকট বসিল । গিরিজায়া মৃণালিনীর দুঃখের ভাগিনী হইয়াছিল, সহৃদয় হইয়। দুঃখের সময় দুঃখের কাহিনী সকল শুনিয়াছিল। আজি সুখের দিনে সে কেন মুখের ভাগিনী না হইবে ? আজি সেইরূপ সহৃদয়তার সহিত মুখের কথা কেন না শুনিবে ? গিরিজায়া ভিখারিণী, মৃণালিনী মহাধনীর কন্যা—উভয়ে এত দূর সামাজিক প্রভেদ । কিন্তু দুঃখের দিনে গিরিজার মৃণালিনীর একমাত্র স্বহৃৎ, সে সময়ে ভিখারিণী আর রাজপুরবধুতে প্রভেদ থাকে না, আজি সেই বলে গিরিজায়৷ মৃণালিনীর হৃদয়ের মুখের অংশাধিকারিণী হইল ।
যে আলাপ হুইতেছিল, তাহাতে গিরিজায়া বিস্মিত ও প্রীত হইতেছিল । সে মৃণালিনীকে জিজ্ঞাসা করিল, “ত এত দিন এমন কথা প্রকাশ কর নাই কি জন্য ?” মৃ। এত দিন রাজপুত্রের নিষেধ ছিল, এ জন্ত প্রকাশ করি নাই। এক্ষণে তিনি প্রকাশের অনুমতি । করিয়াছেন, এ জন্য প্রকাশ করিতেছি । গি । ঠাকুরাণি ! সকল কথা বল না ? আমার শুনিয়া বড় তৃপ্তি হবে । তখন মৃণালিনী বলিতে আরম্ভ করিলেন,— “আমার পিতা এক জন বৌদ্ধমতাবলম্বী শ্রেষ্ঠ । তিনি অত্যন্ত ধনী ও মথুরারাজের প্রিয়পাত্র ছিলেন—মথুরার রাজকন্তীর সহিত আমার সর্থীত্ব ছিল । “আমি এক দিন মথুরার রাজকন্যার সঙ্গে নৌকায় যমুনায় জলবিহারে গিয়াছিলাম । তথায় অকস্মাৎ প্রবল ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ায় নৌকা জলমধ্যে ডুবিল । রাজকন্যা প্রভৃতি অনেকেই রক্ষক ও নাবিকদের হাতে রক্ষা পাইলেন । অামি ভাসিয়া গেলাম। দৈবযোগে এক রাজপুত্র সেই সময়ে নৌকায় বেড়াইতেছিলেন। র্তাহাকে তখন চিনিতাম না—তিনিই হেমচন্দ্র । তিনিও বাতাসের ভয়ে নৌকা তীরে লইতেছিলেন । জলমধ্যে আমার চুল দেখিতে পাইয়া স্বয়ং জলে পড়িয়া আমাকে উঠাইলেন, আমি তখন অজ্ঞান । হেমচন্দ্র আমার পরিচয় জানিতেন না। তিনি তখন তীর্থদর্শনে মথুরায় আসিয়াছিলেন । র্তাহার বাসায় আমায়ু লইয়া গিয়া শুশ্ৰষা করিলেন । আমি জ্ঞান পাইলে, তিনি আমার পরিচয় লইয়া আমাকে আমার বাপের বাড়ী পাঠাইবার উদ্যোগ করিলেন । কিন্তু তিন দিবস পৰ্য্যন্ত ঝড়বৃষ্টি থামিল না । এরূপ দুর্দিন হুইল যে, কেহ বাড়ীর বাহির হইতে পারে না । সুতরাং তিন দিন আমাদিগের উভয়কে এক বাড়ীতে থাকিতে হইল। উভয়ে উভয়ের পরিচয় পাইলাম । কেবল কুল-পরিচয় নহে—উভয়ের অন্তঃকরণের পরিচয় পাইলাম। তখন আমার বয়স পনের বৎসর মাত্র। কিন্তু সেই বয়সেই আমি তাছার দাসী হইলাম। সে কোমল বয়সে সকল বুঝিতাম না । হেমচন্দ্রকে দেবতার দ্যায় দেখিতে লাগিলাম। তিনি ষাহী বলিলেন, তাহ পুরাণ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল । তিনি বলিলেন, "বিবাহ কর । সুতরাং আমারও বোধ হইল, ইহা অবশ্বকৰ্ত্তব্য । চতুর্থ দিবসে, দুৰ্য্যোগের উপশম দেখিয়া উপৰাস করিলাম, দিগ্বিজয় উদ্যোগ \