পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ول কর্ণেগুনিতাম, তাহা তুমি বিলোলকটাক্ষকুশলিনি ! কি বুঝিৰে ? ছোট বাবু বলিলেন, “না, এ কাণ সারিবার नग्न * আমার ত সেই জন্য ঘুম হইতেছিল না। লবঙ্গ বলিল, “তা না সারুক, টাকা খরচ করিলে কাণার কি বিয়ে হয় না ?” ছোট বাবু। কেন, এর কি বিবাহ হয় নাই ? লবঙ্গ । না । টাকা খরচ করিলে হয় ? ছোট বাবু। আপনি কি উহার বিবাহের জন্য টাকা দিবেন ? লবঙ্গ রাগিল । বলিল, “এমন ছেলেও দেখি মাই। আমার কি টাকা রাখিবার জায়গা নাই ? ৰিয়ে কি হয়, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছি । মেয়েমানুষ, সকল কথা ত জানে না । বিবাহ কি হয় ?” ছোট বাবু ছোট মাকে চিনিতেন । হাসিয়া খলিলেন, “ত মা, তুমি টাকা রেখো, আমি সম্বন্ধ করিব ।” মনে মনে ললিতলবঙ্গলতার মুগুপাত করিতে ফরিতে আমি সে স্থান হইতে পলাইলাম । তাই বলিতেছিলাম, বড়মানুষের বাড়ী ফুল 6शंां★ांम दख् शांझ ॥ বহুমুৰ্ত্তিময়ি বস্কন্ধরে ! তুমি দেখিতে কেমন ? তুমি যে অসংখ্য, অচিস্তনীয় শক্তি ধর, অনন্ত বৈচিত্র্যবিশিষ্ট জড়পদার্থসকল হৃদয়ে ধারণ কর, সে সব দেখিতে কেমন ? যাকে বাকে লোকে সুন্দর বলে, সে সব দেখিতে কেমন ? তোমার হৃদয়ে যে অসংখ্য বহু-প্রকৃতিবিশিষ্ট জন্তুগণ বিচরণ করে, তারা সব দেখিতে কেমন ? বল মা, তোমার হৃদয়ের সারভূত পুরুষজাতি দেখিতে কেমন ? দেখাও মা, তাহার মধ্যে যাহার করম্পর্শে এত সুখ, সে দেখিতে কেমন ? দেখা মা, দেখিতে কেমন দেখায় ? দেখা কি ? দেখা কেমন ? দেখিলে কিরূপ মুখ হয় ? এক মুহূর্তের জন্য এই মুখময় স্পর্শ দেখিতে পাই না ? দেখা মা ! বাহিরের চক্ষু নিমীলিত থাকে—থাকুক মা ! আমার হৃদয়ের মধ্যে চক্ষু ফুটাইয়া দে, আমি একবার অস্তরের ভিতর অস্তর লুকাইয়! মনের সাধে রূপ দেখে নারীজন্ম সার্থক করি । সবাই দেখে—আমি দেখিব না কেন ? বুঝি কীট-পতঙ্গ অবধি দেখে, আমি কি অপরাধে দেখিতে পাই না? শুধু দেখা-কারও ক্ষতি নাই, কারও কণ্ঠ নাই, কারও পাপ নাই, সবাই অবহেলে দেখে—কি দোষে আমি কখন দেখিব না ? না, না । অদৃষ্টে নাই ৷ হৃদয়মূধ্যে খুজিলাম, শুধু শব্দ, স্পর্শ, গন্ধ । আর কিছু পাইলাম না । আমার অন্তর বিদীর্ণ করিয়া ধ্বনি উঠিতে লাগিল, কে দেখাবি দেখা গো—আমায় রূপ দেখা ! বুঝিল না ! কেহই অন্ধের দুঃখ বুঝিল না ।

  • so

তৃতীয় পরিচ্ছেদ সেই অবধি আমি প্রায় প্রত্যহ রামসদয় মিত্রের বাড়ী ফুল বেচিতে যাইতাম । কিন্তু কেন, তাহ। জানি না । যাহার নয়ন নাই, তাহার এ যত্ন কেন ? সে দেখিতে পাইবে না, কেবল কথার শব্দ শুনিবার ভরসা মাত্র । কেন শচীন্দ্র বাবু আমার কাছে আসিয়া কথা কহিবেন ? তিনি থাকেন সদরে-- আমি যাই অন্তঃপুরে । যদি তাহার স্ত্রী থাকিত, তবেও বা কখন আসিতেন। কিন্তু বৎসরেক পূৰ্ব্বে তাহার স্ত্রীর মৃত্যু হইয়াছিল—আর বিবাহ করেন নাই, অতএব সে ভরসাও নাই । কদাচিৎ কোন প্রয়োজনে মাতাদিগের নিকট আদিতেন । আমি যে সময়ে ফুল লইয়। যাইব, তিনিও ঠিক সেই সময়ে আসিবেন, তাহারই বা সম্ভাবনা কি ? অতএব যে এক শব্দ শুনিবার মাত্র আশা, তাহাও যদি সফল হইত না ; তথাপি অন্ধ প্রত্যহ ফুল লইয়! যাইত । কোন ফুরাশায়, তাহা জানি না । নিরাশ হইয়। ফিরিয়া আসিবার সময় প্রত্যহ ভাবিতাম, আমি কেন আসি ? প্রত্যহ মনে করিতাম, আর আসিব না। প্রত্যহই সে কল্পনা বৃথা হইত। প্রত্যহই আবার যাইতাম, যেন কে চুল ধরিয়া লইয়া যাইত । আবার নিরাশ হইয়। ফিরিয়া আসিতাম, আবার প্রতিজ্ঞা করিতাম, যাইব না—আবার যাইতাম, এইরূপে দিন কাটিতে লাগিল । মনে মনে আলোচনা করিতাম, কেন যাই ? শুনিয়াছি, স্ত্রীজাতি পুরুষের রূপে মুগ্ধ হইয়৷ ভালবাসে । আমি কাণ, কাহার রূপ দেখিয়াছি ? তবে কেন বাই ? কথা শুনিব বলিয়া ? কখন কেহ শুনিয়াছে যে, কোন রমণী শুধু কথা শুনিয়াই উন্মাদিনী হইয়াছে ? আমি কি তাই হইয়াছি ? তাও কি সম্ভব ? যদি তাই হয়, তবে বাদ্য শুনিবার জন্য বাদকের বাড়ী যাই না কেন ? সেতার, সারেঙ্গ, এসরাজ, বেহালার অপেক্ষ কি শচীন্দ্র সুকণ্ঠ ? সে কথা মিখ্যা । -