পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

š. পঞ্চম পরিচ্ছেদ আমার এইরূপ মনের অবস্থা, আমি এমত সময়ে —কাশীধামে গোবিন্দ দত্তের কাছে রজনীর নাম শুনিলাম। মনে হইল, ঈশ্বর আমাকে বুঝি একটি গুরুতর কাৰ্য্যের ভার দিলেন । এ সংসারে আমি একটি কার্য পাইলাম। রজনীর যথার্থ উপকার চেষ্টা করিলে করা যায়। আমার ত কোন কাজ নাই—এই কাজ কেন করি না ! ইহা কি আমার যোগ্য কাজ নহে ? এখানে শচীন্দ্রের বংশাবলীর পরিচয় কিছু দিতে হইল। শচীন্দ্রনাথের পিতার নাম রামসদয় মিত্র, পিতামহের নাম বাঞ্ছারাম মিত্র ; প্রপিতামহের নাম কেবলরাম মিত্র। তাহাদিগের পূর্বপুরুষের বাস কলিকাতায় নহে।—তাহার পিতা প্রথমে কলিকাতায় বাস করেন। তাহাদিগের পূর্বপুরুষের বাস ভবানীনগর গ্রামে । তাহার প্রপিতামহু দরিদ্র নিঃস্ব ব্যক্তি ছিলেন । পিতামহ বুদ্ধিবলে ধনসঞ্চয় করিয়া তাহাদিগের ভোগ্য ভূসম্পত্তি সকল ক্রয় করিয়াছিলেন । বাঞ্ছারামের এক পরম বন্ধু ছিলেন, নাম মনোহর দাস। বাঞ্ছারাম মনোহর দাসের সাহায্যেই এই বিভবের অধিপতি হইয়াছিলেন । মনোহর প্রাণপাত করিয়া তাহার কার্য্য করিতেন, নিজে কখনও ধনসঞ্চয় করিতেন না ; বাঞ্ছারাম তাহার এই সকল গুণে অত্যন্ত বাধ্য ছিলেন । মনোহরকে সহোদরের দ্যায় ভালবাসিভেন এবং মনোহর বয়োজ্যেষ্ঠ বলিয়া জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্তায় তাহাকে মান্ত করিতেন । র্তাহার পিতার সঙ্গে পিতামহের তাদৃশ সম্প্রীতি ছিল না । বোধ হয়, উভয় পক্ষেরই কিছু কিছু দোষ ছিল । একদা রামসদয়ের সঙ্গে মনোহর দাসের ঘোরতর বিবাদ উপস্থিত হইল। মনোহর দাস বাঞ্ছারামকে বলিলেন যে, রামসদয় তাহাকে কোন বিষয়ে সহনতীত অপমান করিমাছেন । অপমানের কথা বাঞ্ছরামকে বলিয়া, মনোহর র্তাহার কার্য্য পরিত্যাগ করিয়া সপরিবারে ভবানীনগর হইতে উঠিয়া গেলেন। বাঞ্ছারাম মনোহরকে অনেক অমুনয়-বিনয় করিলেন ; মনোহর কিছুই শুনিলেন না। উঠিয়া কোন দেশে গিয়া বাস করিলেন, তাহাও কাহাকে জানাইলেন না । বাঞ্ছারাম রামসদয়ের প্রতি যত স্নেহ করুন বা না করুন, মনোহরকে ততোধিক স্নেহ করিতেন। সুতরাং রামসদরের উপর তাহার ক্রোধ অপরিসীম হইল। বাঞ্ছারাম অত্যন্ত কটুক্তি করিয়া গালি দিলেন, রামসদয়ও সকল কথা নিঃশবো সহ করিলেন না । Woot রজনী SS পিতা-পুত্রের বিবাদের ফল এই দাড়াইল যে, বাঞ্ছারাম পুত্রকে গৃহবহিষ্কৃত করিয়া দিলেন । পুত্রও গৃহত্যাগ করিয়া শপথ করিলেন, আর কখনও পিতৃভবনে মুখ দেখাইবেন না। বাঞ্ছারাম রাগ করিয়া এক উইল করিলেন । উইলে লিখিত হইল যে, বাঞ্ছারাম মিত্রের সম্পত্তিতে তস্ত পুত্র রামসদয় মিত্র কখন অধিকারী হুইবেন না। ’ বাঞ্ছারাম মিত্রের অবর্তমানে মনোহর দাস, মনোহর দাসের অভাবে মনোহরের উত্তরাধিকারিগণ অধিকারী: হইবেন ; তদভাবে রামসদয়ের পুত্রপৌত্ৰাদি যথাক্রমে, কিন্তু রামসদয় নহে । রামসদয় গৃহত্যাগ করিয়া প্রথম স্ত্রীকে লইয়া কলিকাতায় আসিলেন । ঐ স্ত্রীর কিছু পিতৃদত্ত অর্থ ছিল। তদবলম্বনে এবং এক জন সজ্জন বণিক সাহেবের আমুকুল্যে তিনি বাণিজ্যে প্রবৃত্ত হইলেন। লক্ষ্মী স্বপ্রসন্না হইলেন ; সংসার-প্রতিপালনের জন্য তাহাকে কোন কষ্ট পাইতে হইল না । যদি কষ্ট পাইতে হুইত, তাহা হইলে বোধ হয়, বাঞ্ছারাম সদয় হইতেন । পুত্রের সুখের অবস্থা শুনিয়া বৃদ্ধের যে স্নেহাবশেষ ছিল, তাহাও নিবিয়া গেল । পুত্র অভিমানপ্রযুক্ত, পিতা না ডাকিলে আর যাইব না, ইহা স্থির করিয়৷ আর পিতার কোন সংবাদ লইলেন না । অভক্তি এবং তাচ্ছল্যবশতঃ পুত্র এরূপ করিতেছে বিবেচনা করিয়া বাঞ্ছারাম তাহাকেও আর ডাকিলেন না । স্বতরাং কাহারও রাগ পড়িল না। উইলও অপরিবৰ্ত্তিত রহিল । এমতকালে হঠাৎ বাঞ্ছারামের স্বর্গপ্রাপ্তি হুইল । রামসদয় শোকাকুল হইলেন ; তাহার পিতার মৃত্যুর পূৰ্ব্বে র্তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ করিয়া যথাকর্তব্য করেন নাই,-এই দুঃখে অনেক দিন ধরিয়া রোদন করিলেন । তিনি আর ভবানীনগরে গেলেন না, কলিকাতাতেই পিতৃকৃত্য সম্পন্ন করিলেন । কেন না, এক্ষণে ঐ বাটী মনোহর দাসের হইল । এ দিকে মনোহর দাসের কোন সংবাদ নাই । পশ্চাৎ জানিতে পারা গেল যে, বাঞ্ছারামের জীবিত অবস্থাতেও মনোহরের কেহ কোন সংবাদ পায়ু মাই। মনোহর দাস ভবানীনগর হইতে যে গিয়াছিল, সেই গিয়াছিল ; কোথায় গেল, বাঞ্ছারাম তাহার অনেক ' ' সন্ধান করিলেন ; কিছুতেই কোন সংবাদ পাইলেন না । তখন তিনি উইলের এক ক্রোড়পত্র স্বজন করিলেন। তাহাতে বিষ্ণুরাম সরকার নামক এক জন কলিকাতানিবাসী আত্মীয় কুটুম্বকে উইলের