পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rb একজিকিউটর নিযুক্ত করিলেন । তাঁহাতে কথা রছিল যে, তিনি সযত্নে মনোহর দাসের অনুসন্ধান করিবেন। পশ্চাৎ ফলানুসারে সম্পত্তি যাহার প্রাপ্য, ; তাছাকে দিবেন । বিষ্ণুরাম বাৰু অতি বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ এবং কৰ্ম্মঠ ব্যক্তি। তিনি বাঞ্ছারামের মৃত্যুর পরেই মনোহর দাসের অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন ; অনেক পরিশ্রম ও অর্থব্যয় করিয়া, যাহা বাঞ্ছারাম কর্তৃক অনুসন্ধান হয় নাই, তাহার নিগৃঢ় কথা পরিজ্ঞাত হইলেন। স্থল বৃত্তান্ত অনুসন্ধানে এই জানা গেল ষে, মনোহর ভবানীনগর হইতে পলাইয়া কিছু কাল সপরিবারে ঢাকা অঞ্চলে গিয়া বাস করেন। পরে সেখানে জীবিকানিৰ্ব্বাহের জন্য কষ্ট হওয়াতে কলিকাতায় নৌকাযোগে আসিতেছিলেন । পথিমধ্যে বাত্যায় পতিত হইয়া সপরিবারে জলমগ্ন হইয়াছিলেন। তাহার আর উত্তরাধিকারী ছিল, এমন সন্ধান পাইলেন না । বিষ্ণুরাম বাৰু এ সকল কথার অকাট্য প্রমাণ সংগ্ৰহ করিয়া রামসদয়কে দেখাইলেন। তখন ৰাঞ্ছারামের ভূসম্পত্তি শচীন্দ্রদিগের দুই ভ্রাতার হুইল এবং বিষ্ণুরাম বাবুও তাহা তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন । এক্ষণে এই রজনী যদি জীবিত থাকে, তবে যে সম্পত্তি রামসদয় মিত্র ভোগ করিতেছে, তাহ রজনীর । রজনী হয় ত নিতান্ত দরিদ্রাবস্থাপন্ন। সন্ধান করিয়া দেখা যাউক । আমার আর কোন কাজ নাই । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ বাঙ্গালায় আসার পর একদা কোন গ্ৰাম্য কুটুম্বের বাড়ী নিমন্ত্রণে গিয়াছিলাম। প্রাতঃকালে গ্রামপৰ্য্যটনে গিয়াছিলাম। এক স্থানে অতি মনোহর নিস্তৃত জঙ্গল ; দুয়েল সপ্তস্বর মিলাইয়ু আশ্চৰ্য্য ঐক্যতানবাদ্য বাজাইতেছে ; চারিদিকে বৃক্ষরাজি ; ঘনবিন্যস্ত, কোমলতামপল্লবদলে আচ্ছন্ন ; পাতায় পাতায় ঠোঠেসি, মিশামিশি, শুামরূপের রাশি রাশি ; কোথাও কলিকা, কোথাও ফুটিত পুপ, কোথাও অপক, কোথাও স্বপক্ষ ফল । সেই বনমধ্যে জাপ্তনাদ শুনিতে পাইলাম ; বনাভ্যস্তরে প্রবেশ করি। দেখিলাম, এক জন বিকটমূৰ্ত্তি পুরুষ এক যুবতীকে বলপূর্বক আক্রমণ করিতেছে । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দেখিবামাত্র বুঝিলাম, পুরুষ অতি নীচজাতীয় পাষণ্ড–বোধ হয়, ডোম কি সিউলি—কোমরে দা । গঠন আভ্যন্ত বলবানের মত ; ধীরে ধীরে তাহার পশ্চাদ্ভাগে গেলাম। গিয়া তাহার কঙ্কাল হইতে দাখানি টানিয়া দুরে নিক্ষেপ করিলাম। দুষ্ট তখন যুবতীকে ছাড়িয়া দিল— আমার সম্মুখীন হইয়া দাড়াইল । আমাকে গালি দিল । তাহার দৃষ্টি দেখিয়া আমার শঙ্কা হইল। বুঝিলাম, এ স্থলে বিলম্ব অকৰ্ত্তব্য। একেবারে তাহার গলদেশে হস্তার্পণ করিলাম । ছাড়াইয়া সেও আমাকে ধরিল । আমিও তাঁহাকে পুনৰ্ব্বার ধরিলাম। তাহার বল অধিক ; কিন্তু আমি ভীত হই নাই বা অস্থির হই নাই । অবকাশ পাইয়া অামি যুবতীকে বলিলাম যে, তুমি এই সময় পলাও—আমি ইহার উপযুক্ত দণ্ড দিতেছি। যুবতী বলিল, “কোথায় পলাইব ? আমি ষে অন্ধ ! এখানকার পথ চিনি না ।” অন্ধ! আমার বল বাড়িল । আমি রজনী নামে একটি অন্ধকন্যাকে খুজিতেছিলাম । দেখিলাম, সেই বলবান পুরুষ আমাকে প্রহার করিতে পারিতেছে না বটে, কিন্তু আমাকে বলপূৰ্ব্বক টানিয়া লইয়া যাইতেছে । তাহার অভিপ্রায় বুঝিলাম, যে দিকে আমি দা ফেলিয়া দিয়াছিলাম, সেই দিকে সে আমাকে টানিয়া লইয়া যাইতেছে । আমি তখন দুষ্টকে ছাড়িয়া দিয়া আগে গিয়া দা কুড়াইয়া লইলাম । সে এক বৃক্ষের ডাল ভাঙ্গিয়া লইয়া তাহা ফিরাইয়া আমার হস্তে প্রহার করিল, আমার হস্ত হইতে দা পড়িয়া গেল । সে দা তুলিয়া লইয়া আমাকে তিন চারি স্থানে আঘাত করিয়া পলাইয়া গেল । আমি গুরুতর পীড়া প্রাপ্ত হইয়াছিলাম । ৰন্থ কষ্টে আমি কুটুম্বের গৃহাভিমুখে চলিলাম। অন্ধযুবতী আমার পদশাদামুসরণ করিয়া আমার সঙ্গে সঙ্গে আসিতে লাগিল । কিছু দূর গিয়া আর আমি চলিতে পারিলাম না । পথিকলোকে আমাকে ধরিয়ু আমার কুটুম্বের বাড়ীতে রাখিয়া আসিল। সেই স্থানে আমি কিছুকাল শয্যাগত রহিলাম— অন্ত আশ্রয়াভাবেও বটে, এবং আমার দশা কি হয়, তাহা না জানিয়া কোথাও যাইতে পারে না, সে জন্যও বটে, অন্ধযুবতীও সেইখানে রহিল। বহুদিনে বহুকষ্টে আমি আরোগ্যলাভ করিলাম । মেয়েটি অন্ধ দেখিয়া অবধিই আজার সন্দেহ হইয়াছিল। ষে দিন প্রথম সে আমার রুগ্নশয্যাপার্ষে