পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:RSు চতুর্থ পরিচ্ছেদ এ দিকে বিষ্ণুরাম বাবু সংবাদ পঠাইয়া দিলেন যে, মনোহর দাসের উত্তরাধিকারী উপস্থিত হইয়াছে, —বিষয় ছাড়িয়া দিতে হইবে । অমরনাথ তবে র জালসাজ নহে ? কে উত্তরাধিকারী, তাহ বিষ্ণুরাম বাবু প্রথমে কিছু বলেন নাই। কিন্তু অমরনাথের কথা স্মরণ হইল। বুঝি রজনীই উত্তরাধিকারিণী । ষে ব্যক্তি দাবিদার, সে যে মনোহর দাসের যথার্থ উত্তরাধিকারী, তষিয়ে নিশ্চয়তা আছে কি না, ইহা জানিবার জন্য বিষ্ণুরাম বাবুর কাছে গেলাম। আমি বলিলাম, “মহাশয় পূৰ্ব্বে বলিয়াছিলেন যে, মনোহর দাস সপরিবারে জলে ডুবিয়া মরিয়াছে। তাহার প্রমাণও আছে, তবে তাহার আবার ওয়ারিস আসিল কোথা হুইতে ?” বিষ্ণুরাম বাবু বলিলেন, “হরেকৃষ্ণ দাস নামে তাহার এক ভাই ছিল, জানেন বোধ হয় ?” আমি । তাত জানি–কিন্তু সেও ত মরিয়াছে । বিষ্ণু। বটে, কিন্তু মনোহরের পরে মরিয়াছে ; সুতরাং সে বিষয়ের অধিকারী হইয়া মরিয়াছে । আমি । তা হৌক, কিন্তু হরেকৃষ্ণেরও ত এক্ষণে কেহ নাই । বিষ্ণু। পূৰ্ব্বে তাহাই মনে করিয়া আপনাদিগকে বিষয় ছাড়িয়া দিয়াছিলাম । কিন্তু এক্ষণে জানিতেছি যে, তাহার এক কন্যা আছে । আমি । তবে এত দিন সে কন্যার কোন প্রসঙ্গ উখাপিত হয় নাই কেন ? বিষ্ণু হরেকৃষ্ণের স্ত্রী তাহার পূৰ্ব্বে মরে । স্ত্রীর মৃত্যুর পরে শিশুকন্যাকে পালন করিতে অক্ষম ইয়া হরেকৃষ্ণ কন্যাটিকে তাহার শুলীকে দান ঠু করে । তাহার শু্যালী ঐ কন্যাটিকে আত্মকন্যাবৎ প্রতিপালন করে এবং আপনার বলিয়া পরিচয় দেয় । হরেকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি লাওয়ারেশ বলিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব কর্তৃক গৃহীত হওয়ার প্রমাণ পাইয়া আমি হরেকৃষ্ণকে লাওয়ারেশ মনে করিয়াছিলাম । কিন্তু এক্ষণে হরেকৃষ্ণের এক জন প্রভিবাসী আমার নিকট উপস্থিত হইয়া তাহার কক্কার কথা প্রকাশ করিয়াছে । আমি তাহার প্রদত্ত সদ্ধানের অনুসরণ করিয়া জানিয়াছি ষে, তাহার কল্প আছে বটে । আমি বলিলাম, "যে হয় একটা মেয়ে ধরিয়া হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা বলিয়া ধূর্ত লোকে উপস্থিত বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী করিতে পারে । কিন্তু সে যে যথার্থ হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা, তাহার কিছু প্রমাণ আছে কি ?” “আছে” বলিয়া বিষ্ণুরাম বাৰু আমাকে একটা কাগজ দেখিতে দিলেন ; বলিলেন, “এ বিষয়ে যে যে প্রমাণ সংগৃহীত হইয়াছে, তাছা উহাতে ইয়াদদাস্ত করিয়া রাখিয়াছি।” আমি ঐ কাগজ লইয়া পড়িতে লাগিলাম । তাহাতে পাইলাম যে, হরেকৃষ্ণ দাসের শুালীপতি রাজচন্দ্র দাস এবং হরেকৃষ্ণের কন্যার নাম রজনী । প্রমাণ যাহা দেখিলাম, তাহা ভয়ানক বটে। আমরা এতদিন অন্ধ রজনীর ধনে ধনী হইয় তাহাকে দরিদ্র বলিয়া ঘৃণা করিতেছিলাম । বিষ্ণুরাম এক জবানবন্দীর জাবেদা নকল আমার হাতে দিয়া বলিলেন, “এক্ষণে দেখুন, এই জোবানবন্দী কাহার ?” আমি পড়িয়া দেখিলাম যে, জোবানবন্দীর বক্তা হরেকৃষ্ণ দাস ; ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে তিনি এক বালা চুরির মোকদ্দমায় এই জোবানবনী দিতেছেন। জোবানবন্দীতে পিতার নাম ও বাসস্থান লেখা থাকে, তাহাও পড়িয়া দেখিলাম । তাহা মনোহর দাসের পিতার নাম ও বাসস্থানের সঙ্গে মিলিল। বিষ্ণুরাম জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনোহর দাসের ভাই হরেকৃষ্ণের এই জোবানবন্দী বলিয়া আপনার বোধ হইতেছে কি না ?” আমি । বোধ হইতেছে । বিষ্ণু। যদি সংশয় থাকে, তবে এখনি তাহ ভঞ্জন হইবে । পড়িয়া যাউন । পড়িতে লাগিলাম যে, সে বলিতেছে, “আমার ছয় মাসের একটি কন্যা আছে। এক সপ্তাহ হইল, তাহার অন্নপ্রাশন দিয়াছি । অন্নপ্রাশনের দিন বৈকালে তাহার বালা চুরি গিয়াছে ” এই পর্ষ্যস্ত পড়িয়া দেখিলে, বিষ্ণুরাম বলিলেন, “দেখুন, কত দিনের জোবানবন্দী ?” জোবানবন্দীর তারিখ দেখিলাম, জোবানৰণী উনিশ বৎসরের । বিষ্ণুরাম বলিলেন, “ঐ কন্যার বয়স এক্ষণে হিসাৰে কত হয় ?” আমি । উনিশ বৎসর কল্প মাস-প্রায় কুড়ি । বিষ্ণু। রজনীর বয়স কত অনুমান করেন ? আমি । প্রায় কুড়ি । বিষ্ণু। পড়িয়া যাউন, হরেকৃষ্ণ কিছু পরে বালিকার নামোল্লেখ করিয়াছেন ।