পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অামি পড়িতে লাগিলাম । দেখিলাম যে, এক স্থানে হরেকৃষ্ণ পুনঃপ্রাপ্ত বালা দেখিয়া ৰলিতেছেন, “এই বালা আমার কন্যা রজনীর বালা বটে।” আর বড় সংশয়ের কথা রছিল না—তথাপি পড়িতে লাগিলাম। প্রতিবাদীর মোক্তার হরেকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করিলেছেন, “তুমি দরিদ্র লোক । তোমার কন্যাকে সোণার বালা দিলে কি প্রকারে ?” হরেকৃষ্ণ উন্থর দিতেছে, “আমি গরীব, কিন্তু আমার ভাই মনোহর দাস দশ টাকা উপার্জন করেন । তিনি আমার মেয়েকে সোণার গহনাগুলি দিয়াছেন ৷” তবে যে এই হরেকৃষ্ণ দাস * অামাদিগের মনোহর দাদের ভাই, তদ্বিষয়ে আর সংশয়ের স্থান রহিল না । পরে মোক্তার অ:বার পিঞ্জাসা করিতেছেন, “তোমার ভাঙ্গ তোমার পরিবার বা তোমার আর কাহাকে কখন অলঙ্কার দিয়াছে ?” উত্তর । না । পুনশ্চ প্রশ্ন। সংসার খরচ দেয় ? উত্তর । না । প্রশ্ন । তবে , তামার কন্যাকে অন্নপ্রাশনে সোণার গহনা দিবার কারণ কি ? উত্তর । আমার এই মেয়েটি জন্মান্ধ, সে জন্য আমার স্ত্রী সৰ্ব্বদ। কাদিয়া থাকে । আমার ভাই ও ভাইজ তাহাতে দুঃখিত হFয়া আমাদিগের মনোদুঃখ যদি কিছু নিবারণ হয়, এই ভাবিয়া অন্নপ্রাশনের সময় মেয়েটিকে এই গহনা গুলি দিয়াছেন । জন্মান্ধ । তবে ষে সে রজনী, তদ্বিষয়ে আর সংশয় কি ? আমি হতাশ হইয়া জোবানবন্দী রাখিয় দিলাম । বলিলাম, “আমার আর বড় সন্দেহ নাই ।” বিষ্ণুরাম বলিলেন, “অত অল্প প্রমাণে আপনাকে সন্তুষ্ট হইতে বলি না । আর একটা জোবানবন্দীর নকল দেখুন * দ্বিতীয় জোবানবন্দীও দেখিলাম যে, উহাও ঐ কথিত বালা চুরির মোকদ্দমায় গৃহীত হইয়াছিল। সেই জোবানবন্দীতে বক্তা রাজচন্দ্র দাস। তিনি একমাত্র কুটুম্ব বলিয়া ঐ অন্নপ্রাশনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হরেকৃষ্ণের শু্যালাপতি বলিয়া আত্মপরিচয় দিতেছেন এবং চুরির বিষয় সকল সপ্রমাণ করিতেছেন । বিষ্ণুরাম বলিলেন, “উপস্থিত রাজচন্দ্র দাস সেই রাজচন্দ্র দাস । সংশয় থাকে, ডাকিয় তাহাকে জিজ্ঞাসা করুন ।” আমি বলিলাম, “নিম্প্রয়োজন ।” లినః রজনী ኳፃ বিষ্ণুরাম আরও কতকগুলি দলিল দেখাইলেন, সে সকলের বৃত্তান্ত সবিস্তারে বলিতে গেলে, সকলের ভাল লাগিবে না । ইহা বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, এই রজনী দাসী ষে হরেকৃষ্ণ দাসের কল্প, ভবিষয়ে আমার সংশয় রহিল না । তখন দেখিলাম, বৃদ্ধ পিতামাত লইয়া অন্নের জন্ত কাতর হইয়ু বেড়াইব । বিষ্ণুরামকে বলিলাম, “মোকদম করা স্বথা । বিষয় রজনী দাসীর, তাহার বিষয় তাহাকে ছাডিয়া দিব । তৰে আমার জ্যেষ্ঠ সহোদর এ বিষয়ে আমার সঙ্গে তুল্যাধিকারী, তাহাকে জিজ্ঞাসা করার অপেক্ষা রহিল মাত্র " অামি একবার আদালতে গিয়া, আসল জোৰানবন্দী দেখিয়া আসিলাম । এখন পুরান নথি ছিড়িয়া ফেলে, তখন রাথিত ; আসল দেখিয়া জানিলাম যে, নকলে কোন কৃত্রিমতা নাই । বিষয় রজনীকে ছাড়িয়া দিলাম । পঞ্চম পরিচ্ছেদ রজনীকে বিষয় ছাড়িয়া দিলাম, কিন্তু কেহ ত সে বিষয় দখল করিল না । রাজচন্দ্র দাস এক দিন দেখা করিতে আসিল । তাহার মুখে শুনিলাম যে, সে সিমলায় একটি বাড়ী কিনিয়া সেইখানে রজনীকে লইয়া আছে । জিজ্ঞাসা করিলাম, "টাকা কোথায় পাইলে ?” রাজচন্দ্র বলিল, “অমরনাথ কর্জ দিয়াছেন, পশ্চাৎ বিষয় হইতে শোধ হইবে।” জিজ্ঞাসা করিলাম যে, “তবে তোমরা বিষয় দখল চাইতেই না কেন ?” তাহাতে সে বলিল, "সে সকল কথা অমরনাথ বাবু জানেন ৷” “আমরনাথ বাবু কি রজনাকে বিবাহ করিয়াছেন ?” তাঙ্কাতে রাজচন্দ্র বলিল, "a1 * পরে রাজচন্দ্রের সঙ্গে কথোপকথন করিতে করিতে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, "রাজচন্দ্র, তোমায় এত দিন দেখি নাই কেন ?” রাজচন্দ্র বলিল, “একটু গা-ঢাক হইয়াছিলাম।” আমি । কার কি চুর করিয়াছ যে, গা ঢাকা হইয়াছিলে ? - রাজ। চুরি করব কার ? তবে অমরনাথ । বাবু বলিয়াছিলেন যে, এখন বিষয় লইয়া গোলৰোগ হইতেছে, এখন একটু আড়াল হওয়া ভাল। মাহুষের চক্ষুলজ্জা আছে ত ? আমি । অর্থাৎ পাছে আমরা কিছু ছাড়িয়া দিতে অনুরোধ করি। অমরনাথ বাৰু বিজ্ঞ লোক