পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* রজনী -اے অথবা কে জানে, পাষাণে ও লৌহে সংঘর্ষণেই অগ্ন্যুৎপাত হয় । তোমার প্রস্তরধবল, প্রস্তরস্নিগ্ধ দর্শন, প্রস্তরগঠিতবৎ মূৰ্ত্তি ষত দেখি, ততই দেখিতে ইচ্ছা হয়। অমুদিন পলকে পলকে দেখিয়াও মনে হয়, দেখিলাম কৈ ? আবার দেখি। আবার দেখি, কিন্তু দেখিয়াও ত সাধ মিটিল না । পীড়িতাবস্থায় আমি প্রায় কাহারও সঙ্গে কথা কহিতাম না । কেহ কথা কহিতে আসিলে ভাল লাগিত না। রজনীর কথা মুখে আনিতাম নাকিন্তু প্ৰলাপকালে কি বলিতাম না বলিতাম, তাহা স্মরণ করিয়া বলিতে পারি না। প্রলাপ সচরাচরই ঘটিত । শয্যা প্রায় ত্যাগ করিতাম না । শুইয়া শুইয়। কত কি দেখিতাম, তাহা বলিতে পারি না । কখন দেখিতাম, সমরক্ষেত্রে যবননিপাত হইতেছে ; রক্তের নদী বহিতেছে ; কখন দেখি তাম, সুবর্ণপ্রান্তরে হীরকবৃক্ষে স্তবকে স্তবকে নক্ষত্ৰ ফুটিয়া আছে! কখন দেখিতাম, আকাশমার্গে অষ্টশশিসমন্বিত শনৈশ্চর মহাগ্ৰহ চতুশ্চক্রবাহী বৃহস্পতির উপর মহাবেগে পতিত হইল—গ্রহ উপগ্রহসকল খণ্ড খণ্ড হইয়া ভাঙ্গিয়া গেল-আধাতোৎপন্ন বহ্নিতে সে সকল জলিয়া উঠিয়া, দাহ্যমানাবস্থাতে মহাবেগে বিশ্বমণ্ডলের চতুর্দিকে প্রধাবিত হইতেছে। কখন দেখিতাম, এই জগৎ জ্যোতিৰ্ম্ময় কান্তরূপধর দেবযোনির মূৰ্ত্তিতে পরিপূর্ণ; তাহারা অবিরত অম্বরপথ প্রভাসিত করিয়া বিচরণ করিতেছে। তাহাদিগের অঙ্গের সৌরভে আমার নাসারন্ধ পরিপূর্ণ হইতেছে, কিন্তু যাহাই দেখি না, সকলের মধ্যস্থলে রজনীর সেই প্রস্তরময়ী মূৰ্ত্তি দেখিতে পাইতাম । হায়! রজনি! পাথরে এত আগুন ? ধীরে রজনি, ধীরে, ধীরে, ধীরে রঞ্জনি, ঐ অন্ধ নয়ন উন্মীলিত কর ! দেখ, আমার দেখ, আমি তোমায় দেখি ! ঐ দেখিতেছি—তোমার নয়নপদ্ম ক্রমে প্রস্ফুটিত হইতেছে-ক্রমে, ক্রমে, ক্রমে, ধীরে, ধীরে, ধীরে, ধীরে নয়নরাজীব ফুটিতেছে, এ সংসারে কাহার না নয়ন আছে ? গো, মেষ, কুকুর, মার্জার ইহাদিগেরও নয়ন আছে—তোমার নাই ? নাই, নাই, তবে আমারও নাই । আমিও আর চক্ষু চাহিব না । সপ্তম পরিচ্ছেদ লবঙ্গলতার কথা আমি জানিতাম, শচীন্দ্র একটা কাণ্ড করিবে— ছেলেবয়সে অত ভাবিতে অাছে । দিদি ত একৰার চেয়েও দেখেন না—আমি বলিলে বিমাতা বলিয়া ; আমার কথা গ্রাহ করে না । ও সব ছেলেকে আঁটপ্লঞ্জ উঠা ভার। এখন দায় দেখিতেছি আমার। ডাক্তারী বৈদ্য কিছু করিতে পারিল না, পরিবেও না। তারা : রোগই নির্ণয় করিতে জান না-রোগ হলো মনে— হাত দেখিলে, চোখ দেখিলে, জিভ দেখিলে তারা কি বুঝিবে ? যদি তারা আমার মত আড়ালে লুকাইয়। বসিয়া অাড়িপেতে ছেলের কাণ্ড দেখিত, তবে এক • দিন রোগের ঠিকানা করিলে করিতে পারিত । কথাটা কি ? “ধীরে রজনি।” ছেলে ত একেলা । থাকিলে এই কথাই বলে । সন্ন্যাসী ঠাকুরের ঔষধে কি এই ফল ফলিল ? আমার মাথা খাইতে কেন আমি এমন কাজ করিলাম ? ভাল, রজনীকে একবার রোগীর কাছে বসাইয়া রাখিলে হয় না ? কৈ, আমি রজনীর বাড়ী গিয়াছিলাম, সে ত সেই । অবধি আমার বাড়ী একবারও আসে নাই । ডাকিয়া পাঠাইলে না আসিয়া থাকিতে পরিবে না । এই ভাবিয়া আমি রজনীর গৃহে লোক পাঠাইলামবলিয়া পাঠাইলাম যে, আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে, একবার আসিতে বলিও । মনে করিলাম, আগে একবার শচীন্দ্রের কাছে রজনীর কথা পাড়িয়া দেখি । তাহ হইলে বুঝিতে পারিব, রজনীর সঙ্গে শচন্দ্রের পীড়ার কোন সম্বন্ধ । আছে কি না ? - অতএব প্রকৃত তত্ত্ব জানিবার জন্ত শচীন্দ্রের কাছে গিয়া বসিলাম । এ কথা ও-কথার পর রজনীর প্রসঙ্গ ছলে পাড়িলাম। আর কেহ সেখানে ছিল ন। রজনীর নাম শুনিবা মাত্র বাছা আমনি চমকিত হংসীর ন্যায় গ্রীব। তুলিয়। আমার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিল । আমি যত রজনীর কথা বলিতে লাগিলাম, শচীন্দ্র কিছুই উত্তর করিল না, কিন্তু ব্যাকুলিত চক্ষে আমার প্রতি চাহিয়া রহিল । ছেলে বড় অস্থির হইয়া উঠিল—এটা পাড়ে, সেটা : ভাঙ্গে, এইরূপ আরম্ভ করিল। আমি পরিশেষে ; রজনীকে তিয়স্কার করিতে লাগিলাম ; সে অত্যন্ত; ধনলুব্ধ, আমাদের পূর্বকৃত উপকার কিছুমাত্র স্বরণ", করিল না। এইরূপ কথাবার্তা শুনিয়া শচীক্স :