পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や অনুরোধ করিলেন । আমারও সে ইচ্ছা ছিল । শচীন্দ্র আমাকে অন্তঃপুরে রজনীর নিকট লইয়া গেলেন । w - . রজনীর নিকট গেলে, সে আমাকে প্রণাম পূৰ্ব্বক পদধূলি গ্রহণ করিল। আমি দেখিলাম যে, ধূলিগ্রহণ কালে পাদস্পর্শ জঙ্গ অন্ধগণের স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী সে ইতস্তম্ভঃ হস্তসঞ্চালন করিল না, এককালেই আমার পাদস্পর্শ করিল । কিছু বিস্মিত হইলাম । সে আমাকে প্রণাম করিয়া দাড়াইল । কিন্তু মুখ অবনত করিয়া রহিল। আমার বিস্ময় বাড়িল । অন্ধদিগের লজ্জা চক্ষুর্গত নহে । চক্ষে চক্ষে মিলনজনিত যে লজ্জা, তাহা তাহাদিগের ঘটিতে পারে না বলিয়া তাহারা দৃষ্টি লুকাইবার জন্ত মুখ নত করে না। একটা কি কথা জিজ্ঞাসা করিলাম, রজনী মুখ তুলিয়া আবার নত করিল, দেখিলাম—নিশ্চিত দেখিলাম, সে চক্ষে কটাক্ষ । , জন্মান্ধ রজনী কি এখন তবে দেখিতে পায় ? অামি শচীন্দ্রকে এই কথ। জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছিলাম, এমত সময় শচীন্দ্র আমাকে বসিবার অনুসন দিবার জন্য রজনীকে আজ্ঞা করিলেন । রজনী একখানা কার্পেট লইয়া পাতিতেছিল—যেখানে পাতিতেছিল, সেখানে অল্প এক বিন্দু জল পড়িয়াছিল, রজনী আসন রাখিয়া, অগ্ৰে অঞ্চলের দ্বারা জল মুছিয়া লইয়া আসন পাতিল। আমি বিলক্ষণ দেখিয়াছিলাম যে, রজনী সেই জল স্পর্শ না করিয়াই আসন পাতা বন্ধ করিয়া জল মুছিয়া লইয়াছিল। অতএব স্পর্শের দ্বারা কখন সে জানিতে পারে নাই যে, সেখানে জল আছে, অবশু সে জল দেখিতে পাইয়াছিল । আমি আর থাকিতে পারিলাম ন!, জিজ্ঞাসা করিলাম, “রজনি, এখন তুমি কি দেখিতে পাও ?” রজনী মুখ নত করিয়া, ঈষৎ হাসিয়া বলিল, “ši f আমি বিস্মিত হইয়া শচীন্দ্রের মুখপানে চাহিলাম। , শচীন্দ্র বলিলেন, “আশ্চৰ্য্য বটে, কিন্তু ঈশ্বর-কৃপায় না হইতে পারে, এমন কি আছে ? অামাদিগের ভারতবর্ষে बशिमळ्रट्झन्न शंक्शंवली চিকিৎসাসম্বন্ধে কতকগুলি অতি আশ্চৰ্য্য প্রকরণ ছিল,—সে সকল তত্ত্ব ইউরোপীষ্মের বহুকাল পরিশ্রম করিলেও আবিষ্কৃত করিতে পারিবেন না। চিকিৎসাবিদ্যা কেন, সকল বিস্তাতেই এইরূপ । কিন্তু সে সকল এক্ষণে লোপ পাইয়াছে, কেবল দুই এক জন সন্ন্যাসী, উদাসীন প্রভৃতির কাছে সে সকল লুপ্ত বিদ্যার কিয়দংশ অতি গুহ ভাবে অবস্থিতি করিতেছে। আমাদিগের বাড়ীতে এক জন সন্ন্যাসী কখন কখন যাতায়াত করিয়া থাকেন, তিনি আমাকে ভালবাসিতেন । তিনি যখন শুনিলেন, আমি রজনীকে বিবাহ করিব, তখন বলিলেন, শুভদৃষ্টি হইবে কি প্রকারে ? কন্যা যে অন্ধ ? আমি রহস্ত করিয়া বলিলাম, আপনি অন্ধত্ব আরোগ্য করুন । তিনি বলিলেন, "করিব—এক মাসে ।" ঔষধ দিয়া তিনি এক মাসে রজনীর চক্ষে দৃষ্টির স্বজন করিলেন ।” অামি আরও বিস্মিত হইলাম, বলিলাম, “ন। দেখিলে আমি ইহা বিশ্বাস করিতাম না। ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রানুসারে ইহা অসাধ্য!” এই কথা হইতেছিল, এমত সময় এক বৎসরের একটি শিশু টলিতে টলিতে, চলিতে চলিতে, পড়িতে পড়িতে, উঠিতে উঠিতে, সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। শিশু আসিয়া রজনীর পায়ের কাছে দুই একটা আছাড় খাইয়া, তাহার বস্ত্রের একাংশ ধূত করিয়া, টানাটানি করিয়া উঠিয়া, রজনীর হাটু ধরিয়া, তাহার মুখপানে চাহিয়া উচ্চ হাসি হাসিয়া উঠিল । তাহার পরে ক্ষণেক আমার মুখপানে চাহিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়া অামাকে বলিল, “দা ।” (श! ! ) আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কে এটি ?” শচীন্দ্র বলিলেন, “আমার ছেলে ।” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, "ইহার নাম কি • রাখিয়াছেন ?” শচীন্দ্র বলিলেন, “অমরপ্রসাদ ।” আমি আর সেখানে দাড়াইলাম না । অনলাঙ্ক