পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se করিতেছেন মাত্র । চঞ্চলকুমারী তাহাকে বলিলেন, *সাহেব, আমাকে ফেলিয়া যাইতেছ কেন ? আমাকে লইয়া যাইবার জন্য আপনাদের দিল্লীশ্বর পাঠাইয়া দিয়াছেন । আমাকে যদি লইয়া ন যান, তবে বাদশাহ কি বলিবেন ?” Tমবারক বলিল, “বাদশাহের বড় আর এক জন আছেন । উত্তর তাহার কাছে দিব ।” চঞ্চল। সে ত পরলোকে, কিন্তু ইন্সলোকে ? মবারক । মবারক আলি ইহলোকে কাহাকেও ভয় করে না । ঈশ্বর আপনাকে কুশলে রাখুন - আমি বিদায় হইলাম। এই বলিয়া মবারক অশ্বে আরোহণ করিলেন । তাহার সৈন্যকে ফিরিতে আদেশ করিতেছিলেন, এমন সময়ে পশ্চাতে একেবারে সহস্র বন্দুকের শব্দ শুনিতে পাইলেন । একেবারে শত মোগল যোদ্ধা ধরাশায়ী হইল । মবারক দেখিলেন, ঘোর বিপদ! পঞ্চম পরিচ্ছেদ হরণ ও অপহরণে দক্ষ মাণিকলাল মাণিকলাল পাৰ্ব্বত্যপথ হইতে নির্গত হইয়াই ঘোড়া ছুটাইয়া একেবারে রূপনগরের গড়ে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন। রূপনগরের রাজার কিছু সিপাহী ছিল, তাহার বেতনভোগী চাকর নহে, জমী করিত, ডাক-ঠাক করিলে ঢাল, গাড়া, লাঠিসোটা লইয়া আসিয়া উপস্থিত হইত ; এবং সকলেরই এক একটি ঘোড় ছিল । মোগল-সেনা আসিলে রূপনগরের রাজা তাহাদিগকে ডাক-ইঁাক করিয়াছিলেন । প্রকাশ্যে তাহাদিগের ডাকিবার কারণ— মোগলসৈন্যের সম্মান ও খবরদারিতে তাহাদিগকে নিযুক্ত কর। গোপন অভিপ্রায়—যদি মোগল-সেনা হঠাৎ কোন উপদ্রব উপস্থিত করে, তবে তাহার নিবারণ। ডাকিবামাত্র রাজপুতেরা ঢাল, খাড়া, ঘোড়া লইয়া গড়ে উপস্থিত হইল--রাক্ত তাহাদিগকে অস্ত্রাগার হইতে অস্ত্ৰ দিয়া সাজাষ্টলেন, তাহার। নানাবিধ পরিচর্য্যায় নিযুক্ত থাকিয়৷ মোগলসৈন্যদিগের সহিত হাস্ত-পরিহাস ও রঙ্গরসে কয় দিবস কাটাইল । তাহার পর ঐ দিবস প্রভাতে মোগলসেনা শিবির ভঙ্গ করিয়া রাজকুমারীকে লইয়া যাওয়াতে রূপনগরের সৈনিকেরাও গৃহে প্রত্যাগমন করিতে আজ্ঞা পাইল । তখন তাহারা অশ্ব সজ্জিত করিল এবং বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী অস্ত্ৰসকল রাজ-অস্ত্রাগারে ফিরাষ্টয়া দিবার জন্য লইয়া আসিল । রাজা স্বয়ং তাহাদিগকে একত্র করিয়া স্নেহসূচক বাক্যে বিদায় দিতেছিলেন, এমন সময়ে আঙ্গুলকাটা মাণিকলাল ধৰ্ম্মাক্ত কলেবরে অশ্ব সহিত সেখানে উপস্থিত হইল । মাণিকলালের সেই মোগলসৈনিকের বেশ । এক জন মোগলসৈনিক অতি ব্যস্ত হইয়া গড়ে ফিরিয়া আসিয়াছে, দেখিয়া সকলে বিস্মিত হইল । রাজ্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি সংবাদ ?” মাণিকলাল অভিবাদন করিয়া বলিল, “মহারাজ, বড় গণ্ডগোল বাধিয়াছে, পাচ হাজার দস্থ্য আসিয়া রাজকুমারীকে ঘেরিয়াছে। জুনাব হাসান আলি খ বাহাদুর আমাকে আপনার নিকট পাঠাইলেন—তিনি প্রাণপণে যুদ্ধ করিতেছেন, কিন্তু আর কিছু সৈন্য ব্যতীত রক্ষা পাইতে পারিবেন না ! আপনার নিকট সৈন্যসাহায্য চাহিয়াছেন।” রাজা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমার সৈন্ত সজ্জিতই আছে ” সৈনিকগণকে বলিলেন, “তোমাদের ঘোড়া তৈয়ার, হাতিয়ার হাতে, তোমরা সওয়ার হইয়া এখনই যুদ্ধে চল । আমি স্বয়ং তোমাদিগকে লইয়। যাইতেছি ” মাণিকলাল বলিল, “যদি এ দাসের অপরাধ মাপ হয়, তবে আমি নিবেদন করি যে, ইহাদিগকে লইয়। আমি অগ্রসর হই । মহারাজ আর কিছু সেনা ংগ্ৰহ করিয়া লইয়া আসুন । দস্থ্যর সংখ্যায় প্রায় পাচ হাজার । আরও কিছু সেনাবল ব্যতীত মঙ্গলের সম্ভাবনা নাই !” স্থূলবুদ্ধি রাজা তাহাতেই সম্মত হইলেন । সহস্ৰ সৈনিক লইয়া মাণিকলাল অগ্রসর হইল, রাজা আরও সৈন্তসংগ্রহের চেষ্টায় গড়ে রছিলেন । মাণিক সেই রূপনগরের সেনা লইয়া যুদ্ধক্ষেত্ৰাভিমুখে চলিল । পথে যাইতে যাইতে মাণিকলাল একটি ছোট রকম লাভ করিল। পথের ধারে একটি বৃক্ষের ছায়ায় একটি স্ত্রীলোক পড়িয়া আছে—বোধ হয় যেন পীড়িত । অশ্বারোহী সৈন্য প্রধাবিত দেখিয়া সে উঠিয়া বসিল—দাড়াইবার চেষ্টা করিল-বোধ হয় পলাইবার ইচ্ছা, কিন্তু পারিল না । বল নাই, ইহা দেখিয়া মাণিকলাল ঘোড়া হইতে নামিয়া তাহার নিকটে গেল । গিয়া দেখিল, স্ত্রীলোকটি অতিশয় সুন্দরী। জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে গা, এখানে এ প্রকারে পড়িয়া আছ ?” যুবতী জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার কাহার ८झौछ ?”