পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ মাণিকলাল বলিল, “আমি রাণ রাজসিংহের छुउ) !” যুবতী বলিল, “আমি রূপনগরের রাজকুমারীর দাসী ।” মাণিক । তবে এখানে এ অবস্থায় কেন ? যুবতী। রাজকুমারীকে দিল্লী লইয়া যাইতেছে। আমি সঙ্গে যাইতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতে রাজি হয়েন নাই । ফেলিয়া আসিয়াছেন । আমি তাই হাটিয়া তাহার কাছে যাইতেছিলাম । মাণিকলাল বলিল, “তাই পথশ্রাস্ত হইয়া পড়িয়া আছ ?” নিৰ্ম্মলকুমারী বলিল, “অনেক পথ ছাটিয়াছি— আর পারিতেছি না ।” পথ এমন বেশী নয়, তবে নিৰ্ম্মল কখনও পথ হাটে নাই, তার পক্ষে অনেক বটে । মাণিক । তবে এখন কি করিবে ? নিৰ্ম্মল । কি করিব-—এইখানে মরিব । মাণিক । ছি! মরিবে কেন ? রাজকুমারীর কাছে চল না কেন ? নিৰ্ম্মল যাইব কি প্রকারে ? পারিতেছি না, দেখিতেছ না ? ক্টাটিতে মাণিক । কেন, ঘোড়ায় চল না ? নিৰ্ম্মল হাসিল । বলিল, “ঘোড়ায় ?” মাণিক । ঘোড়ায় । ক্ষতি কি ? নিৰ্ম্মল। আমি কি সওয়ার ? মাণিক । হুও না । মিৰ্ম্মল । আপত্তি নাই । তবে একটা প্রতি বন্ধক আছে—ঘোড়ায় চড়িতে জানি না । মাণিক । তার জন্য কি আটকায় ? অামার ঘোড়ায় চড় না ? নিৰ্ম্মল । তোমার ঘোড়া কলের, না মাটীর ? মাণিক ! আমি ধরিয়া থাকিব । নিৰ্ম্মল লজ্জারহিত হইয়া রসিকতা করিতেছিল, –এবার মুখ ফিরাইল । তার পর ভ্ৰকুট করিল। রাগ করিয়া বলিল, “আপনি আপনার কাজে যান, আমি আমার গাছতলায় পড়িয়া থাকি। রাজকুমারীর সঙ্গে সাক্ষাতে আমার কাজ নাই ।” মাণিকলাল দেখিল, মেয়েটি বড় সুন্দরী । লোভ সামলাইতে পারিল না । বলিল, “ই গা ! তোমার বিবাহ হইয়াহে ?” রহস্তপরায়ণা নিৰ্ম্মল মাণিকলালের রকম দেখিয়া হাসল। বলিল, “ন৷ ” - মণিক। তুমি কি জাতি ? নিৰ্ম্মল । আমি রাজপুতের মেয়ে । মাণিক । আমিও রাজপুতের ছেলে । আমারও স্ত্রী নাই, আমার একটি ছোট মেয়ে আছে, তার একটি মা খুজি। তুমি তার মা হইবে ? আমায় বিবাহ করিবে ? তা হইলে আমার সঙ্গে এরুত্ৰ ঘোড়ায় চড়ায় কোন আপত্তি হয় না । নিৰ্ম্মল । শপথ কর } মাণিক । কি শপথ করিব ? s নিৰ্ম্মল । তরবার ছুঁইয়া শপথ কর যে, আমাকে বিবাহ করিবে । মাণিকলাল তরবারি স্পর্শ করিয়া শপথ করিল যে, “যদি আজিকার যুদ্ধে বঁচি, তবে তোমাকে বিবাহ করিব ।” নিৰ্ম্মল বলিল, “তবে চল, ঘোড়ায় চড়ি ।” মাণিকলাল তখন সহর্ষ-চিত্ত্বে নিৰ্ম্মলকে অশ্বপুষ্ঠে উঠাইয়া সাবধানে তাহাকে ধরিয়া অশ্বচালনা করিতে লাগিল । বোধ হয়, কোর্টশিপট পাঠকের বড় ভাল লাগিল না। আমি কি করিব ! ভালবাসাবাসির কথা একটাও নাই—বহুকালসঞ্চিত প্রণয়ের কথা কিছু নাই—“হে প্রাণ !” “হে প্রাণাধিক!” সে সৰ কিছুই নাই—ধিক্ ! _ ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ফলভোগী রাণা যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবৰ্ত্তী এক নিভৃত স্থানে নিৰ্ম্মলকে নামাইয়া দিয়া, তাহাকে সেইখানে বসিয়া থাকিতে উপদেশ দিয়া, মাণিকলাল, যেখানে রাজসিংহের সঙ্গে মবারকের যুদ্ধ হইতেছিল, একেবারে সেইখানে মবারকের পশ্চাতে উপস্থিত হইল । মাণিকলাল দেখয়া যায় নাই যে, তৎপ্রদেশে যুদ্ধ উপস্থিত হইয়াছে ; কিন্তু রন্ধ্রপথে রাজসিংহ প্রবেশ করিয়াছেন ; হঠাৎ তাহার শঙ্কা হইয়াছিল ষে, মোগলের রন্ধের এই মুখ বন্ধ করিয়া রাজসিংহকে । বিনষ্ট করিবে । সেই জন্যই সে রূপনগরে সৈন্তসংগ্ৰহাৰ্থ গিয়াছিল এবং সেই জন্যই সে প্রথমেই এই দিকে রূপনগরের সেনা লইয়া উপস্থিত হইল । আসিয়াই বুঝিল যে, রাজপুতগণের নাভিশ্বাস । উপস্থিত বলিলেই হয়—মৃত্যুর আর বিলম্ব নাই । তখন, মাণিকলাল মবারকের সেনার প্রতি অঙ্গুলী