পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b" নির্দেশ করিয়া দেখাইয়া বলিল, “ঐ সকল দস্থ্য ! উহাদিগকে মারিয়া ফেল ।” সৈনিকের কেহ কেহ বলিল, “উহারা যে মুসলমান !” মাণিকলাল বলিল, “মুসলমান কি লুঠেরা হয় না ? হিলুই কি যত ক্রিয়াকারী ? মার ” মাণিকলালের আঞ্জায় একেবারে বন্দুকের শব্দ হইল । মবারক ফিরিয়া দেখিলেন, কোথা হইতে সহস্ৰ অশ্বারোহী আসিয়া তাহাকে পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিতেছে। মোগলের ভীত হইয়া আর যুদ্ধ করিল না। যে যে দিকে পারিল, সে সেই দিকে পলায়ন করিল । মবারক রাখিতে পারিল না। তখন রাজপুতেরা “মাতাজাকি জয়!” বলিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবিত হইল । মবারকের সেন। ছিন্ন-ভিন্ন হইয়া পৰ্ব্বতারোহণ করিয়া পলায়ন করিতে লাগিল, রূপনগরের সেনা তাহাদিগের পশ্চাৎ ধাবিত হইয়া পৰ্ব্বতারোহণ করিতে লাগিল। মবারক সেনা ফিরাইতে গিয়া সহস। অশ্বসমেত অদৃশ্ব হইলেন। এই অবসরে মাণিকলাল বিস্মিত রাজসিংহের নিকট উপস্থিত হইয় প্রণাম করিলেন । রাণা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি এ কাণ্ড মাণিকলাল ? কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। তুমি কিছু জান ?” মাণিকলাল হাসিয়া বলিল, “জানি । ষখন আমি দেখিলাম যে, মহারাজ রঞ্জ-পথে নামিয়াছেন, তখনই বুঝিলাম যে, সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে। প্রভুর রক্ষার্থ আমাকে আবার একটি নুতন জুয়াচুরি করিতে ‘হুইয়াছে।” এই বলিয়া মাণিকলাল যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, সংক্ষেপে রাণাকে শুনাইল। আপ্যায়িত হুইয়া রাণা মাণিকলালকে আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন, “মাণিকলাল ! তুমি যথার্থ প্রভুভক্ত । তুমি যে কাৰ্য্য করিয়াছ, যদি কখন উদয়পুর ফিরিয়া যাই, তবে তাহার পুরস্কার করিব । কিন্তু তুমি আমাকে বড় সাধে বঞ্চিত করিলে, আজ মুসলমানকে দেখাইতাম যে, রাজপুত কেমন করিয়। মরে ” মাণিকলাল বলিল, “মহারাজ ! মোগলকে সে শিক্ষা দিবার জন্ত মহারাজের অনেক ভূত্য আছে । সেট রাজকাৰ্য্যের মধ্যে গণনীয় নহে। এখন, উদয়পুরের পথ খোলস । রাজধানী ত্যাগ করিয়া পৰ্ব্বতে পৰ্ব্বতে পরিভ্রমণ করা কৰ্ত্তব্য নহে । এক্ষণে রাজকুমারীকে লইয়া স্বদেশযাত্র করুন " হাজার রাজসিংহ বলিলেন, “আমার কতকগুলি সঙ্গী এখনও ওদিকের পাহাড়ের উপর আছে—তাহাদে নামাইয়া লইয়া ষাইতে হইবে ।” i মাণিকলাল বলিল, “আমি তাহাদিগকে ইয়া ষাইব । আপনি অগ্রসর হউন । পথে আমাদিগের সঙ্গে সাক্ষাৎ হুইবে ।” রাণ সম্মত হইয়া, চঞ্চলকুমারীর সহিত উষ্ঠয়পুরাভিমুখে যাত্রা করিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ স্নেহশালিনী পিসী রাণাকে বিদায় দিয়া মাণিকলাল রূপনগরের• সেনার পশ্চাৎ পশ্চাৎ পৰ্ব্বতারোহণ করিল । পলায়নপরায়ণ মোগলসেন তৎকর্তৃক তাড়িত হইয়া যে যেখানে পাইল, পলায়ন করিল ! তখন মাণিকলাল রূপনগরের সৈনিকদিগকে বলিলেন, “শক্রদল পলায়ন করিয়াছে—আর কেন বৃথ! পরিশ্রম করিতেছ ? কাৰ্য্যসিদ্ধি হইয়াছে, রূপনগরে ফিরিয়া যাও।” সৈনিকেরাও দেখিল—তাও বটে, সম্মুখশত্র আর কেহ নাই । মাণিকলাল যে একটা কারসান্ত্রি করিয়াছে, ইহাও তাহারা বুঝিতে পারিল । হঠাৎ যাহা হইয়া গিয়াছে, তাহার আর উপায় নাই দেখিয়া, তাহারা লুণ্ঠপাটে প্রবৃত্ত হইল এবং যথেষ্ট ধনসম্পত্তি অপহরণ করিয়া সন্তুষ্টচিত্তে হাসিতে হাসিতে, বাদশাহের জয়ধ্বনি তুলিয়া রণজয়গৰ্ব্বে গৃহাভিমুখে ফিরিল । দণ্ডকালমধ্যে পাৰ্ব্বত্যপথ জনশূন্য হুইল —কেবল হত ও আহত মনুষ্য ও অশ্ব সকল পড়িয়া রহিল দেখিয়া, উচ্চ পৰ্ব্বতের উপরে প্রস্তরসঞ্চালনে ষে সকল রাজপুত নিযুক্ত ছিল, তাহারা নামিল এবং কোথাও কাহাকেও না দেখিয়া, রাণা অবশিষ্ট সৈন্য সহিত অবশ্ব উদয়পুরে যাত্রা করিয়াছেন বিবেচন৷ করিয়া তাহারাও তাহার সন্ধানে সেই পথে চলিল । পথিমধ্যে রাজসিংহের সহিত সাক্ষাৎ হুইল । সকলে একত্রে উদয়পুরে চলিলেন । সকলে যুটিল—কেবল মাণিকলাল নহে। মাণিকলাল নিৰ্ম্মলকে লইয়া বিব্রত। সকলকে গুছাইয়৷ পাঠাইয় দিয়া, নিৰ্ম্মলের কাছে আসিয়া যুটিল । তাহাকে কিছু ভোজন করাইয়া, গ্রাম হইতে বাহক ও দোলা লইয়া আসিল । দোলায় নিৰ্ম্মলকে তুলিয়া, যে পথে রাণা গিয়াছেন, সে পথে না গিয়া ভিন্ন পথে