পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ অরণিকাষ্ঠ—পুরূরব উদ্যোগ মাণিকলালেরই বেশী। তাহার একটা নমুনা সে এক দিন নিৰ্ম্মলকুমারীকে দেখাইল । নিৰ্ম্মল সবিস্ময়ে দেখিল, তাহার কাটা আঙ্গুলের স্থানে আবার নূতন আঙ্গুল হইয়াছে। সে মাণিকলালকে জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি ?” মাণিকলাল বলিল, “গড়াইয়াছি ” নিৰ্ম্মল ; কিসে ? মাণিক ৷ হাতীর দাতে : কল-কব্জা বেমালুম লাগাইয়াছি, তাহার উপর ছাগলের পাতলা চামড়। মুড়িয়া আমার গাঘের মত রং করাষ্টয়াছি । ইচ্ছালুসারে খোলা যায়, পরা যায় । নিৰ্ম্মল । এর দরকার ? মাণিক । দিল্লীতে জানিতে পারিবে । দিল্লীতে ছদ্মবেশের দরকার হইতে পারে । আলুল-কাটার ছদ্মবেশ চলে না। কিন্তু দুই রকম হইলে খুব চলে । নিৰ্ম্মল হাসিল । তার পর মাণিকলাল একটি পিঙ্করমধ্যে একটা পোষা পায়রা লইল। এই পারাবতটি অতিশয় সুশিক্ষিত। দৌত্যকার্য্যে সুনিপুণ । যাহারা আধুনিক ইউরোপীয় যুদ্ধে “Carrier-pigeon”sfią gą erąofs vrtzşR, প্তাহারা ইহা বুঝিতে পরিবেন । পূৰ্ব্বে ভারতবর্ষে এষ্ট জাতীয় শিক্ষিত পারাবতের ব্যবহার চলিত ছিল । পারাবতের গুণ মাণিকলাল সবিশেষ নিৰ্ম্মলকুমারীকে বুঝাইয়া দিলেন । রীতি ছিল যে, দিল্লীর বাদশাহের নিকট দূত পাঠাইতে হইলে, কিছু উপঢৌকন সঙ্গে পাঠাইতে হয় । ইংলণ্ড, পর্তুগাল প্রভৃতির রাজারাও তাঁহ পাঠাইতেন। রাজসিংহও কিছু দ্রব্যসামগ্ৰী মাণিকলালের সঙ্গে পাঠাইলেন । তবে অপ্রণয়ের দৌত্য, বেশী সামগ্ৰী পাঠাইলেন না । অন্যান্ত দ্রব্যের মধ্যে শ্বেতপ্রস্তরনিৰ্ম্মিত, মণিরত্নখচিত, কারুকার্য্যযুক্ত কতকগুলি সামগ্ৰী পাঠাইলেন । মাণিকলাল তাহা পৃথক্ বাহনে বোঝাই করিয়া লইলেন । অবধারিত দিবসে রাণার আজ্ঞালিপি ও পত্র লইয়া, নিৰ্ম্মলকুমারী সমভিব্যাহারে, দাস-দাসী, লোকজন, হাতী-ঘোড়া, উট-বলদ, শকট, এক্কা, দোলা, রেশালা প্রভৃতি সঙ্গে লইয়া বড় ঘটার সহিত মাণিকলাল যাত্রা করিলেন । যাইতে অনেক দিন লাগিল । &R দিল্লীর কয় ক্রোশমাত্র বাকি থাকিতে মাণিকলাল তাম্বু ফেলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারীকে ও অন্তান্ত লোকজনকে তথায় রাখিয়া এক জনমাত্র বিশ্বাসী লোক সঙ্গে । লইয়া দিল্লী চলিল। আর সেই পাথরের সামগ্রী- “ গুলিও সঙ্গে লইল । গড় আঙ্গুল খুলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারীর কাছে রাখিয়া গেল, বলিল, “কাল আসিব ।” নিৰ্ম্মল জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপার কি ?” মাণিকলাল একখানা পাথরের জিনিস নিৰ্ম্মলকে দেখাইয়া, তাহাতে একটি ক্ষুদ্র চিহ্ন দেখাইল । বলিল, “সকলগুলিতেই এইরূপ চিহ্ন দিয়াছি।” নিৰ্ম্মল ; কেন ? মাণিক । দিল্লীতে তোমাতে আমাতে ছাড়াছাড়ি অবশ্য হইবে। তার পর যদি মোগলের প্রতিবন্ধকতায়, পরম্পরের সন্ধান না পাই, তাহা হইলে, তুমি পাথরের জিনিস কিনিতে বাজারে পাঠাইও । যে দোকানের জিনিসে তুমি এই চিহ্ন দেখিবে, সেই দোকালেই তামার সন্ধান করিও । এইরূপ পরামর্শ আঁটিয়া মাণিকলাল বিশ্বাসী লোকটি ও প্রস্তরনিৰ্ম্মিত দ্রব্যগুলি লইয়া দিল্লী গেল । সেখানে গিয়া, একখানা ঘর ভাড়া লইয়া, পাথরের দোকান সাজাইয়া ঐ সমভিব্যাহারী লোকটিকে দোকানদার সাজাইয়া শিবিরে ফিরিয়া আসিল । পরে সমস্ত ফৌজ ও রেশাল এবং নিৰ্ম্মলকুমারীকে লইয়া পুনৰ্ব্বার দিল্লী গেল এবং সেখানে যথারীতি শিবির সংস্থাপন করিয়া বাদশাহের নিকট সংবাদ পাঠাইল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ অগ্নিচয়ন অপরাহ্লে ঔরঙ্গজেব দরবারে আসীন হইলে মাণিকলাল সেখান গিয়া হাজির হইলেন । দিল্লীর বাদশাহের আমখাস অনেক গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে; এখানে তাহার বিস্তারিত বর্ণনা আমার অভিপ্রেত নহে। “ মাণিকলাল প্রথম সোপানাবলী আরোহণ করিয়া একবার কুর্ণিশ করিলেন। তার পর হইল। এক পদ উঠিয় আবার কুর্ণিশ–আবার এক পদ উঠিয়া আবার কুর্ণিশ । এইরূপ তিনবার উঠিয় ভক্তেতাউস্থসন্নিধানে উপস্থিত হইলেন। মাণিকলাল অভিবাদন করিয়া রাজসিংহ-প্রেরিত সামান্ত উপহার