পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ সঙ্গে আজই দিল্লীর বাহিরে চলিয়া যাইও । যদি শিবিরে কাহাকেও না পাও, তবে ইহার সঙ্গে দিল্লীর বাহিরে যাইও । তোমার স্বামী বোধ হয়, দিল্লী ছাড়াইয়া কোথাও তোমাদের জন্ত অপেক্ষা করিতেছেন। পথে র্তাহার সঙ্গে ঘদি সাক্ষাৎ না হয়, তাহ হইলে এই খোজাই তোমাকে উদয়পুর পর্য্যন্ত রাখিয়া আসিবে । খরচপত্র তোমার কাছে না থাকে, তবে তাহাও আমি দিতেছি । কিন্তু সাবধান । আমি ধরা না পড়ি ।” নিৰ্ম্মল বলিল, “হজরৎ ! সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি রাজপুতের মেয়ে ” তখন যোধপুরী বনাসী নামে তাহার বিশ্বাসী খোজাকে ডাকাইয়া যাহা করিতে হইবে, তাঙ্গ বুঝাইয়া বলিলেন, জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখনই যাইতে পারিবে ত ?” বনাসী বলিল, “ত পারিব ; কিন্তু বেগম সাহেবার দস্তখতি একখান পরওয়ান না পাইলে এত করিতে সাহস হইতেছে না।” যোধপুরী তখন বলিলেন, “যেরূপ পরওয়ান চাহি, লিখাইয়া আন, আমি বেগম সাহেবার দস্তখত করাইতেছি ।” খোজ পরওয়ান লিখাইয়া আনিল । তাহা সেই তাতারী প্রহরিণীর হাতে দিয়া, রাজমহিষী বলিলেন, “ইহাতে বেগম সাহেবার দস্তখত করাইয়া আন ।” প্রহরিণী জিজ্ঞাসা করিল, “যদি জিজ্ঞাসা করে কিসের পরওয়ান ?” যোধপুরী বলিলেন, “বলিও, আমার কোতলের পরওয়ানা ; কিন্তু কালি-কলম লইয়া যাও। আর পাঞ্জ ছেপ ত করিতে ভুলিও না ।” প্রহরিণী কালি-কলম সহিত পরওয়ান লইয়া গিয়া জেব-উন্নিসার কাছে ধরিল । জেবাউন্নিসা পুৰ্ব্বভাবাপন্ন, জিজ্ঞাসা করিল, “কিসের পরওয়ানা ?” প্রহরিণী বলিল, “আমার কোতলের পরওয়ানা 7 জেব। কি চুরি করেছিস্ ? প্রহরিণী। হজরৎ উদিপুরী বেগমের পেশওয়াজ । জেব । আচ্ছা করেছিস-কোতলের পর পরিস। এই বলিয়া বেগম সাহেব। পরওয়ানা দস্তখত করিয়া দিলেন । প্রহরিণী মোহর ছেপত করিয়া লইয়া যোধপুরী বেগমকে আনিয়া দিলেন। বনাসী সেই পরওয়ান এবং নিৰ্ম্মলকে লইয়া যোধপুরীর মহাল হইতে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী যাত্রা করিল। নিৰ্ম্মলকুমারী অতি প্রফুল্লমনে খোজার সঙ্গে চলিলেন । কিন্তু সহসা সে প্রফুল্লতা দূর হইল-রঙ মহালের ফটকের নিকট আসিয়া খোজা ভীত, স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইল ; বলিল, “কি বিপদ! পলাও ! পলাও ” এই বলিয়া খোজা উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ সমিধ সংগ্ৰহ—স্বয়ং ষম নিৰ্ম্মল বুঝিল না যে, কেন পলাইতে হইবে । এ দিক্ ও দিক্ নিরীক্ষণ করিল—পলাইবার কারণ কিছুই দেখিতে পাইল না। কেবল দেখিল, ফটকের নিকট পরিণতবয়স্ক শুভ্ৰবেশ এক জন লোক দাড়াইয়া আছে । মনে করিল, এটা কি ভূত-প্ৰেত ষে, তাই ভয় পাইয় খোজ পলাইল ? নিৰ্ম্মল নিজে ভূতের ভয়ে তেমন কাতর নহে, এ জন্য সে না পলাইয়া ইতস্ততঃ করিতেছিল ; ইতিমধ্যে সেই শুভ্ৰবেশ পুরুষ আসিয়া নিৰ্ম্মলের নিকট দাড়াটল । নিৰ্ম্মলকে দেখিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কে ?” নিৰ্ম্মল বলিল, “আমি যে হই না কেন ?” শুভ্ৰবেশী পুরুষ জিজ্ঞাসা করিল,"তুমি কে ? কোথা যাইতেছিলে ?” নি । বাহিরে } পুরুষ । কেন ? নি। অামার দরকার আছে । পু। দরকার ভিন্ন কেহ কিছু করে না, তাহা আমার জানা আছে । কি দরকার ? নি । আমি বলিব না । পু , তোমার সঙ্গে কে আসিতেছিল ? নি। আমি বলিব না । পু। তুমি হিন্দুর মেয়ে দেখিতেছি, কি জাতি ? নি । রাজপুত । পু ! তুমি কি যোধপুরী বেগমের কাছে থাক ? নিৰ্ম্মল দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করিল, যোধপুরী বেগমের নাম কাহারও সাক্ষাতে করিবে না—কি জানি, যদি র্তাহার কোনরূপ অনিষ্ট ঘটে। অতএব বলিল, “আমি এখানে থাকি না, আজি আসিয়াছি।” সে পুরুষ জিজ্ঞাসা করিল, “কোথা হইতে আসিয়াছ ?”