পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:: १8 আপনাকে প্রবঞ্চনা করিব না। তবে আপনি পুরী অধিকার করার পর তাহাকে আমি জীবিত পাইব কি না সন্দেহ। রাজপুতমহিষীদিগের রীতি এই যে, শত্রুর হাতে পড়িবার আগে চিতায় পড়িয়া পুড়িয়া মরে । তাঁহাকে জীবিত পাইব না বলিয়াই এ কথা স্বীকার করিতেছি। নহিলে আমা হইতে চঞ্চলকুমারীর কোন অনিষ্ট ঘটিবে না । ঔ । ইহাতে অনিষ্ট কি ? সে ত বাদশাহের বেগম হুইবে । - নিৰ্ম্মল উত্তর করিতে যাইতেছিল, এমন সময়ে খোজা আসিয়া নিবেদন করিল, “পেস্বীর দরবারে হাজির, জরুরি আরজি পেস করিবে । হজরত শাহজাদা আক্ব্যর শাহের সংবাদ আসিয়াছে।” ঔরঙ্গজেব অতিশয় ব্যস্ত হইয়। দরবারে গেলেন । পেস্কার আরজি পেস করিল। ঔরঙ্গজেব শুনিলেন, আকৃবারের পঞ্চাশ হাজার মোগল সেন। ছিন্ন ভিন্ন হইয়া প্রায় নিঃশেষে নিহত হইয়াছে। হতাবশিষ্ট কোথায় পলায়ন করিয়াছে, কেহ জানে না । - ঔরঙ্গজেব তখনই শিবির ভঙ্গ করিতে অঙ্কি! দিলেন । আক্ব্বরে । সংবাদ রঙমহালেও পৌছিল । শুনিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী পেশোয়াজ পরিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া যোধপুরী বেগমের নিকট রূপনগরী নাচের মহুল দিল । বেশভূষা পরিত্যাগ করিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী ভাল মানুষ হইয়া বসিলে বাদশাহ তাঁহাকে তলব করিলেন। নিৰ্ম্মল হাজির হইলে বাদশাহ বলিলেন, “আমরা তাম্বু ভাঙ্গিতেছি—লড়াইয়ে যাইব—তুমি কি এখন উদয়পুরে যাইতে চাও ?” নি। না, এক্ষণে আমি ফোঁজের সঙ্গে যাইব । যাইতে যাইতে যেখানে সুবিধা বুঝিব, সেইখান হইতে চলিয়া যাইব । ঔরঙ্গজেব একটু দুঃখিতভাবে বলিলেন, “কেন ৰাইৰে ?” নিৰ্ম্মল বলিল, “শাহানশাহের হুকুম ” ঔরঙ্গজেব প্রফুল্লভাবে বলিলেন, “আমি যদি ৰাইতে না দিই, তুমি কি চিরদিন আমার রঙমহালে থাকিতে সম্মত হুইবে ?” নিৰ্ম্মলকুমারী যুক্তকরে বলিল, “আমার স্বামী আছেন ।” ঔরঙ্গজেব একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন, “যদি তুমি ইসলামধৰ্ম্ম গ্রহণ কর, যদি সে স্বামী ত্যাগ ثAs ;"" . په پي * * , , , , .. ‘. . . .” কর, তৰে উদিপুরী অপেক্ষ তোমাকে গৌরবে রাখিব ।” নিৰ্ম্মল একটু হাসিয়া অথচ সসন্ত্রমে বলিল, *তাহ হুইবে না, জাহাপন৷ ” ঔ। কেন হুইবে না ? কত রাজপুত্তরাজকন্যা ত মোগলের ঘরে আসিয়াছে। - s" তাহারা কেহ স্বামী ত্যাগ করিয়া আসে নাহ । - ঔ । যদি তোমার স্বামী না থাকিত, তাহা হইলে আসিতে ? নি। এ কথা কেন ? ওঁ । কেন, তাহা বলিতে আমার লজ্জা করে। আমি তেমন কথা কখনও কাহাকেও বলি নাই । আমি প্রাচীন হুইয়াছি, কিন্তু কখনও কাহাকেও ভালবাসি নাই। এ জন্মে কেবল তোমাকেই ভালবাসিয়াছি। ভাই, তুমি যদি বল যে, তোমার স্বামী না থাকিলে তুমি আমার বেগম হইতে, তাহ হইলে এ স্নেহশূন্ত হৃদয়—পোড়া পাহাড়ের মত হৃদয় —একটু স্নিগ্ধ হয় -- নিৰ্ম্মল ঔরঙ্গজেবের কথায় বিশ্বাস করিল—কেন না, ঔরঙ্গজেবের কণ্ঠের স্বর বিশ্বাসের যোগ্য বলিয়া বোধ হইল। নিৰ্ম্মল ঔরঙ্গজেবের জন্য কিছু দুঃখিত হুইয়া বলিল, “জাহাপনা, এ বাদী এমন কি কাজ করিয়াছে যে, সে আপনার ভালবাসার যোগ্য হয় * ঔ। তাহা বলিতে পারি না। তুমি সুনারী বটে কিন্তু সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হইবার বয়স আমার আর নাই । আর তুমি সুন্দরী হইলেও উদিপুরী অপেক্ষ নও। . বোধ করি, আমি তোমার কাছে ভিন্ন আর কোথাও সত্য কথা কখন পাই নাই, সেই জন্য । বোধ করি, ' তোমার বুদ্ধি, চতুরতা আর সাহস দেখিয়া তোমাকেই । আমার উপযুক্ত মহিষী বলিয়া বিশ্বাস হুইয়াছে। যাই হোক, আলমগীর বাদশাহ তোমার ভিন্ন আর কাহারও কখন বশীভূত হয় নাই । আর কাহারও চক্ষুর কটাক্ষে মোহিত হয় নাই। নি। শাহানশাহ ! আমাকে একদা রূপনগরের রাজকন্যা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, “তুমি কাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা কর ?” আমি বলিয়াছিলাম, আলমগীর বাদশাহকে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কেন ? আমি তাহাকে বুঝাইলাম যে, আমি বালককালে বাঘ পুষিয়াছিলাম, বাঘকে বশ করাতেই আমার আনন্দ ছিল। বাদশাহকে বশ । করিতে পারিলে আমার সেই আনন্দ হইবে।