পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্ট্রম খণ্ড আগুনে কে কে পুড়িল ? প্রথম পরিচ্ছেদ বাদশাহের দাহনারম্ভ এ দিকে বাদশাহ বড় গোলযোগে পড়িলেন । ঠাহীর সমস্ত সেন রন্ধপথে প্রবেশ করিবার অল্প পরেই দিবাবসান হইল। কিন্তু রন্ধের অপর মুখে কেহই পৌছিল না । অপর মুখের কোন সংবাদ নাই । সন্ধ্যার পরেই সেচ সঙ্কীর্ণ রন্ধপথে অতিশয় গাঢ় অন্ধকার হইল। সমস্ত সেনার পথ আলোকযুক্ত হয়, এমন রোশনাইয়ের সরঞ্জাম সঙ্গে কিছুষ্ট নাই । বাদশাহের ও বেগমদিগের নিকট রোশনাই হইল— কিন্তু আর সমস্ত সেনাই গঢ়-তিমিরাচ্ছন্ন । তাহাতে আবার বন্ধুর পাৰ্ব্বত্যভলভূমি, বিকীর্ণ উপলখণ্ডে ভীষণ হইয়া আছে । ঘোড়াসকল টক্কর খাইতে লাগিল,—কত ঘোড়া আরোহী সমেত পড়িয়: গেল ; অপর অশ্বের পাদদলনে পিষ্ট হইয়া অশ্ব ও আরোহী উভয়ে আহত বা নিহত হইল ; কত হাতীর পায়ে বড় বড় শিলাখণ্ড ফুটিতে লাগিল—হস্তিগণ তুৰ্দ্দমনীয় হইয়া ইতস্ততঃ ফিরিতে লাগিল , অশ্বারোহিণী স্ত্রীগণ ভূপতিত হইয়। অশ্বপদে, হস্তিপদে দলিত হইয়া, আৰ্ত্তনাদ করিতে লাগিল । দোলার বাহকদিগের চরণসকল ক্ষতবিক্ষত হইয়া রুধিরে পরিপ্লুত হইতে লাগিল । পদাতিক সেনা আর চলিতে পারে ন-- পদস্খলনে, এবং উপলাঘাতে অত্যস্ত পীড়িত হইল । তখন ঔরঙ্গজেব রাiব্রতে সেনার গতি বন্ধ করিয়া শিবিরসংস্থাপন করিতে অনুমতি করিলেন । কিন্তু তাম্বু ফেলিবার স্থান নাই । অতি কষ্টে বাদশাহ ও বেগমদিগের তাম্বুর স্থান হইল। আর কাহারও হইল না। ষে যেখানে ছিল, সে সেইখানে রহিল । অশ্বারোহী অশ্বপৃষ্ঠে—গজারোহী গজপৃষ্ঠে – পদাতিক চরণে ভর করিয়া রহিল । কেহ বা কষ্টে পৰ্ব্বতসামুদেশে একটু স্থান করিয়া তাহাতে প। ঝুলাইয়া বসিয়া রহিল। কিন্তু সাচুদেশ ছুরারোহণীয়, – এমন খাড়া ষে, উঠা যায় না। অধিকাংশ লোকই এরূপ বিশ্রামের স্থান পাইল না । তার পর বিপদের উপর—খাদ্যের অত্যন্ত অভাব। সঙ্গে যাহা ছিল, তাহা ত রাজপুতের 2? লুঠিয়া লইয়াছে । যে রন্ধ্রপথে সেন উপস্থিত— সেখানে অন্ত খাদ্যের কথা দুরে থাক, ঘোড়ার স্বাস পৰ্য্যন্ত পাওয়া যায় না । সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর কেহ কিছু খাইতে পাইল না । বাদশাহ কি বেগমেরাও নয়। ক্ষুধার, নিদ্রার অভাবে সকলে মৃতপ্রায় হইল ; মোগলসেনা বড় গোলযোগে পড়িল । এ দিকে বাদশাহ উদিপুরী এবং জেব উন্নিসার হরণ-সংবাদ প্রাপ্ত হষ্টলেন । ক্রোধে অগ্নিতুল্য জলিয়া উঠিলেন। এক সমস্ত সৈনিকদিগকে নিহত করাযায় না, নহিলে ঔরঙ্গঞ্জেব তাহা করিতেন । বিবরে নিরুদ্ধ সিংহ সিংহীকে পিঞ্জরাবদ্ধ দেখিলে যেরূপ গর্জন করে, ঔরঙ্গজেব সেক্টরূপ গর্জন করিতে লাগিলেন । গভীর রাত্রে সেনার কোলাহল কিছু নিবৃত্ত হইলে, অনেকে শুনিল, অতি দূরে অনেক পাহাড়ের উপর যেন বহুসংখ্যক বৃক্ষ উন্মুলিত হইতেছে । কিছু বুঝিতে না পারিয়া, অথবা ভৌতিক শব্দ মনে করিয়া সকলে চুপ করিয়া রহিল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ দাহনে বাদশাহের বড় জালা রাত্রিপ্রভাতে ঔরঙ্গজেব সৈন্যচালনার আদেশ করিলেন । সেই বৃহতী সেনা—তোপ লইয়া চতুরঙ্গিণী —অতি দ্রুতপদে রন্ধমুখের উদ্দেশে চলিল। ক্ষুৎপিপাসায় সকলেই অত্যস্ত ক্লিষ্ট—বাহির হইলে তবে পানাহারের ভরসা—সকলে শ্রেণীভঙ্গ করিয়া ছুটিল । ঔরঙ্গজেব নিজে উদিপুরী ও জেব উন্নিসাকে মুক্ত করিয়৷ উদয়পুর নিঃশেযে ভস্ম করিবার জন্য আপনার ক্রোধাগ্নিতে আপনি দগ্ধ হইতেছিলেন—তিনি আর কিছুমাত্র ধৈর্য্যাবলম্বন করিতে পারিলেন না। বড় ছুটাছুটি করিয়া মোগলসেন রন্ধ্রপথে উপস্থিত হইল । উপস্থিত হইয়া দেখিল, মোগলের সৰ্ব্বনাশ ঘটিবার উপক্রম হইয়া আছে । রন্ধমুখ বন্ধ । রাত্রিতে রাজপুতের সংখ্যাতীত মহামহীরুহ সকল ছেদন করিয়া পৰ্ব্বত-শিখর হইতে রন্ধ্রমূখে ফেলিয়া দিয়াছে - পৰ্ব্বতাকার সপল্লব ছিন্ন বৃক্ষরাশি রক্রমুখ একবারে