পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ পৰ্ব্বতের কাকর তুলিয়া আপনার মাথায় দিলেন। দিল্লীর বাদশাহ রাজপুত ভূইয়ার নিকট সসৈন্তে পিঞ্জরাবদ্ধ মুষিক । একটা মুষিকের আহার পাইলেও আপাততঃ র্তার প্রাণরক্ষা হইতে পারে । তখন ভারতপতি ক্ষুদ্র রাজপুতকুলবালাকে উদ্ধারকারিণী মনে করিয়া তাহার পারাবত উড়াইয়া দিলেন । _ তৃতীয় পরিচ্ছেদ উদিপুরীর দাহনারম্ভ নিৰ্ম্মলকুমারী উদিপুরী বেগম ও জেব উন্নিসা বেগমকে উপযুক্ত স্থানে রাখিয়া, মহারাণী চঞ্চলকুমারীর নিকট গিয়া প্রণাম করিলেন, এবং আদ্যো পান্ত সমস্ত বিবরণ র্তাহার নিকট নিবেদন করিলেন । সকল কথ। সবিশেষ শুনিয়া চঞ্চলকুমারী আগে উদিপুরীকে ডাকাইলেন । উদিপুরী আসিলে র্তাহাকে পৃথক আসনে বসিতে দিলেন ; এবং তাহাকে সম্মান করিবার জন্য আপনি উঠিয় দাড়াইলেন । উদিপুরী অত্যন্ত বিষণ্ণ ও বিনীত ভাবে চঞ্চলকুমারার নিকট আসিয়াছিলেন, কিন্তু এক্ষণে চঞ্চলকুমারীর সৌজন্য দেখিয়া মনে করিলেন, ক্ষুদ্রপ্রাণ হিন্দু ভয়েই এত সৌজন্য করিতেছে । তখন ম্লেচ্ছকন্ত বলিল, “তোমরা মোগলের নিকট মৃত্যু বাসনা করিতেছ কেন ?” চঞ্চলকুমারী ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “আমরা র্তাহার নিকট মৃত্যু কামনা করি নাই । তিনি যদি সে সামগ্রী আমাদিগকে দিতে পারেন, সেই আশায় আসিয়াছেন। তিমি ভুলিয়া গিয়াছেন যে, আমরা হিন্দু ; যবনের দান গ্রহণ করি ন৷ ” উদিপুরী ঘৃণার সহিত বলিল, “উদয়পুরের ভূইএারা পুরুষানুক্রমে মুসলমানের কাছে এ দান স্বীকার করিয়াছেন । সুলতান আলাউদিনের কথা ছাড়িয়া দিই ; মোগল বাদশাহ আকৃবর শাহ এবং তাহার পৌত্রের নিকটও রাণী রাজসিংহের পূর্বপুরুষেরা এ দান স্বীকার করিয়াছেন ।” চঞ্চল। বেগমসাহেব, আপনি ভুলিয়া যাইতেছেন, সে আমরা দান বলিয়া স্বীকার করি নাই ; ঋণ বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলাম। আকৃষ্ণবর যাদশাহের ঋণ প্রতাপসিংহ নিজে পরিশোধ করিয়া গিয়াছেন । আপনার শ্বশুরের ঋণ এক্ষণে আমরা পরিশোধে প্রবৃত্ত হইয়াছি । তাহার প্রথম কিস্তী লইবার জন্য bు లీ আপনাকে ডাকিয়াছি । আমার তামাকু • নিবিয়া গিয়াছে। অনুগ্রহ পূৰ্ব্বক আমাকে তামাকুট সাজিয়া দিন । চঞ্চলকুমারী প্রথমে বেগমের প্রতি যেরূপ সৌজন্য প্রকাশ করিয়াছিলেন, বেগম যদি তাহার উপযোগী ব্যবহার করিতেন, তাহা হইলে বোধ করি, র্তাহাকে এ অপমানে পড়িতে হইত না । কিন্তু তিনি পরুষবাক্যে তেজস্বিনী চঞ্চলকুমারীর গৰ্ব্ব উদ্রিক্ত করিয়াছেন - কাজেই এখন ফুলভোগ করিতে । হইল ৷ তামাকু সাজার কথায় সেই তামাকু সাজার নিমন্ত্রণপত্ৰখানা মনে পড়িল । উদিপুরীর সর্বশরীরে স্বেদোদগম হইতে লাগিল । তথাপি অভ্যস্ত গৰ্ব্বকে হৃদয়ে পুনঃস্থাপন করিয়া কহিলেন, “বাদশাহের বেগমে তামাকু সাজে না ।” চঞ্চলকুমারী। যখন তুমি বাদশাহের বেগম ছিলে, তখন তামাকু সাজিতে না । এখন তুমি আমার বাদী । তামাকু সাজিবে । আমার হুকুম । উদিপুরী কাদিয়া ফেলিল—দুঃখে নহে, রাগে । বলিল, “তোমার এত বড় স্পদ্ধ যে, আলমগীর বাদশাহের বেগমকে তামাকু সাজিতে বল ?” চঞ্চল । আমার ভরসা আছে, কাল আলমগীর বাদশাহ স্বয়ং এখানে আসিয়া মহারাণার তামাকু সাজিবেন । তাহার যদি সে বিদ্যা না থাকে, তবে তুমি তাহাকে কাল শিখাইয়া দিবে। আজ আপনি শিখিয়া রাখ । চঞ্চলকুমারী তখন পরিচারিকাকে আজ্ঞা দিলেন, "ইহা দ্বারা তামাকু সাঙ্গাইয়া লও ” উদিপুরী উঠে না। তখন পরিচারিক বলিল, “ছিলিম উঠাও ” উদিপুরী তথাপি উঠিল না। তখন পরিচারিকা তাহার হাত ধরিয়া তুলিতে আসিল । অপমানভয়ে কম্পিতহ্নদয়ে শাহানশাহের প্রেয়সী মহিষী ছিলিম তুলিতে গেলেন। তখন ছিলিম পৰ্য্যন্ত পৌছিলেন। না। আসন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া এক পা বাড়াইতে না বাড়াইতে থর থর করিয়া কঁাপিয়া প্রস্তর-নিৰ্ম্মিত হুম্ম্যতলে পড়িয়া গেলেন । পরিচারিকা ধরিয়া ফেলিল-আঘাত লাগিল না । উদিপুরী হৰ্ম্ম্যতলে শয়ন করিয়া মূচ্ছিত হইলেন। তখন চঞ্চলকুমারীর আজ্ঞামত, যে মহার্ঘ্য পালঙ্কে , র্তাহার জন্য মহার্ঘ্য শষ্য রচিত হইয়াছিল, তথায় তিনি পরিচারিকাগণের দ্বারা বাহিত ও নীত হইলেন । সেখানে পৌরাঙ্গনাগণ র্তাহার যথাবিহিত শুশ্রীধা করিল । অল্প সময়েই র্তাহার চৈতন্যলাভ হইল i.