পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী তোমায় ধরিতে যায়, তুমি তাহার সঙ্গে নাচিতে নাচিতে খেলা কর, বালিকা যখন সবচ্ছ সরোবরহৃদয়ে তোমায় একবার দেখিতে পাইয়া, একবার না পাইয়া, তোমার সন্দশন লাভােথ, ইতস্ততঃ সরোবরকলে দৌড়িতে থাকে, তখন তুমি এক একবার ঈষৎ দেখা দিয়া তাহার সহিত কেবল লকোচুরি খেলিতে থাক, নববধ যখন মন্দ বাত সহিত প্রাসাদোপরি একাকিনী দীঘশ্বাস ফেলিতে থাকে, তখন তুমি নারিকেলকুঞ্জান্তরাল হইতে অতি ধীরে ধীরে তাহার হৃদয় ভরিয়া অমত বষণা করিয়া তাহাকে ক্ৰমে শীতল কর; যখন তরঙ্গিণী আশা-তরঙ্গিত-হৃদয়ে ধীর প্রবাহে মন্দগতিতে সিন্ধা-অভিগামিনী হয়, তখন তুমিই তাহাকে স্বৰ্ণ-ভুষণে ভূষিত করিয়া আশীব্বাদ করিয়া পথ প্রদর্শন করিয়া থােক; গোলাপ যখন বসন্ত-রাগে এক বান্তে চারিদিক দেখিয়া হেলিতে দলিতে থাকে, তখন তুমিই তাহাকে মালতী লতাকে চুম্বন করিতে কাণে কাণে পরামর্শ দেও। আবার সেই তুমিই অসন্দভিসন্ধিৎস, নর। যখন কুলকামিনীর ধৰ্ম্মনাশে প্রবত্ত হয়, তখন তোমার কোমল মখমন্ডলে এমনি ভ্ৰকুটি করিতে থাক যে, সে তোমার মািখপানে আর দন্টিক্ষেপ করিতে সমর্থ হয় না; তুমিই নরহত্যাকারীর তরবারিফলকে বিদ্যুৎ চমকাইয়া দেও, তাহার। পাপ শোণিতবিন্দতে চৌষট্টি রৌরব প্রতিফলিত করিয়া দেখাইয়া দেও। তুমি ক্রীড়াশীল শিশর চলৎ সবণস্থালী, তরণের আশা-প্রদীপ; যবেক যাবতীর যামিনীযাপনের প্রধান সম্ভোগ-পদাৰ্থ ; এবং স্থবিরের সমাতি-দপণ। তুমি অনাথার প্রহরী, স্থির দীপধারী; তুমি পথিকের পথপ্রদর্শন; গহীর নৈশ সােয্য; তুমি পাপীর পাপের সাক্ষী; পণ্যাত্মার চক্ষে তাঁহার যশঃপতাকা। তুমি গগনের উত্তজবল মণি ; জগতের শোভা। আর এই শমশানবিহারী শ্ৰীকমলাকাস্তের একমাত্র সম্পর্বল; তুমি ভােলর ভাল, মন্দের মন্দ; রসে রস, বিরসে বিষ। তুমি কমলাকান্তের সহধৰ্ম্মিমণী; শশী, আমি তোমায় বড় ভালবাসি, আমি তোমাকেই বিবাহ করিব। সকলে হরি হরি বল, ভাই! আজি এইখানে বাসর যাপন—সকলে একবার হরি হরি বল, ভাই! বাম ভোলানাথ! চন্দ্র যে পরষ! তবে ডবল মাত্রা চড়াইতে হইল। চন্দ্র আমাদিগের আয্য মতে পােরষি বটে, কিন্তু বিলাতীয় শম্পমদিগের মতে ইনি কোমলাঙ্গী। মতে চন্দ্র হি,* ইংরাজিমতে চন্দ্র শী। এখন উপায় ? হি কি শী, তাহা স্থির হইবে কি প্রকারে ? বাস্তবিক এই বিষয়ে সংসারের লোকের সঙ্গে আমার কখন মতের ঐক্য হইল না। আমার এ বিষয়ে নানা সন্দেহ হয়। যে ওয়াজিদালিশাহ লক্ষেী নগরী হইতে স্বচ্ছন্দে চতুন্দোলারোহণে মচিখোলায় আগমন করিয়া, হংস। হংসী কপোত কপোতী লইয়া ক্ৰীড়া করেন, গোলাপ সহিত বারি-হ্রদে নিত্য স্নান করিয়া, সত্বীয়ানরপেী পিঞ্জীরস্থ বলবলিকে সঘাত পলান্ন প্রদান করেন, তিনি হি না শী ? এবং যে মহিষী দেশ-বাৎসল্যে ঐহিক সখি সম্পত্তি বিসর্জন করিয়া-রাজপরিষগণের শরণাপন্ন হওয়াপেক্ষা ভিক্ষান্ন শ্ৰেয়ঃ বোধে, নেপালের পব্বতীয় প্রদেশে আশ্রয় লইয়াছেন, তিনি শী না হী? তবে তা সাহসকে হি-শীর প্রভেদক করা যায় না। তবে যাদ্ধ-নৈপণ্যে হি-শীর প্রভেদ হইবে ? যে জোয়ান, ওলিয়ান্স দাগ আক্রমণকালে সব্বপ্রথমে পদাপণ করিয়াছিল, যে ফ্রান্সের পনেরদ্ধার করিয়াছিল, তাহকে শী বলিব, না হি বলিব ? আর যে বেডফোর্ড-তাহাকে পাকচক্ৰে ফেলিবার জন্য সেই জোয়ানের কারাগারে পরিষের বস্ত্র সংরক্ষণ করিয়াছিল, তাহাকেই বা হি বলিব, না শী বলিব ? না, যাদ্ধ-কৌশলে ৰাঝিতে পারিলাম না। তবে শনা যায়, যে বলীয়ান, সেই পরিষে, আর যে জাতি দািব্বল, তাহারাই সন্ত্রীলোক। ভাল-কোমৎ আপনাকে নীতিরাজ্যের সব্বে সব্বা স্থির করিয়া ইউরোপীয় পণ্ডিতমণ্ডলীর নিকট করা যাঞ্জা করিয়াছিলেন, সেই অতুল প্রতাপশালীকে যে মাদম ক্লোতিলন্ড দেবো স্বীয় প্রতাপের আয়ত্ত করিয়াছিলেন, তাঁহাকে শী বলিব, না হি বলিব ? রোমক পত্তনের কৈসরগণ এক একজন পথিবীর রাজা, যে মৈসরী রাজ্ঞী ক্লিওপেটরা এরপ তিন জন কৈসরের উপর রাজত্ব করিয়াছেন, তাঁহাকে শী বলিব, না হি বলিব ? বাস্তবিক জগতে কে হি, কে শী, তাহা স্থির করা যায় না। সে দিন কীৰ্ত্তন হইতেছিল, যখন কীত্তন-গায়িকা বলিল-“সিংহিনী

  • হি শী কাহাকে বলে ? শনিয়াছি, দাইটি ইংরাজি সব্বনাম-হি পংলিঙ্গ-শী পত্রীলিঙ্গ।

-শ্ৰীভীমদেব। 8