পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসম্পর্শ রচনা-রাজমোহনের পত্রী তখন তরণী দঢ়প্ৰতিজ্ঞ সত্বরে কহিল, “কথায় কাজ নাই কনক ! তুমি জান আমার স্বামী আমাকে জল আনিতে বারণ করিয়াছেন। তুমি তাঁহাকে চেন ত ?” কনকময়ী কোনও উত্তর না করিয়া সচকিত কটাক্ষে চতুন্দিকে নিরীক্ষণ করিলেন, যেন কেহ আসিতেছে কি না দেখিলেন। কোথাও কেহ নাই দেখিয়া সমভিবাহারিণীর মািখপ্রতি চাহিয়া কুঁহিলেন, যেন কিছ বলিতে বাসনা আছে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আশঙ্কাপ্রযক্ত কথনেচ্ছা! দমন করিয়া অধোদাল্টি করতঃ চিন্তা করিতে লাগিলেন। তরণী জিজ্ঞাসা করলেন, “কি ভাবিতেছিস ?” কনক কহিল-“যদি-যদি তোর চোখ থাকত—” নবীনা আর না। শনিয়া ইঙ্গিতের দ্বারা নিষেধ করিয়া কহিল, "চুপ কর, চুপ করাবঝিয়াছি।” কনক বলিল, “বঝিয়া থাক ত কি করিবে এখন ?" তরণী কিয়াৎক্ষণ যন্তব্ধ হইয়া রহিলেন, ঈষৎ অধরকল্পে এবং অলপ ললাট-রক্তিমায় প্রকাশ পাইতে লাগিল যে, যাবতীর মনোমধ্যে কোন চিন্তা প্রবল। তােদশে ঈষৎ দেহ কক্ষপনে আরও দেখা গেল যে, সে চিন্তায় হৃদয় অতি চঞ্চল হইতেছে। ক্ষণেক পরে কহিলেন - চল যাই, কিন্তু ইহাতে কি পাপ আছে ?” কনক হাসিতে হাসিতে কহিল, “পাপ আছে! আমি ভুড়ে ভট্টাচায্য নহি, শাস্ত্রের খবরও রাখি না; কিন্তু আমার আড়াই কুড়ি মিনসে থাকিলেও যাইতাম।” “বড় বকের পাৰ্ট” বলিয়া হাসিতে হাসিতে যাবতী কলসী আনিতে উঠিল; “পঞ্চাশটা! হাঁলো, এতগলো কি তোর সাধা ?” কনক দঃখের হাসি হাসিয়া কহিল, “মখে আনিতে পাপ; কিন্তু বিধাতা যে একটা দিয়াছেন, পঞ্চাশটাও যদি তেমনি হয়, তবে কোটীখানেকেই বা কি ক্ষতি ? কাহারও সঙ্গে যদি দেখা সাক্ষাৎ না হইল। তবে আমি কোটী পরিষের সত্ৰী হইয়াও সতী সাধনী পতিব্ৰতা।" “কুলীনে কপাল" বলিয়া তরণী চঞ্চল পদে পাকশালা হইতে একটি ক্ষদ্র কলসী আনয়ন করিলেন। যেমন বারিবাহিনী তেমনই কলসী। তখন উভয়ে প্রবাহিণী অভিমখে যাত্রা করিলেন। কনক হাসিতে হাসিতে কহিল, “এখন এস দেখি মোর গৌরিবিণী, হাঁ-কারাগালোকে একবার রাপের ছটাটা দেখাইয়া আনি।” “মর পোড়ার বাঁদরা" বলিয়া কনকের সমভিব্যাহারিণী অবগন্ঠেনে সলঙ্গজ বদন আচ্ছন্ন দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ অপনীত সােয্যকার নারিকেলাদি বাক্ষাগ্রভাগ হইতে অন্তহিত হইয়াছে; কিন্তু এখনও পৰ্যন্ত নিশা ধরাবাসিনী হয় নাই। এমন সময় কনক ও তাহার সমভিব্যাহারিণী কলসীকক্ষে গহে। প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতেছিল। পথিপাশ্বে একটি ক্ষদ্র উদ্যান ছিল; পৰব বঙ্গ মধ্যে তদ্রুপ উদ্যান বড় বিরল। সংশোভন লৌহ রেইলের পরিধি মধ্য হইতে অসংখ্য গোলাপ ও মল্লিকার কালি পথিকার নেত্রমোদন করিতেছিল। পৰবতন পদ্ধতিমত চতুষ্মেকাণ ও অন্ডাকার বহতের চানকার মধ্যে পরিস্কার ইন্টকচণ্য পথ সরচিত ছিল। উদ্যানমধ্যে একটি পদ্ধকরিণী। তাহার তীর কোমল তৃণাবলিতে সসক্তিজত; একদিকে ইন্টকনিশ্চিমত সোপােনাবলী। ঘাটের সম্মখে বৈঠকখানা। বৈঠকখানার বারাগড়ায় দাঁড়াইয়া দই ব্যক্তি কথোপকথন করিতেছিল। বয়োধিক যে ব্যক্তি, তাহার বয়স ত্রিশ বৎসরের উদ্ধাব হইবে ; দীঘ শরীর, স্থলাকার পরষ। অতি স্থািলকায় বলিয়াই সংগঠন বলা যাইতে পারিল না। বর্ণ কঠোর শ্যাম; কান্তি কোনও অংশে এমত নহে যে, সে ব্যক্তিকে সপরিষ বলা যাইতে পারে; বরং মাখে। কিছ. অমধরতা ব্যক্ত ছিল। বস্তুতঃ সে মনুখাবয়ব অপর সাধারণের মখাবয়ব নহে; কিন্তু তাহার বিশেষত্ব কি যে, তাহাও হঠাৎ নিশ্চয় করা দীঘট। কটিদেশে ঢাকাই ধতি, লম্বা লম্বা পাকান ঢাকাই চাদরে পাগড়ি বাঁধা। পাগড়িটির দৌরাত্ম্যে, যে দই এক গাছি চুল মাথায় ছিল, তাহাও দেখিতে পাওয়া ভার। ঢাকাই মলমলের পিরহণ গাত্ৰে -সন্তরাং তদভ্যন্তরে অন্ধকারময় অসীম so.