পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী রাজমোহনের স্ত্রী তদপে মদ স্বরে কহিল, “না, না, আমারও সহ্য আছে-তুমি থাকিলে হয়ত হিতে বিপরীত হবে, তুমি বাড়ী যাও।” ইহা শনিয়া কনক পথান্তরে নিজ গহে গমন করিল। তাঁহার সহচরী যখন নিজ গহে। প্রবেশ করিলেন, তখন রাজমোহন কিছই বলিল না। তাহার সত্ৰী জলকলসী লইয়া পাকশালায় রাখিলেন। রাজমোহন নিঃশব্দে সঙ্গে সঙ্গে পাকশালায় যাইলেন। সত্ৰী কলসীটি রাখিলে রাজমোহন কহিল, “একটি দাঁড়াও।” এই বলিয়া জলের কলসী লইয়া অস্তিাকুড়ে জল ঢালিয়া ফেলিলেন। রাজমোহনের একটি প্রাচীনা পিসী ছিল। পাকের ভার তাঁরই প্রতি; তিনি এইরাপ জলের অপচয় দেখিয়া রাজমোহনকে ভৎসনা করিয়া কহিলেন, “আবার জলটা অপচয় করিতেছিস কেন রে ? তোর কাগণডা দাসী আছে যে, আবার জল আনিয়া দিবো?” “চুপ করা মাগী হারামজাদী” বলিয়া রাজমোহন বারিশন্য কলসীটা বেগে দরে নিক্ষেপ করিল; এবং সন্ত্রীর দিকে ফিরিয়া অপেক্ষাকৃত মািদ। অথচ অন্তর্জবালােকর সবরে কহিল, “তবে রাজরাণী, কোথায় যাওয়া হইয়াছিল ?” রমণী অতি মন্দাবরে দাৰ্চৰ্য সহকারে কহিল, “জল আনিতে গিয়াছিলাম।” যথায় সলামী তাঁহাকে দাঁড়াইতে বলিয়াছিল। তিনি তথায় চিত্ৰাপিত পত্তলিকার নায় অঙ্গপন্দিতকায় দাঁড়াইয়া ছিলেন। রাজমোহন ব্যঙ্গ করিয়া কহিল, “জাল আনিতে গিয়াছিলে ? কাকে বলে গিছালে ייל “কাহারেও বলে যাই নাই।” রাজমোহন আর ক্ৰোধপ্রবাহ সম্বরণ করিতে পারিল না, চিৎকার স্বরে কহিল, “কারেও বলে যাও নাই- অামি দশ হাজার বার বারণ করেছি না ?” অবলা পৰিব্যমত মন্দভাবে কহিল “করেছ।” “তবে গেলি কেন হারামজাদি ৷ ” রমণী অতি গন্বিত বচনে কহিল, “আমি তোমার সন্ত্রী।” তাঁহার মাখ আরক্ত হইয়া উঠিল, কশঠস্বর বদ্ধ হইয়া আসিতে লাগিল । “গেলে কোন দোষ নাই বলিয়া গিয়াছিলাম।” অসমসাহসের কথা শনিয়া রাজমোহন একেবারে অগ্নিসম হইয়া উঠিলেন: বাজনাদবৎ চিৎকারে কহিলেন, “আমি তোকে হাজার বার বারণ করেছি কি না ? এবং ব্যান্ত্রবৎ। লম্পাফ দিয়া চিত্ৰপাত্তলিসম স্থিররপিণী সাধবীর কোমল কর বজ্ৰমণ্টে এক হস্তে ধরিয়া প্রহরার্থ দ্বিতীয় হস্ত উত্তোলন করিলেন।” অবলাবালা কিছ বঝিলেন না; প্ৰহারোদ্যত হস্ত হইতে একপদও সরিয়া গেলেন না, কেবল এমন কাতর চক্ষে সত্ৰী-ঘাতকের প্রতি চাহিয়া রহিলেন যে, প্রহারকের হস্ত যেন মন্ত্ৰমন্ধে রহিল। ক্ষণেক নীরব হইয়া রহিয়া রাজমোহন পত্নীর হস্ত ত্যাগ করিল; কিন্তু তৎক্ষণাৎ পাকবািমত বজ্ৰনিনাদে কহিল, “তোরে লাথিয়ে খন করব।” তথাপি তিরস্কৃতা কোন উত্তর করিল না, কেবল চক্ষে অবিরল জলধারা বিগলিত হইতেছিল। ঈদশী মানসিক যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করতে দেখিয়া নিম্ঠর কিঞ্চিৎ আদ্র হইল। সহধৰ্ম্মিণীর অচলা সহিষ্ণুতা দলেট প্ৰহারোদমে বিতথ্যপ্ৰযত্ন হইলেন বটে, কিন্তু রসনাগ্রে অবাধে বীজতাড়ন হইতে লাগিল। সে মধমাখা শব্দাবলী এ স্থলে উদ্ধত করিয়া পাঠকের কণা পীড়ন করা অবিধেয়। ধীরা সকলই নীরবে সহ্য করিল। ক্রমে রাজমোহনের প্রচন্ডতা খন্ধব হইয়া আসিল; তখন প্রাচীনা পিসীর একটি সাহসী হইল। তিনি ধীরে ধীরে ভ্রাতুষ্পপত্র-বধর কর ধারণপক্ষািবক তাঁহার গহাভ্যন্তরে লইয়া গেলেন।; এবং যাইতে যাইতে ত্ৰকে দই এক কথা শনাইয়া দিলেন; কিন্তু তাহাও সাবধানে, সাবধানে-সাবধানের মারা নাই। যখন দেখিলেন যে, রাজমোহনের ক্ৰোধ, মন্দীভূত হইয়া আসিয়াছে, তখন বৰ্ষীয়সী একেবারে সর্বীয় কণ্ঠকািপ হইতে প্রচন্ড তিরস্কার উপযক্ত মল্যে প্রতিশোধ দিলেন। রাজমোহন তখন নিজের ক্ৰোধ লইয়া ব্যস্ত, পিসীর মািখনিঃসতে ভাষালালিত্যের বড় রসাসবাদন করিতে পারিলেন না; আর পকেব। সে রস অনেক আসবাদন করা হইয়াছিল, সতরাং তিনি এক্ষণে তাহা অপৰিব বলিয়া বোধ করিলেন না। দই NGO O