পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১০৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙিকম রচনাবলী উপায়াভােব প্রযক্ত মাধব তাহাকে কৃষকের দ্বারা কষণাৰ্থ বহ ভূমি দান করিলেন ; রাজমোহন প্রায় এই কায্যেই ব্যাপােত থাকিতেন। এইরপে মাধবের নিকট শোধনাতীত উপকার প্রাপ্ত হইয়া রাজমোহন কোন অংশে কখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেন না। রাধাগঞ্জে আসা অবধি রাজমোহন, মাধবের প্রতি অপ্ৰীতিসচক এবং অপ্রীতিজনক ব্যবহার করিতে লাগিলেন ; উভয়ের সাক্ষাৎ সম্ভাবনাদি অতি কদাচিৎ সংঘটন হইত। এইরূপে আচরণে মাধব কখন দকপাত করিতেন না-দিকপাত করিলেও তাঁদ্ধেতু বিরক্তি বা বদ্যান্যতার লাঘব জন্মাইত না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, মাতঙ্গিনী ও হেমাঙ্গিন পরস্পর প্রাণ তুল্য ভালবাসিতেন, তথাপি তাঁহাদের প্রায় সাক্ষাৎ হইত না। হেমাঙ্গিনী কখন কখন স্বামীকে অনরোধ করিয়া অগ্রজা সন্নিধানে শিবিকা প্রেরণা করিতেন; কিন্তু রাজমোহন প্রায় মাতঙ্গিনীকে ভগিনীগহে গমন করিতে দিতেন না। হেমাঙ্গিনী মাধবের সত্ৰী হইয়াই বা কিরাপে রাজমোহনের বাটীতে আসেন ? ষািঠ পরিচ্ছেদ এক্ষণে আখ্যায়িকার সত্ৰ পানঃগ্রহণ করা যাইতেছে। পক্ষেপাদ্যান হইতে মাধব বাটীতে প্রত্যাগমন করিলে একজন পত্র-বাহক তাঁহার হস্তে একখানি লিপি প্ৰদান করিল। লিপির শিরোনামার স্থলে “জরুরি।” এই শব্দ দান্টে মাধব ব্যস্ত হইয়া পত্রপাঠে নিযক্ত হইলেন। সদর মোকামে যে ব্যক্তি তাঁহার মোক্তার নিযক্ত ছিল, সেই ব্যক্তি এই পত্র প্রেরণ করিয়াছিল। পত্রের মৰ্ম্মম নিম্নে উদ্ধত হইল - “মহিমাণ বেষ্য অধীন এ মোকামে থাকিয়া হজারের মোকদ্দমা জাতের তদ্বিরে নিযক্ত আছে, এবং তাঁহাতে যেমত যেমত আবশ্যক তাহা সাধ্যমত আমলে আনিতেছে। ভরসা করি সব্বত্র মঙ্গল ঘটনা হইবেক । সম্প্রতি অকস্মাৎ যে এক গোলযোগ উপস্থিত হইয়াছে তাহা হাজারের গোচরে নিবেদন করিতে অধীনের সাহসাভাব। হাজারের শ্ৰীমতী খড়ী ঠাকুরাণীর উকিল হাজারের নামে অদ্য এ মোকামের প্রধান সদর আপিল আদালতে এই দাবিতে মোকদ্দমা রাজা করিয়াছেন যে, রামগোপাল ঘোষ মহাশয়ের উইলনামা সম্পপণ্য মিথ্যা ও তঞ্চক -হািজর কত্ত্বক জাল উইল প্রস্তুত হইয়া বিষয়াদি হইতে তোেহ বেদস্ত হইয়াছেন। অতএব সমেং ওয়াশিলাত তাবৎ বিষযে দখল পাওযার ও উইল রদের দাবি ইত্যাদি।” পত্রী মাধবের হস্তস্খলিত হইয়া ভূপতিত হইল। মনে যে তাঁহার কিরােপ ক্রোধাবিভাব হইল। তাহা বৰ্ণনা করা দক্ষিকরা। বহ ক্ষণ চিন্তার পর পাত্ৰী মাত্তিকা হইতে উত্তোলন করিলেন, এবং ললাটের স্বেদস্নতি করন্দ্বারা বিলপ্ত করিয়া পািনঃপাঠে প্রবত্ত হইলেন। যথা “ইহার ছলাদার কে, তাহা অধীন এ পয্যন্ত জানিতে পারে নাই; কিন্তু অধীন অনেক অন্যাসন্ধান করিতেছে ও করিবেক। ফলে এমত বোধ হয় না যে, বিনা ছলা স্ত্রীলোক। এরপ নালিশ উত্থাপন করবেন। অধীন অদ্য পরম্পরায় শ্রত হইল যে, কোনও অতি প্রধান ব্যক্তির কুপরামর্শমতে এ ঘটনা উপস্থিত হইয়াছে।” মাধব মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন যে, এমত ব্যক্তি কে, যে কৃপরামর্শ দিয়াছে ? মাধব অনেক ভাবিয়া কিছই স্থির করিতে পারিলেন না। কখন একজন প্রতিযোগী প্রতিবাসীর প্রতি সন্দেহ, কখনও বা অপরের প্রতি সন্দেহ করিতে লাগিলেন; কিন্তু কোনও সন্দেহ সমােলক বলিয়া বোধ হইল না। পত্রপাঠে পানঃপ্রবত্ত হইলেন :- “অধীনের বিবেচনায় হজারের কোনও শঙ্কা নাই, কেন না, যতো ধৰ্ম্মঃ ততো জয়'। কিন্তু য্যেরপ বিপক্ষের সহায় দেখা যাইতেছে, তাহাতে শতক তার আবশ্যক।-বাবদিগের এক্ষণে ওকালতনামা দেওয়া আবশ্যক-পশ্চাৎ সময়ে সময়ে সদর হইতে উকীল কোন্সিলী আনান কত্তব্য হইবেক। তৎপক্ষে হাজারের যেমন মরজি। আজ্ঞাধীন প্রাণপণে হাজারের কায্যে নিযক্ত রহিল-সাধ্যানসারে ত্রটি করিবেক না। ইতি তারিখ আজ্ঞানবেত্তী শ্ৰীহরিদাস রায়।” SOO8