পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমার ধানে মিলাইল বিধি। মণি নাও মাণিক নাও যে হার করে গলে পরি ফল নও যে কেশের করি বেশ। নারী না করিত বিধি, তোমা হেন গাণনিধি, লইয়া ফিরিতাম দেশ দেশ৷ ব’ধ তোমায় যখন পড়ে মনে, আমি চাই বলন্দাবন পানে, ধায়ার ছলনা করি। কাঁদি।” মিল ত চমৎকার, “দেখি” আর “বিধি” মিলিল! কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায়, এইরপ মোহ মন্ত্র আর একটি শনিব, মনে বড় সাধ রহিয়াছে। যখনই এই গান প্রথম কণী ভরিয়া শনিয়াছিলাম, মনে হইয়াছিল, নীলাকাশতলে ক্ষদ্র পক্ষী হইয়া এই গীত গাই—মনে হইয়াছিল, সেই বিচিত্র d কবির সন্টি দৈববংশী লইয়া, মেঘের উপর যে বায়স্তর—শব্দশান্য, দশ্যশান্য, পথিবী যেখান হইতে দেখা যায় না, সেইখানে বসিয়া, সেই মরলীতে, একা এই গীত গাইএই গীত কখন ভুলিতে পারিলাম না; কখন ভুলিতে পারিব না। “এসো এসো বাঁধ এসো”* লোকের মনে কি আছে বলিতে পারি না, কিন্তু আমি কমলাকান্ত চক্রবত্তী, বঝিতে পারি না। যে, ইন্দ্ৰিয়-পরিতৃপ্তিতে কিছ সখি আছে। যে পশ, ইন্দ্ৰিয়-পরিতৃপ্তি জন্য পরসন্দশনের আকাঙক্ষী, সে যেন কখন কমলাকান্ত শৰ্ম্মার দপ্তর-মক্তাবলী পড়িতে বসে না। আমি বিলাসপ্রিয়ের মাখে, “এসো এসো বাঁধ এসো” বঝিতে পারি না। কিন্তু ইহা বঝিতে পারি যে, মনষ্যে মনষ্যের জন্য হইয়াছিল—এক হৃদয় অন্য হৃদয়ের জন্য হইয়াছিল-সেই হৃদয়ে হৃদয়ে সংঘাত, হৃদয়ে হৃদয়ে মিলন, ইহা মনষ্যে-জীবনের সখ্য। ইহজন্মে মনষ্যহীদয়ে একমাত্র তৃষা, অন্যহৃদয়কামনা। মনষ্যহাদয় অনবরত হৃদয়ান্তরে ডাকিতেছে, “এসো এসো বাঁধ এসো।” ক্ষদ্র ক্ষদ্র প্রবত্তিসকল শরীর রক্ষার্থী-মহতী প্রবত্তিসকলের উদ্দেশ্য, “এসো এসো বাঁধ এসো।” তুমি চাকরি কর, খাইবার জন্য-কিন্তু যশের আকাঙক্ষা কর, পরের অন্যরাগ লাভ করিবার জন্য, জনসমাজের হৃদয়কে তোমার হৃদয়ের সঙ্গে মিলিত করিবার জন্য। তুমি যে পরোপকার কর, সে পরের হৃদয়ের ক্লেশ আপনি হৃদয়ে অনভূত কর বলিয়া। তুমি যে রাগ কর, সে তোমার মনোমত কাৰ্য হইল না বলিয়া; হৃদয়ে হৃদয় আসিল না বলিয়া। সব্বত্র এই রব-“এসো এসো বাঁধ এসো।” সৰুবকম্পেমর এই মন্ত্র, “এসো এসো বাঁধ এসো।” জড় জগতের নিয়ম আকর্ষণ। বহিৎ গ্রহ উপগ্রহকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বাঁধ এসো।” সৌরপিন্ড বহৎ গ্রহকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বন্ধ এসো।” জগৎ জগদীন্তরকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বাঁধ এসো।“ পরমাণ পরমাণকে অবিরত ডাকিতেছে, “এসো এসো বাঁধ এসো।” জড়পিন্ডসকল, গ্রহ উপগ্ৰহ ধমকেতু-সকলেই এই মোহমন্ত্রে বাঁধা পড়িয়া ঘরিতেছে। প্রকৃতি পরিষকে ডাকিতেছে, “এসো এসো বাঁধ এসো।” জগতের এই গম্ভীর অবিশ্রান্ত ধবনি-“এসো এসো বাঁধ এসো।” কমলাকান্তের বাঁধ কি আসিবে ? “আধা অচিরে বসে।” এই তুশশল্পসমাচ্ছন্ন, কণ্টকাদিতে ককাশ সংসারারণ্যে, হে বাঞ্ছিত! তোমাকে আর কি আসন দিব, আমার এই হৃদয়াবরণের অদ্ধোকে উপবেশন কর। কুশকণ্টকাদি হইতে তোমার আচ্ছাদন জন্য আমি এই আপন অঙ্গ অনাবিত করিতেছি-আমার অচিরে বসো। যাহাতে আমার লজােরক্ষা, মানরক্ষা, যাহাতে আমার শোভা, হে মিলিত ! তুমিও তাহার অদ্ধেক গ্ৰহণ করাআধা অচিরে বসে। হে পরের হৃদয়, হে সন্দর, হে মনোরঞ্জন, হে সখেদা! কাছে এসো, আমাকে সপশ করা, আমি তোমাতে সংলগ্ন হইব-দরে আসনগ্রহণ করিও না-এই আমার শরীরলগ্ন

  • পাঠককে গীতের সঙ্গে মিলাইয়া দেখিতে হইবে।

ԵՀ