পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଏଣ୍ଡ୍ଟାବ୍ଦାର୍ଥୁ যৌবনের আখিরি করিয়া ফারখতি লাইতে পারি নাই। তাহার উপর মহাজনেরও ধারি ; উপর পাটনির কড়ি সংগ্ৰহ করিবার সময় আসিল। আমার এমন দঃখের সময়ের দটাে কথা বলিব, তোমরা যৌবনের সখ ছাড়িয়া কি একবার শনিবে না ? আগে আসল কথাটা মীমাংসা করা যাউক-আমি কি বড়ো ? আমি আমার নিজের কথাই বলিতেছি। এমত নহে, আমি বড়া, না হয় যােবা, দইয়ের এক স্বীকার করিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু যাঁহারই বয়সটা একটি দোটােনা রকম-যাঁরই ছায়া পািব্বদিকে হেলিয়াছে, তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করি, মীমাংসা করন দেখি, আপনি কি বড়ো। আপনার কেশগলি, হয়ত আজিও অনিন্দ। ভ্ৰমরকৃষ্ণ, হয়ত আজিও দন্তসকল অবিচ্ছিন্ন মক্তােমালার লজজাস্থল, হয়ত আপনার নিদ্ৰা অদ্যপি এমন প্রগাঢ় যে, দ্বিতীয় পক্ষের ভাষ্যাও তােহা ভাঙ্গিতে পারে না। ;-তথাপি, হয়ত আপনি প্রাচীন। নয়ত, আপনার কেশগলি শাদা কালোয় গঙ্গা যমনা হইয়া গিয়াছে, দশন মক্তাপাতি ছিড়িয়া গিয়াছে, দই একটি মক্তা হারাইয়া গিয়াছে—নিদ্রা, চক্ষর প্রতারণামাত্র, তথাপি আপনি যােবা। তুমি বলিবে ইহার অর্থ, “বয়সেতে বিজ্ঞ নহে, বিজ্ঞ হয় জ্ঞানে।” তাহা নহে-আমি বিজ্ঞতার কথা বলিতেছি না, প্রাচীনতার কথা বলতেছুি। প্রাচীনতা বয়সেরই ফল, আর কিছরই নহে। ধাতুবিশেষে কিছ তারতম্য হয়, কেহ চল্লিশে বড়া, কেহ বিয়াল্লিশে যােবা। কিন্তু তুমি কখন দেখিবে না যে, বয়সের অধিক তারতম্য ঘটে। যে পায়তাল্লিশে যােবা বলাইতে চায়, সে হয় যম-ভয়ে নিতান্ত ভীত, নয়। তৃতীয় পক্ষে বিবাহ করিয়াছে; যে পায়ত্ৰিশে বড় বলাইতে চায়, সে হয় বড়াই ভালবাসে, নয় পীড়িত, নয় কোন বড় দঃখে দঃখী। কিন্তু এই আদ্ধেক পথ অতিবাহিত করিয়া, প্রথম চসমাখানি হাতে করিয়া রােমাল দিয়া মছিতে মাছিতে ঠিক বলা দায় যে, আমি বড়ো হইয়াছি কি না! বঝি বা হইয়াছি। বঝি হই নাই। মনে মনে ভরসা আছে, একটা চক্ষর দোষ হউক, দই এক গাছা চুল পাকুক, আজিও প্রাচীন হই নাই। কই, কিছ. ত প্রাচীন হয় নাই! এই চিরপ্রাচীন ভুবনমণ্ডডাল ত আজিও নবীন ; আমার প্রিয় কোকিলের সবর প্রাচীন হয় নাই; আমার সৌন্দৰ্য্য-মাখা, হীরা বসান, গঙ্গার ক্ষদ্র তরঙ্গভঙ্গ ত প্রাচীন হয় নাই; প্ৰভাতের বায়, বকুল কামিনীর গন্ধ, বক্ষের শ্যামলতা, এবং নক্ষত্রের উত্তজবলতা, কেহ ত প্রাচীন হয় নাই—তেমনই সন্দের আছে। আমি কেবল প্রাচীন হইলাম ? আমি এ কথায় বিশ্বাস করিব না। পথিবীতে উচ্চ হাসি ত আজিও আছে, কেবল আমার হাসির দিন গেল ? পথিবীতে উৎসাহ, ক্রীড়া, রঙ্গ, আজিও তেমনি অপৰ্য্যাপ্ত, কেবল আমারই পক্ষে নাই ? জগৎ আলোকময়, কেবল আমারই রাত্ৰি আসিতেছে ? সলমন কোম্পপানির দোকানে বজাঘাত হউক, আমি এ চসােমা ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আমি বড়ো বয়স স্বীকার করিব না। তব আসে-ছাড়ান যায় না। ধীরে ধীরে দিনে দিনে পলে পলে বয়শেচার আসিয়া, এ দেহপরে প্রবেশ করিতেছে—আমি যাহা মনে ভাবি না কেন, আমি বড়ো, প্রতি নিশ্বাসে তাহা জানিতে পারিতেছি। অন্যে হাসে, আমি কেবল ঠোঁট হেলাইয়া তাহাদিগের মন রাখি। অন্যে কাঁদে, আমি কেবল লোকলজীয় মাখ ভার করিয়া থাকি-ভাবি, ইহারা এ ব্যথা কালাহরণ করিতেছে কেন ? উৎসাহ আমার কাছে পাগডশ্রম-আশা। আমার কাছে আত্মপ্রতারণা। কই, আমার ত আশা ভরসা কিছ নাই! কই—দর হউক, যােহা নাই তাহা আর খাজিয়া কাজ নাই। খাজিয়া দেখিব কি ? যে কুসমদাম এ জীবনকানন আলো করিত, পথিপাশ্বে একে একে তাহা খসিয়া পড়িয়াছে। যে মখমন্ডলসকল ভালবাসিতাম, একে একে অদশ্য হইয়াছে, না হয় রৌদ্রবিশস্ত্ৰক বৈকালের ফলের মত শকাইয়া উঠিয়াছে। কই, আর এ ভগ্নমন্দিরে, এ পরিত্যক্ত নাট্যশালায়, এ ভাঙ্গা মজলিসে সে উত্তজবল দীপাবলী কই ? একে একে নিবিয়া যাইতেছে। কেবল মািখ নহে-হৃদয়। সে সরল, সে ভালবাসাপরিপািণ, সে বিশ্বাসে দঢ়, সৌহান্দের্ঘ্য স্থির, অপরাধেও প্রসন্ন, সে বন্ধহোদয় কই ? নাই। কার দোষে নাই ? আমার দোষে নহে। বন্ধর দোষে নহে । বয়সের দোষে অথবা যমের দোষে । তাতে ক্ষতি কি ? একা আসিয়াছি, একা। যাইব-তাহার ভাবনা কি ? এ লোকালয়ের সঙ্গে আমার বনিয়া উঠিল না-আচ্ছা-রোখশোধ। পথিবী! তুমি তোমার নিয়মিত পথে আবৰ্ত্তন তাহাতে, হে মণিময়ি জড়পিন্ডগৌরব-পীড়িতে বসন্ধারে! তোমারই বা ক্ষতি কি, আমারই বা ՀՀ-Գ SC