পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बच्किम ब्राध्नावणौं সাহেব হরিকুম দিলেন, কিন্তু পলিশের নামে পরওয়ানাখানি লেখা আর হয় না। পরওয়ানা লেখা মচিরামের হাত। পরওয়ানা যাইতে যাইতে ধান থাকে না; ফেলা মচিরামকে এক টাকা, দাই টাকা, তিন টাকা, ক্রমে পাঁচ টাকা স্বীকার করিল-তৎক্ষণাৎ পরওয়ানা বাহির হইল। তখন মাজিস্ট্রেটেরা স্বহস্তে জোবানবন্দী লাইতেন না-এক কোণে বসিয়া এক একজন মহরি ফিসফিস করিয়া জিজ্ঞাসা করিত, আর যাহা ইচ্ছা তাহা লিখিত। সাক্ষীরা এক রকম বলিত, মচিরাম আর এক রকম জোবানবন্দী লিখিতেন, মোকদ্দমা বঝিয়া ফি সাক্ষ্য-প্রতি চারি। আনা, আট-আনা, এক টাকা পাইতেন। মোকদ্দমা বঝিয়া মচি দাঁও মারিতেন; অধিক টাকা পাইলে সব উলটা লিখিতেন। এইরূপে নানাপ্রকার ফিকির ফন্দীতে মচিরাম অনেক টাকা উপাত্তজন করিতে লাগিলেন--তিনি একা নহেন, সকলেই কারিত—তবে মচি কিছর অধিক নিলািজ-কখন কখন লোকের টেক হইতে টাকা কাড়িয়া লইতে। যাই হোক, মচি শীঘ্রই বড়মানষি হইয়া উঠিল—কোন মচি না হয় ?-অচিরাং সেই অকৃতনাম্পানী প্রতিবাসিনী সাবর্ণালঙ্কারে ভূষিতা হইল। মদ, গাঁজা, গলি, চরস, আফিঙ্গযাহার নাম করিতে আছে এবং যাহার নাম করিতে নাই-সকলই মচিবাবার গহকে অহনিশি আলোক ও ধর্মময় করিতে লাগিল। মচিরামের চেহারা ফিরিতে লাগিল—গালে মাস লাগিল -হাড় ঢাকিয়া আসিল-বণ জাপান লেদার ছাড়িয়া দিল্লীর নাগরায় পৌছিল। পরিচ্ছদের মচিরাম সব্বদা রঞ্জিত। রাত্রি দিন মাথায় তেড়ি কাটা, অধরে তাম্পবলের রাগ এবং কণ্ঠে নিধর টপা। সতরাং মচিরামের পোয়া বারো। দোষের মধ্যে সাহেব বড় খিটখিট করে। মচিরাম একে ঘোরতর বোকা, কোন কম্পমই ভাল করিয়া করিতে পারিত না, তাহাতে আবার দািক্তজয় লোভ-সকল-তাতে মচিরাম গালি খাইত। সাহেবাটাও বড় বদরাগী-অনেক সময়ে মচিরামকে কাগজপত্র ছড়িয়া মারিত। সাহেবের ভিতরে ভিতরে হৃদয়ে দয়া ছিল--নচেৎ মচিরামের চাকরী অধিক কাল টিকিত না। সৌভাগ্যক্রমে সে সাহেব বদলি হইয়া গেল-আর একজন আসিল । এই নািতন সাহেবটির নাম (Grongerham) লিখিবার সময়ে লোকে লিখিত গ্ৰঙ্গারহ্যাম -বলিবার সময়ে বলিত গঙ্গারাম সাহেব। গঙ্গারাম সাহেব অতি ভদ্রলোক, দয়ার সাগর, কাহারও কোন অনিস্ট করিতেন না, মোকদ্দমা করিতে গিয়া, কেবল ডিসমিস করিতেন। তবে সাহেব কিছল অলস, কাজ কম্পেম বড় মন দিতেন না, এবং নিজে সরল বলিয়া তাঁবেদারদিগের উপর বড় বিশ্বাস ছিল। সকল কম্পেমার ভার সেরেস্তাদার এবং হেড কেরাণীর উপর ছিল। যত দিন সাহেব ঐ জেলায় ছিলেন, একদিনের জন্য একখানি চিঠি স্বহস্তে মশাবিদ্যা করেন নাই-হেড কেরাণী সব কারিত। সাহেব প্রথম আসিয়া, মচিরামের কালোকালো নধর সচিকুণ শরীরটি দেখিয়া, এবং তাহার আভূমিপ্রণত ডবল সেলাম দেখিয়া নিজের সরলচিত্তে একেবারে সিদ্ধান্ত করিলেন যে, আপিসের মধ্যে এই সব্বাপেক্ষা উপযক্ত লোক। সে বিশ্বাস তাঁহার কিছতেই গেল না। যাইবারও কোন কারণ ছিল না-কেন না, কাজকম্পেমর তিনি খবর রাখিতেন না। একদিন আপিসের মীর মন্সী মিরজা গোলাম সফদর খাঁ সাহেব, দনিয়াদারি নামাফিক মনে করিয়া ফৌত করিলেন। সাহেব পরদিনেই মচিরামকে ডাকিয়া তৎপদে অভিষিক্ত করিলেন। মীর মন্সীর বেতন কুড়ি টাকাকিন্তু বেতন কি করে ? পদটি রধিরে পরিপ্লত। অজরামরবৎপ্রাজ্ঞ মচিরাম শম্পমা রচিরসঞ্চয় করিতে লাগিলেন। দোষ কি ? অজারামরবৎপ্রাজ্ঞ বিদ্যামর্থক চিন্তয়েৎ । দইটা একজনে পারে না-মচিরাম বিদ্যাচিন্তা করিতে সক্ষম নহেন; কোঠীতে তাহা লেখে না-অতএব বিষ্ণশম্পমার উপদেশানসারে মন্ত্যুভয় রহিত হইয়া তিনি অর্থ চিন্তায় প্রবত্ত। যদি সেই “হিতোপদেশ”গিলি অধীত হইবার যোগ্য হয়-যদি সে গ্রন্থ এই উনবিংশ শতাব্দীতেও পাজার যোগ্য হয়-তবে মচিরামও প্রাজ্ঞ, আর এ দেশের সকল মচিই প্রাজ্ঞ । বিষ্ণশৰ্ম্মমা ভারতবষের মাকিয়াবেল্লি-চাণক্য ভারতের রোশফািকল। যাহারা এইরুপ গ্রন্থ করা। তাহদের শিক্ষা হয় নাই। dd