পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মচিরাম গড়ের জীবনচরিত নবম পরিচ্ছেদ ভদ্রকালীর দ্বাদশ বৎসর বয়সে বিবাহ হয়-মচিরামের এমনই অদ্যান্ট-বিবাহের পর দই বৎসরের মধ্যেই ভদ্রকালী চৌদ্দ বৎসরের হইল। চৌদ্দ বৎসরের হইয়াই ভদ্রকালী ভজগোবিন্দের একটি চাকরির জন্য মচিরামের উপর দৌরাত্ম্য আরম্ভ করিল, সতরাং মচিরাম চেণ্টা চরিত্র করিয়া ভজগোবিন্দের একটি মহরিাগিরি করিয়া দিলেন। ইহাতে মচিরাম কিছ বিপন্ন হইলেন। এক্ষণে ভজগোবিন্দের নিজের কাজ হইল-সে মনোযোগ দিয়া নিজের কাজ করে; মচিরামের কাজ করিয়া দিবার তাহার তত অবকাশ থাকে না। ভজগোবিন্দ সপাত্ৰ-শীঘ্রই হোম সাহেবের প্রিয়পাত্র হইল। মচিরামের কাজের যে সকল ত্রটি হইতে লাগিল, হোম সাহেব তাহা দেখিয়াও দেখিতেন না। আভূমিপ্রণত সেলাম এবং মাই লাড বলির গণে সে সকলের প্রতি অন্ধ হইয়া রহিলেন। মচিরামের প্রতি তাঁহার দয়া অচলা রহিল। দভাগ্যবশতঃ সময়ে হোম সাহেব বদলি হইয়া গেলেন, তাঁহার স্থানে রীড সাহেব আসিলেন। রীড অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি। অতি অলপ দিনেই বঝিলেন-মচিরাম একটি ব্যক্ষভ্রন্ট বানর-অকমা অথচ ভারি রকমের ঘষখোর। মচিরামকে আপিস হইতে বহিস্কৃত করা মনে স্থির করিলেন। কিন্তু রীড সাহেব যেমন বিচক্ষণ, তেমনি দয়াশীল ও ন্যায়বান; সে কালের হেলীবরির সিবিলিয়ান সাহেবরা বাঙ্গালী দিগকে পত্রের মত স্নেহ করিতেন। মিছে ছত ছলে কাহাকে অন্নহীন করিতে রীড সাহেব নিতান্ত অনিচ্ছােক ; কাহাকে একেবারে অন্নহীন করিতে অনিচ্ছক। মচিরাম যে বিপল ভূসম্পত্তি করিয়াছে।-রীড সাহেব তাহা জানিতে পারেন নাই। রীড সাহেব মচিরামকে দই একবার ইস্তেফা দিতে বলিয়াছিলেন বটে, কিন্তু মচিরাম চোখে জল আনিয়া দই চারি বার “গরীব খােনা বেগর মারা যায়েগা” বলতে তিনি নিরস্ত হইয়াছিলেন। তারপর, তাহাকে পেস্কারির তুল্য বেতনে আবকারির দারোগাই দিতে চাহিয়াছিলেনঅন্যান্য মফস্বলি চাকরি করিয়া দিতে চাহিয়াছিলেন,-কিন্তু আবার মচিরাম চোখে জল আনিয়া বলে যে, আমার শরীর ভাল নহে, মফস্বলে গেলে মরিয়া যাইব-হাজারের চরণের নিকট থাকিতে চাই। সতরাং দয়ালচিত্ত রীড সাহেব নিরস্ত হইলেন। কিন্তু তাহাকে লইয়া আর কাজও চলে না। অগত্যা রীড সাহেব মচিরামকে ডিপটি কালেক্টর করিবার জন্য গবৰ্ণমেন্টে রিপোর্ট করিলেন। সেই সময়ে হোম সাহেব বাঙ্গাল আপিসে সেক্রেটারি ছিলেন-রিপোর্ট পৌছিবামাত্র মচিরাম ডিপটি বাহাদারিতে নিযক্ত হইলেন। রীড সাহেব ইহাতে বিজ্ঞ লোকের মতই কাজ করিয়াছিলেন। তিনি বিলক্ষণ জানিতেন যে, ভারি ঘষখোরেও ডিপটি হইলেই ঘষে খাওয়া ত্যাগ করে; ডিপটিগিরি এক প্রকারে আমলাদিগের বৈধব্য-বিধবা হইলে আর মাছ খাইতে নাই। আর মচিরাম যে মািখ, তাহাতে কিছ আসিয়া যায় না; সেরাপ অনেক ডিপটি আছে; ডিপটিগিরিতে বিদ্যাবদ্ধির বিশেষ প্রয়োজন দেখা যায় না। অতএব রীড সাহেব লোকহিতার্থ মচিরামকে ডিপটি করিবার জন্য রিপোর্ট করিয়াছিলেন। আপিসে সম্পবাদ পৌছিল যে, মচিরামের উচ্চ পদ হইয়াছে। একজন বড়া মহরি ছিল, সে বড় সাধভাষা বঝিত না। “উচ্চ পদ” শনিয়া সে বলিল, “কি ? ঠ্যাঙ্গ উচু করেছেন না কি ? ভাগাড়ে দিয়া আইবা।” দশম পরিচ্ছেদ মচিরামের মাথায় বজ্ৰাঘাত হইল। তিনি পেস্কারিতে ঘষা লইয়া অসংখ্য টাকা রোজগার করেন-আড়াই শত টাকার ডিপটিগিরিতে তাঁহার কি হইবে ? মচিরাম সিদ্ধান্ত করিলেনডিপটিগিরি অস্বীকার করবেন। কিন্তু ভজগোবিন্দ বাবাইলেন যে, অস্বীকার করিলে রীড় সাহেব নিশ্চয় বঝিবে যে, মচিরাম ঘষের লোভে পেস্কারি ছাড়িতেছে না।--তাহা হইলে শীঘ্রই তাড়াইয়া দিবে। তখন দই দিক যাইবে। অগত্যা মচিরাম ডিপটিগিরি স্বীকার করিলেন। মচিরাম ডিপটি হইয়া প্রথম রাবকারী দস্তখতকালীন পড়িয়া দেখিলেন, লেখা আছে, NO RNS