পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী পথিবীর বাস্পীয়াবরণই দেখিতে পায়; পথিবী তাহাদিগের প্রায় অদশ্য। তদুপ। আমরাও বহিস্পতি প্রভৃতি গ্ৰহগণের রৌদ্রপ্রদীপ্ত, রৌদ্রপ্রতিঘাতী, বাষ্পপীয় আবরণ দেখিতে পাই। আধনিক জ্যোতিবিদগণের এইরূপ অন্যমান। এইরূপ পথিবী হইতে সম্পবিন্ধ রহিত হইয়া, মেঘময় জগতের উপরে স্থিত হইয়া দেখা যায় যে, সব্বত্র জীবশনা, শব্দশনা, গতিশন্য, স্থির, নীরব। মস্তকোপরে আকাশ অতি নিবিড় নীল -সে নীলিমা আশ্চৰ্য্য। আকাশ বস্তুতঃ চিরান্ধকার-উহার বর্ণ গভীর কৃষ্ণ। অমাবস্যার রাত্রে প্রদীপশান্য গহমধ্যে সকল দ্বার ও গবাক্ষ রদ্ধ করিয়া থাকিলে যেরপ অন্ধকার দেখিতে পাওয়া যায়, আকাশের প্রকৃত বণ তাহাই।। তন্মধ্যে স্থানে স্থানে নক্ষত্ৰসকল প্রচন্ড জবালাবিশিস্ট। কিন্তু তদালোকে অনন্ত আকাশের অনন্ত অন্ধকার বিনম্ৰাট হয় না-কেন না, এই সকল প্ৰদীপ৷ বহন্দরেস্থিত। তবে যে আমরা আকাশকে অন্ধকারময় না দেখিয়া উক্তজবল দেখি, তাহার কারণ বায়। সকলেই জানেন, সয্যালোক সপ্তবর্ণময়। সফটিকের দ্বারা বর্ণগলি পথক করা যায়সপ্ত বণের সংমিশ্রণে সৰ্য্যোলোক। বায় জড় পদাৰ্থ, কিন্তু বায় আলোকের পথ রোধ করে না। বায় সয্যালোকের অন্যান্য বর্ণের পথ ছাড়িয়া দেয়, কিন্তু নীলবণকে রদ্ধ করে। রাদ্ধ বণ, বায় হইতে প্রতিহত হয়। সেই সকল প্রতিহত বণাত্মক আলোক-রেখা আমাদের চক্ষতে প্রবেশ করায়, আকাশ উত্তজবল নীলিমাবিশিস্ট দেখি-অন্ধকার দেখি না।* কিন্তু যত উদ্ধের্ব উঠা যায়, বায়ন্তির তত ক্ষীণতর হয়, গাগনিক উত্তজবল নীলবৰ্ণ ক্ষীণতর হয়; আকাশের কৃষ্ণত্ব কিছ কিছ: সেই আবরণ ভেদ করিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। এই জন্য উদ্ধবালোকে গাঢ় নীলিমা। শিরে এই গাঢ় নীলিমা-পদতলে, তুঙ্গ শঙ্গবিশিস্ট পর্বতমালায় শোভিত মেঘলোক-সে পৰ্ব্ববতমালাও বাষ্পপীয়-মেঘের পািব্বত-পৰ্ব্বতের উপর পািব্বত, তদ্যুপরি আরও পব্বত-কেহ বা কৃষ্ণমধ্য, পাশ্বদেশ রৌদ্রের প্রভাবিশিষট-কেহ বা রৌদ্রস্নাত, কেহ যেন শ্বেত প্ৰস্তুর-নিশ্চিমত, কেহ যেন হীরক-নিশ্চিমত। এই সকল মেঘের মধ্য দিয়া ব্যোমযান চলে। তখন, নীচে মেঘ, উপরে মেঘ, দক্ষিণে মেঘ, বামে মেঘ, সম্মখে মেঘ, পশ্চাতে মেঘ। কোথায় বিদ্যুৎ চমকিতেছে, কোথাও ঝড় বহিতেছে, কোথাও বলিষ্ট হইতেছে, কোথাও বরফ পড়িতেছে। মসরে ফনবিল একবার একটি মেঘগভস্থ রন্ধু দিয়া ব্যোমযানে গমন করিয়াছিলেন; তাঁহার কৃত বণনা পাঠ করিয়া বোধ হয়, যেমন মঙ্গেরের পথে পর্বতমধ্য দিয়া বাহুপৰীয় শকট গমন করে, তাঁহার ব্যোমযান মেঘমধ্য দিয়া সেইরােপ পথে গমন করিয়াছিল। এই মেঘলোকে সৰ্য্যোদয় এবং সােয্যাস্ত অতি আশ্চৰ্য্য দশ্য-ভূলোকে তাহার সাব্দশ্য অনমিত হয় না। ব্যোমযানে আরোহণ করিয়া অনেকে এক দিনে দাইবার দােয্যাস্ত দেখিয়াছেন। এবং কেহ কেহ এক দিনে দাইবার সায্যোদয় দেখিয়াছেন। একবার সােয্যাস্তের পর রাত্রিসমাগম দেখিয়া, আবার ততোধিক উদ্ধের্ব উঠিলে দ্বিতীয় বার সৰ্য্যোস্ত দেখা যাইবে এবং একবার সহযোদয় দেখিয়া, আবার নিমেশন নামিলে সেই দিন দ্বিতীয় বার সায্যোদয় অবশ্য দেখা যাইবে। ব্যোমযান হইতে যখন পথিবী দেখা যায়, তখন উহা বিস্তৃত মানচিত্রের ন্যায় দেখায়; সৰ্ব্বত্র সমতল-অট্টালিকা, বক্ষ, উচ্চভূমি এবং অলেপান্নত মেঘও, যেন সকলই অনাচ, সকলই সমতল, ভূমিতে চিত্রিতাবৎ দেখায়। নগর সকল যেন ক্ষদ্র ক্ষদ্র গঠিত প্রতিকৃতি, চলিয়া যাইতেছে বোধ হয়। বহৎ জনপদ উদ্যানের মত দেখায়। নদী শ্বেত সত্ৰ বা উরগের মত দেখায়। বহৎ আণবিদ্যানসকল বালকের ক্রীড়ার জন্য নিশ্চিমত তরণীর মত দেখায়। যাঁহারা লন্ডন বা প্যারিস নগরীর উপর উত্থান করিয়াছেন, তাঁহারা দশ্য দেখিয়া মন্বন্ধ হইয়াছেন-তাঁহারা প্রশংসা করিয়া ফরাইতে পারেন নাই। গ্রেশর সাহেব লিখিয়াছিলেন যে, তিনি লন্ডনের উপরে উঠিয়া এককালে ত্ৰিশ লক্ষ মনয্যের বাস-গহ নয়নগোচর করিয়াছিলেন। রাত্রিকালে মহানগরীসকলের রাজপথস্থ দীপমালাসকল অতি রমণীয় দেখায়। যাঁহারা পািবতে আরোহণ করিয়াছেন, তাঁহারা জানেন যে, যত উদ্ধেৰ উঠা যায়, তত তাপের অলপতা। শিমলা, দারাজিলিং প্রভৃতি পান্বত্য স্থানের শীতলতার কারণ এই, এবং এই জন্য হিমালয় তুষারমন্ডিত। (আশ্চিয্যের বিষয় যে, হিমকে ভারতবষীয় কবি “একো হি দোষো

  • কেহ কেহ বলেন যে, বায়মধ্যস্থ জলবাপ হইতে প্রতিহত নীল রাশিমরেখাই আকাশের উতজৰল নীলিমার কারণ।

Sy