পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী উপরে উঠিলে পর, তাঁহার দন্টি অস্পষ্ট হইয়া আইসে। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি আর তাপমান যন্ত্রের পারদ-স্তম্ভ অথবা ঘড়ির কাঁটা দেখিতে সক্ষম হইলেন না। টেবিলের উপর এক হাত রাখিলেন। যখন টেবিলের উপর হাত রাখিলেন, তখন হস্ত সক্ষপণ সবল; কিন্তু তখনই সে হােত আর উঠাইতে পারিলেন না।--তাহার শক্তি অন্তহিতা হইয়াছিল। তখন দেখিলেন, দ্বিতীয় হস্তও সেই দশাপন্ন হইয়াছে। অবশ্য। তখন একবার গাত্রালোড়ন করিলেন; গাত্র চালনা করিতে পারিলেন, কিন্তু বোধ হইল, যেন হস্ত-পদাদি নাই। ক্রমে এইরপে তাঁহার সকল অঙ্গ অবশ হইয়া পড়িল ; ভগ্নগ্রীবের ন্যায় মস্তক লম্পিাবত হইয়া পড়িল, এবং দন্টি একেবারে বিলপ্ত হইল। এইরপে তিনি অকস্মাৎ মাতৃত্যুর আশঙ্কা করিতেছিলেন, এমত সময়ে হঠাৎ তাঁহার চৈতন্যও বিলপ্ত হইল। পরে ব্যোমযানের “সারথি” রথ নামাইলে তিনি পনেকবার জ্ঞান প্রাপ্ত হইলেন। রথ নামাইল কি প্রকারে ? ব্যেমযানের গতিও দ্বিবিধ, প্রথম, উদ্ধাব হইতে অধঃ বা অধঃ হইতে উদ্ধর্ব। দ্বিতীয়, দিগন্তরে; যেমন শকটাদি অভিলষিত দিকে যায়, সেইরাপ। ব্যোমবান অভিলষিত দিগন্তরে চালনা করা এ পয্যন্ত মনষ্যের সাধ্যায়ত্ত হয় নাই-চালক মনে করিলে, উত্তরে, পশ্চিমে, বামে বা দক্ষিণে, সম্মখে বা পশ্চাতে যান চালাইতে পারেন না। বায়ই ইহার যথার্থ সারথি, বায়সারথি যে দিকে লইয়া যায়, ব্যোমযান সেই দিকে চলে। কিন্তু উদ্ধর্বাধিঃ গতি মনষ্যের আয়ত্ত। ব্যোমযান লঘা করিতে পারিলেই উদ্ধের্ব উঠিবে এবং পাশ্ববত্তীর্ণ বায়র অপেক্ষা গাের করিতে পারিলেই নামিবে। ব্যোমযানের “রথে” কতকটা বালকা বোঝাই থাকে; তাহার কিয়দংশ নিক্ষিপ্ত করিলেই পািব্বাপেক্ষা লঘতা সম্পাদিত হয়-তখন ব্যোমযান আরও উদ্ধের্ব উঠে। এইরপে ইচ্ছাক্রমে উদ্ধের্ব উঠা যায়। আর যে লঘ বায় কর্তৃক বেলন পরিপরিত থাকায় তাহা গগনমণ্ডলে উঠিতে সক্ষম, তাহার কিয়দংশ নিগত করিতে পারিলেই উহা নামে। ঐ বায়, নিগত করিবার জন্য ব্যোমযানের শিরোভাগে একটি ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্র সচরাচর আব্বত থাকে, কিন্তু তাহার আবরণে একটি দড়ি বাঁধা থাকে; সেই দড়ি ধরিয়া টানিলেই লঘ বায় বাহির হইয়া যায়; ব্যোমযান নামিতে থাকে। দিগন্তরে গতি মনষ্যের সাধ্যায়ত্ত নহে বটে, কিন্তু মনষ্যে বায়ার সাহায্য অবলম্বন করিতে সক্ষম। আশচয্যের বিষয় এই যে, ভিন্ন ভিন্ন স্তরে ভিন্ন ভিন্ন দিগভিমখে বায় বহিতে থাকে। যখন বোমারোহী ভূমির উপরে দক্ষিণ বায় দেখিয়া, যানারোহণ করিলেন, তখনই হয়ত, কিয়ন্দর উঠিয়া দেখিলেন যে, বায় উত্তরে; আরও উঠিলে হয়ত দেখিবেন যে, বায় পকেব, কি পানশ্চ দক্ষিণে ইত্যাদি। কোন স্তরে কোন সময়ে কোন দিকে বায়, বহে, ইহা যদি মনষ্যের জানা থাকিত, তাহা হইলে ব্যোমযান মনষ্যের আজ্ঞাকারী হইত। যাঁহারা সচতুর, তাঁহারা কখন কখন বােয়র গতি অবধারিত করিয়া স্বেচ্ছাক্রমে গগন পৰ্যটন করিয়াছেন। ১৮৬৮ সালের আগস্ট মাসে মসরে তিসান্দর কালে নগর হইতে নেপ্তািন নামক বেলনে গগনারোহণ করেন। চারি হাজার ফিট উদ্ধেব উঠিয়া দেখিলেন যে, তাঁহাদিগের গতি উত্তর সমন্দ্রে। অপরাহ্রে এইরপ তাঁহারা অকস্মাৎ অনিচ্ছার সহিত, অনন্ত সাগরের উপর যাত্রা করিলেন। কিন্তু তখন উপায়ান্তর ছিল না। এই সঙ্কটে তাঁহারা দেখিলেন যে, নিম্পেন্ন মেঘসকল দক্ষিণগামী। তখন তাঁহারা নিশ্চিন্ত হইয়া সমদ্রবিহারে চলিলেন। এইরপে তাঁহারা ২১ মাইল পৰ্যন্ত সমদ্রোপরে বাহির হইয়া যান। তাহার পর লঘ বায় নিগত করিয়া দিয়া, নীচে নামেন। বােয়র সেই নিম্পন্ন স্তরে দক্ষিণ-বায় পাইয়া তৎকর্তৃক বাহিত হইয়া পানন্দবার ভূমির উপরে আসেন। কিন্তু দৰব বুদ্ধিবশতঃ অবতরণ করেন না। তার পর সন্ধ্যা হইয়া অন্ধকার হইল। বাম্পের গাঢ়তাবশতঃ নিম্পেন্ন ভূতল দেখা যাইতেছিল না। এমত অবস্থায় তাঁহারা কোথায় যাইতেছিলেন, তাহা জানিতে পারেন নাই। অকস্মাৎ নিম্পন্ন হইতে গম্ভীর সমদ্র-কল্লোল উখিত হইল। তখন অন্ধকারে পােনৰবার অনন্ত সাগরোপরে বিচরণ করিতেছেন জানিতে পারিয়া, তাঁহারা আবার নিমেশন নামিলেন। আবার দক্ষিণ-বায়ার সাহায্যে ভূমি প্রাপ্ত হইলেন। উত্তরসমান্দ্রে বিচরণকালে তাঁহারা কয়েকটি অদ্ভুত ছায়া দেখিয়াছিলেন। দেখিলেন যে, সমন্দ্রে যে সকল বালপীয়াদি জাহাজ চলিতেছিল, উদ্ধেৰ মেঘমধ্যে তাহার প্রতিবিম্বব। মেঘমধ্যে তেমনি চলিতেছে। সেই সকল জাহাজের তলদেশ উন্ধেব, মাফুল নিম্পেন; বিপরীত ভাবে জাহাজ চলিতেছে। মেঘরাশি বহন্দপণস্বরপ, সমদ্রকে প্রতিবিন্বিত করিয়াছিল। S30