পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই ভয়ঙ্কর বেগে এই পদার্থ রাশি কোথায় যাইতেছে ? কেহ বলিতে পারে না কোথায় যাইতেছে। আকাশের একটি নাক্ষত্রিক প্রদেশকে ইউরোপীয়েরা হরকুলিজ বলেন। সােয্য তলমধ্যস্থ ল্যামডা নামক নক্ষত্ৰাভিমাখে ধাবিত হইতেছে, কেবল এই পৰ্য্যন্ত নিশ্চিত হইয়াছে। কিন্তু সায্য এবং সৌর জগৎ ত বিশ্বের অতি ক্ষমাদ্রাংশ। অন্ধকার রাত্রে অনন্ত আকাশমন্ডল ব্যাপিয়া যে সকল জ্যোতিভক জীবলিতে থাকে, তাহারা সকলেই এক একটি সৌর জগতের কেন্দ্ৰীভূত। সে সকল কি গতিশন্য ? তাহাদিগেরও প্রাত্যহিক উদয়াস্তাদি দেখিতে পাই, সেও পথিবীর প্রাত্যহিক আবৰ্ত্তনজনিত চাক্ষষ ভ্রান্তি মাত্র। নাক্ষত্রিক লোকের কি জগৎ চঞ্চল ? জ্যোতিবিদ্যার দ্বারা যতদর অন্যসন্ধান হইয়াছে, ততদর জানিতে পারা গিয়াছে যে, নক্ষত্ৰলোকেও গতি সৰব্যময়ী। যত অন্যাসন্ধান হইয়াছে, ততই বাবা গিয়াছে যে, সয্যের যে প্রকৃতি, নক্ষত্রমাত্রেরই সেই প্রকৃতি। গ্রহ ভিন্ন অন্য তারাকে নক্ষত্র বলিতেছি। কতকগলি নক্ষত্র সৌর গ্ৰহগণের ন্যায় বৰ্ত্তনশীল। যেখানে আমরা চক্ষে একটি নক্ষত্র দেখিতে পাই, দরবীক্ষণ সাহায্যে দেখিলে তথায় কখন কখন দাইটি, তিনটি বা ততোধিক নক্ষত্র দেখা যায়। কখন কখন ঐ দই তিনটি নক্ষত্র পরস্পরের সহিত সম্পবিন্ধ রহিত, এবং পরস্পর হইতে দরস্থিত, অথচ দশক যেখান হইতে দেখিতেছেন, সেখান হইতে দেখিতে গেলে আকাশের একদেশে স্থিত দেখায়, এবং একটি সরল রেখার মধ্যবত্তী হইয়া যক্ষম নক্ষত্রের ন্যায় দেখায়। কিন্তু কখন কখন দেখা যায় যে, যে নক্ষত্রদ্বয় দেখিতে যাম, তাহা বাস্তবিক যােগ মই বটে,- পরস্পরের নিকটবত্তীর্ণ এবং পরস্পরের সহিত নৈসৰ্গিক সম্প্ৰবন্ধবিশিস্ট। এই সকল যন্মাদি। নক্ষত্র সম্পবন্ধে আধনিক জ্যোতিবিদেরা পৰ্যবেক্ষণা ও গণনার দ্বারা স্থিরীকৃত করিয়াছেন যে, উহারা পরস্পরকে বেড়িয়া বৰ্ত্তন করিতেছে। অর্থাৎ যদি ক, খ, এই দাইটি নক্ষত্রে একটি যাম নক্ষত্র হয়, তবে ক, খ, উভয়ের মাধ্যাকৰ্ষণিক কেন্দ্রের চতুষ্পপাশ্বে ক, খ, উভয় নক্ষত্ৰ বৰ্ত্তন করিতেছে। কখন কখন দেখা গিয়াছে যে, এইরােপ দাইটি কেন, বহা নক্ষত্রে এক একটি নাক্ষত্রিক জগৎ । তন্মধ্যস্থ বিভক্ত নক্ষত্ৰগলি সকলই ঐ প্রকার আবৰ্ত্তনকারী। বিচিত্র এই যে, নিউটন পথিবীতে বসিয়া, পাথিবি পদার্থের গতি দেখিয়া, পার্থিব উপগ্রহ চন্দ্রের গতিকে উপলক্ষ্য করিয়া, যে সকল মাধ্যাকৰ্ষণিক গতির নিয়ম আবিস্কৃত করিয়াছিলেন, দরবত্তীর্ণ এবং সৌর জগতের বহিঃস্থ এই সকল নক্ষত্রের গতিও সেই সকল নিয়মাধীন। নক্ষত্ৰগণের প্রকৃতি এবং সায্যের প্রকৃতি যে এক, তদ্বিবয়ে আর সংশয় নাই। ডাক্তার হগিনস। প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকেরা আলোক-পরীক্ষক যন্ত্রের সাহায্যে জানিয়াছেন যে, যে সকল বস্তুতে সৰ্য্যে নিশ্চিমত, অন্যান্য নক্ষত্রেও সেই সকল বস্তু লক্ষিত হয়। অতএব সৰ্যোপরি ও সযোগকেভ যে প্রকার ভয়ঙ্কর কোলাহল ও বিপ্লব নিত্য বত্তমান বলিয়া বোধ হয়, তারাগণেও সেইরাপ হইতেছে, সন্দেহ নাই। যে নক্ষত্র দরবীক্ষণ সাহায্যেও অস্পষ্ট দন্ট আলোকবিন্দ বলিয়া বোধ হয়, তাহাতে ক্ষণমাত্র যে সকল উৎপাত ঘটিতেছে, পথিবীতলে দশ বর্ষের নৈসৰ্গিক ক্রিয়া একত্রিত করিলেও তাহার তুল্য হইবে না। সমস্যামন্ডলে সামান্য মাত্র কোন পরিবত্তানে যে বিপ্লব ও নৈসগিক শক্তিব্যয় সচিত হয়, তাহাতে পলকমাত্রে এই পথিবী ধবংস প্রাপ্ত হইতে পারে। প্রচন্ড বাত্যার কল্লোল অথবা কণ বিদারক অশানিসম্পপাতশব্দ হইতে লক্ষ লক্ষ গণে ভীমতর কোলাহল অনবরত সেই সৌরমন্ডলে নিঘোষিত হইতেছে সন্দেহ নাই। আর এই যে সহস্ৰ সহস্ৰ, স্থির, শীতল, ক্ষদ্র ক্ষদ্র জ্যোতিভকগণ দেখিতেছি, তাহাতেও সেইরাপ হইতেছে; কেন না, সকলই সৰ্য্যেপ্রকৃতিবিশিষ্ট, বরং আমাদিগের সােয্য অনেক অনেক নক্ষত্রের অপেক্ষা ক্ষমাদ্র এবং হীনতেজা। সিরিয়াস নামক অত্যুক্তজবল নক্ষত্র, আমাদিগের নয়ন হইতে যত দরে আছে, আমাদিগের সােষ্য তত দরে প্রেরিত হইলে, উহা তৃতীয় শ্রেণীর ক্ষদ্র নক্ষত্রের ন্যায় দেখাইত; আকাশের কত শত নক্ষত্র তদপেক্ষা উক্তজবল জব্বালায় জবলিত। কিন্তু যদি সৰ্যকে অল দেবরণ (রোহিণী ?), কস্তার, বেটেলগাঁস প্রভৃতি নক্ষত্রের স্থানে প্রেরণ করা যায়, তবে সৰ্যকে দেখা যাইবে কি না সন্দেহ। প্রক্টর সাহেব বলেন যে আকাশে যে সকল নক্ষত্র দেখিতে পাই বোধ হয় তাহার মধ্যে পঞ্চাশটিও আমাদের সৰ্য্যোপেক্ষা ক্ষদ্র হইবে না। অতএব সােয্যমণ্ডলে যেরপ চাঞ্চল্যের অস্তিত্ব অনামান করা যায়, অধিকাংশ নক্ষত্রে ততোধিক চাণ্ডল্য বত্তমান, সন্দেহ নাই। কেবল তাহাঁই নহে, সায্য যেমন অতি প্রচন্ডবেগে, গ্ৰহগণ সহিত, আকাশ-পথে ধাবমান, S889)