পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বজ্ঞােনরহস্য মাত্র। যাঁহারা রসায়নবিদ্যা প্রথম শিক্ষা করিতে প্রবত্ত হয়েন, তাঁহারা শনিয়া চমৎকৃত হয়েন যে, হীরক ও অঙ্গার একই বস্তু। বাস্তবিক এ কথা সত্য এবং পরীক্ষাধীন। যে দ্রব্য উভয়ের সার, তাহার নাম হইয়াছে অঙ্গারজান। কাঠ তৃণ তৈলাদি যাহা দাহ করা যায়, তাহার দাহ্য ভাগ এই অঙ্গারজান। অঙ্গারজানের সহিত অম্লজানের রাসায়নিক যোগাক্রিয়াকে দাহ বলে। এই চারিটি পদাৰ্থ সব্বদা পরস্পরে রাসায়নিক যোগে সংযক্ত হয়। যথা, অম্লজানে জলযানে জল হয়। অম্পলজানে যবক্ষারজানে নাইট্ৰিক আসিড নামক প্ৰসিদ্ধ ঔষধ হয়। অম্লজানে অঙ্গারজানে আঙ্গারিক অঞ্চল (কাব্বণিক আসিড) হয়। যে বাপের কারণ সোডা ওয়াটার উছলিয়া উঠে, সে এই পদাৰ্থ । দীপশিখা হইতে এবং মনষ্যে-নিশ্বাসে ইহা বাহির হইয়া থাকে। যবক্ষারজান এবং জলজানে আমোনিয়া নামক প্রসিদ্ধ তেজস্বী ঔষধ হইয়া থাকে। অঙ্গারজন ও জলজানে তারপিন তৈল প্রভৃতি অনেকগলি তৈলবৎ এবং অন্যান্য সামগ্ৰী হয়। ইত্যাদি। এই চারিটি সামগ্ৰী যেমন পরস্পরের সহিত রাসায়নিক যোগে যক্ত হয়, সেইরােপ অন্যান্য সামগ্রীর সহিত যক্ত হয় এবং সেই সংযোগেই এই পথিবী নিশ্চিমত। যথা, সাডিয়ামের সঙ্গে ও ক্লোরাইনের সঙ্গে অস্লাজানের সংযোগবিশেষ লবণ; চাঁণের সঙ্গে অম্লজান ও অঙ্গারজানের সংযোগবিশেষে মৰ্ম্মমর্যাদি নানাবিধ প্রস্তর হয়; সিলিকন এবং আলমিনার সঙ্গে অম্লজানের সংযোগে নানাবিধ মাত্তিকা। দাইটি সামগ্রীর রাসায়নিক সংযোগে যে এক ফল হয়, এমত নহে। নানা মাত্রায় নানা দ্রব্যের সংযোগে নানা দ্রব্য হইয়া থাকে। জলযান, অম্লজান, অঙ্গারজান এবং যবক্ষারজান, এই চারিটিই একত্রে সংযক্ত হইয়া থাকে। সেই সংযোগের ফল জৈবনিক। জৈবনিকে এই চারিটি সামগ্রীই থাকে, আর কিছই থাকে না, এমত নহে; অম্লজানাদির সঙ্গে কখন কখন গন্ধক, কখন পোতাস ইত্যাদি সামগ্রী থাকে। কিন্তু যে পদার্থে এই চারিটিই নাই, তাহা জৈবনিক নহে; যাহাতে এই চারিটিই আছে, তাহাই জৈবনিক। জীবমাত্রেই এই জৈবনিকে গঠিত; জীব ভিন্ন আর কিছতেই জৈবনিক নাই। এই স্থলে জীব শব্দে কেবল প্রাণী বৰঝাইতেছে এমত নহে। উদ্ভিদ ও জীব; কেন না, তাহাদিগের জন্ম, বদ্ধি, পন্টি ও মাতু্য আছে। অতএব উদ্ভিদের শরীরও জৈবনিকে নিৰ্ম্মিমত। কিন্তু সচেতন ও অচেতন জীবে এ বিষয়ে একটা বিশেষ প্রভেদ আছে। জৈবনিক জীব-শরীরমধ্যেই পাওয়া যায়, অন্যত্র পাওয়া যায় না। জীব-শরীরে কোথা হইতে জৈবনিক আইসে ? জৈবনিক জীব-শরীরে প্রস্তুত হইয়া থাকে। উদ্ভিদ জীব, ভূমি এবং বায় হইতে অম্লজানাদি গ্রহণ করিয়া আপন শরীরমধ্যে তৎসমদায়ের রাসায়নিক সংযোগ সম্পাদনা করিয়া জৈবনিক প্রস্তুত করে; সেই জৈবনিক আপন শরীর নিম্পমাণ করে। কিন্তু নিজজীব পদাৰ্থ হইতে জৈবনিক পদাৰ্থ প্ৰস্তৃত করার যে শক্তি, তাহা উদ্ভিদেরই আছে। সচেতন জীবের এই শক্তি নাই; ইহারা স্বয়ং জৈবনিক প্রস্তুত করিতে পারে না; উদ্ভিদকে ভোজন করিয়া প্ৰস্তৃত জৈবনিক সংগ্রহপকেবািক শরীর পোষণ করে। কোন সচেতন জীব মাত্তিকা খাইয়া প্ৰাণ ধারণা করিতে পারে না, কিন্তু তৃণ ধান্য প্রভৃতি সেই মাত্তিকার রস পান করিয়া জীবন ধারণ করিতেছে; কেন না, উহারা তাহা হইতে জৈবনিক প্রস্তুত করে; বিষ মাত্তিকা খাইবে না, কিন্তু সেই তৃণ ধান্যাদি খাইয়া তাহা হইতে জৈবনিক গ্রহণ করিবে, ব্যাঘ আবার সেই বিষকে খাইয়া জৈবনিক সংগ্ৰহ করিবে। যাঁহারা এদেশের জমীদারগণের দ্বেষক, তাঁহারা বলিতে পারেন যে, উদ্ভিদ জীবেরা এ জগতে চাষা, তাহারা উৎপাদন করে; অপরেরা জমীদার, তাহারা চাষার উপজািন কাড়িয়া খায়, আপনারা কিছ করে না। এখন দেখ, এক জৈবনিক সৰ্ব্ববাজীব নিশ্চিমত। যে ধান ছড়াইয়া তুমি পাখীকে খাওয়াইতেছ, সে ধান যে সামগ্ৰী, পাখীও সেই সামগ্রী, তুমিও সেই সামগ্ৰী। যে কুসমে ঘাণ মাত্র লইয়া, লোকমোহিনী সন্দেরী ফেলিয়া দিতেছেন, সন্দরীও যাহা, কুস্যমও তাই। কীটও যাহা, সমােটও তাই। যে হংসপােচ্ছলেখনীতে আমি লিখিতেছি, সেও যাহা, আমিও তাই। সকলই জৈবনিক। প্রভেদও গরতর। জয়পরী শ্বেত প্রস্তরে তোমার জলপান-পাত্র বা ভোজন-পাত্ৰ নিশ্চিমত হইয়াছে; সেই প্রস্তরে তাজমহল এবং জমা মসজিদও নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। উভয়ে প্রভেদ নাই কে বলিবে ? গোপদেও জল, সমাদেও জল, গোপদে সমন্দ্রে প্রভেদ নাই কে বলিবে ? কিন্তু স্থলে কথা বলিতে বাকি আছে। জৈবনিক ভিন্ন জীবন নাই, যেখানে জীবন, সেইখানে SGS