পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दाक्र মাত্র দলটান্তই ইহা বঝিবার পক্ষে যথেষ্ট। ভলটেয়ার ও রসো অল্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের চিন্তাধারায় আলোড়ন উপস্থিত করিয়াছিলেন এবং ইহার ফলেই ফরাসী বিপ্লব সম্ভব হইয়াছিল। সাম্য, মৈত্রী, সবাধীনতা-এই তিনটি বাণী বা slogan লইয়া ফরাসী বিপ্লব আরম্ভ হয়। এই বাণীক্ৰয় মলে রাখিয়া ব্রিটেনে ও জাৰ্ম্মানীতেও একদল দাশনিক পন্ডিত সব সব মতবাদ প্রতিষ্ঠায় রত হইলেন। ইংলন্ডে জেরেমি বেন্থাম (১৭৪৮-১৮৩২) হিতবাদ দশন প্রচার করেন। ‘হিতবাদ”-এর লক্ষ্য হইল অধিক সংখ্যক লোকের অধিক পরিমাণ হিত বা মঙ্গল সাধন ('Greatest good of the greatest number") 3 left RCNIS, SR (PTGIS মতবাদের সঙ্গে সম্যক পরিচিত ছিলেন। বিলাতে অবস্থান কালে আলাপ পরিচয়ের ফলে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা জন্মে। বেনথামের হিতবাদ দশনের প্রভাবে ব্রিটেনের রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থা বিশেষরূপে সংস্কৃত ও পরিশোধিত হইয়াছিল। ভারতবর্ষে, বিশেষতঃ বাংলার নব্য শিক্ষাপ্রাপ্ত যািবকদের মধ্যে প্রথম প্রথম পাশ্চাত্ত্য ব্যক্তিবাদের প্রাধান্য দেখা দিলেও, তাহদের ভিতরে উত্ত হিতবাদ দশনের মল কথা ক্রমে প্রচারিত হইতে থাকে। তাহদের মধ্যে অগ্রণী দল যে সমাজসেবায় ঐ যাগেই অতখানি অগ্রসর হইয়াছিলেন তাহার মলে বেন্থামের হিতবাদ দশন কম কাৰ্য্য করে নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনার মধ্যে ‘হিতবাদ”-এর প্রভাব সম্পলেট। তিনি বেন্থাম বাণিত আনন্দ বা সখের ব্যাখ্যাও পরাপরি গ্রহণ করিয়াছিলেন।*।। শেষ জীবনে বহা বিষযে তাঁহার মত পরিবত্তিত হইয়াছিল। ‘হিতবাদ” সম্বন্ধেও তাঁহার ধারণার পরিবত্তন ঘটে, কিন্তু হিতবাদের কায্যকারিতা ও গণিাগণ সম্পবন্ধে তিনি বরাবর সজাগ ছিলেন। ধৰ্ম্মম চচ্চােয় হিতবাদের স্থান নিণয় করিতে গিয়া বঙ্কিমচন্দ্র বলিয়াছেন : “হিতবাদ মতটা হাসিয়া উড়াইয়া দিবার বস্তু নহে। হিতবাদীদিগের ভ্ৰম এই যে, তাঁহারা বিবেচনা করেন যে সমস্ত ধৰ্ম্মমতত্ত্বটা এই হিতবাদমতের ভিতরই আছে। তাহা না হইয়া, ইহা ধৰ্ম্মমতত্ত্বের সামান্য অংশ মাত্র। আমি যেখানে উহাকে স্থান দিলাম, তাহা আমার ব্যাখ্যাত অনশীলনতত্ত্বের একটি কোণের কোণ মাত্র। তত্ত্বটা সত্যমলেক, কিন্তু ধৰ্ম্মমতত্ত্বের সমস্ত ক্ষেত্র আব্বত করে না। ধৰ্ম্মম ভক্তিতে সব্বভুতে সমদান্টিতে। সেই মহাশিখর হইতে যে সহস্ৰ সহস্ৰ নিঝরিণী নামিয়াছে—হিতবাদ ইহা তাহার একটি ক্ষদ্রতম স্রোতঃ । ক্ষদ্রতম হউক-ইহার জল পবিত্র। হিতবাদ ধৰ্ম্ম-অধৰ্ম্ম নহে” (ধৰ্ম্মমতত্ত্ব ঃ ২২শ অধ্যায়-আত্মপ্রীতি)। এই যাগে ফ্রান্সে আগস্ট কোঁতের (১৭৯৮-১৮৫৭) আবিৰ্ভাব জগতের ইতিহাসে একটি সন্মরণীয় ঘটনা। তিনি যে মতবাদ প্রচার করেন। তাহা 'Positive Philosophy’ নামে আখ্যাত। বাংলায় অনেকে ইহার অনেক রকম তজজমা করিয়াছেন, যেমন ধ্রুববাদ, প্রত্যক্ষবাদ, দন্টবাদ ইত্যাদি। আমরা এখানে ধ্রুববাদই বলিব। বঙ্কিমচন্দ্ৰ আগষ্ট কোঁতের ধ্রুববাদের সঙ্গে সম্যক পরিচিত তো ছিলেনই, উপরন্তু ইহাদ্বারা বিশেষ প্রভাবিতও হইয়াছিলেন। শেষ জীবনে হিন্দধমের ভিতরেই জগতের যাবতীয় দার্শনিক ও ধৰ্ম্মমীয় চিন্তার পরাকাঠা দেখিলেও কেতি-প্রবত্তিত ধ্রুববাদের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রদ্ধা কণামাত্রও হাস পায় নাই। প্রথম জীবনে “বঙ্গদশ্যনে” প্রকাশিত তাঁহার বিভিন্ন রচনায় কোঁতের মতবাদ সন্দরভাবে পরিসফট হইয়াছে। ১৮৭৪ সনে ধ্রুববাদ লইয়া যখন এদেশে বাদানবাদ উপস্থিত হয় তখন তিনি সহৃদাবর সপশিডত রাজকৃষ্ণ মখোপাধ্যায়কে দিয়া ‘কোমতি দশন’ নামে একটি সহপাঠ্য প্রবন্ধ রচনা করাইয়াছিলেন। প্রথম বৎসরের ‘বঙ্গদশ্যনে'ও (শ্রাবণ ১২৭৯), ইংরেজী ১৮৭২ সনে, কেতিদশনের উপর একটি প্রবন্ধ বাহির হয়। বঙ্কিমচন্দ্ৰ যে বঙ্গদেশে ধ্রুববাদ প্রচারের বিশেষ অন্যরাগী ছিলেন, পন্ডিতপ্রবর কৃষ্ণকমল ভট্টাচায্যের একটি কথা হইতেও তাহা আমরা বেশ বঝিতে পারি। “কোঁতের দর্শনশাস্ত্র সম্পবন্ধে আলোচনার সময় আইসে নাই, the time is not ripe for it’-কৃষ্ণকমল একদা একথা বলিলে, বঙ্কিমচন্দ্ৰ বলিয়াছিলেন, “কেন ? যেটা Truth তার আবার সময় অসময় কি ?” আগষ্ট কোঁত সমাজকে “মানবদেবী’রপে কলপনা করিয়াছিলেন, তাঁহার মতবাদের নিয্যাস বঙ্কিমচন্দ্রের এই কথা কয়টির মধ্যে আছে। বলা বাহাল্য, বঙ্কিমচন্দ্রও ইহা পণভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন : “সমাজকে ভক্তি করবে। ইহা স্মরণ রাখিবে যে, মানষের যত গণ আছে- সবই সমাজে আছে।

  • ধৰ্ম্মমতত্ত্ব ঃ অস্টম অধ্যায়-শারীরিকী বত্তি।

পরাতন প্রসঙ্গ (প্রথম পৰ্যায়)-বিপিনবিহারী গঞ্জ, পঃ ৭২