পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম সদ, নাৰিল । গীতিকাৰ্য* কাব্য কাহাকে বলে, তাহা অনেকে বঝাইবার জন্য যত্ন করিয়াছেন, কিন্তু কাহারও যত্ন সফল হইয়াছে কি না সন্দেহ। ইহা স্বীকার করিতে হইবে যে, দই ব্যক্তি কখন এক প্রকার অর্থ করেন নাই। কাব্যের যথাৰ্থ লক্ষণ সম্পবন্ধে মতভেদ থাকিলেও কাব্য একই পদাৰ্থ, সলেদহ নাই। সেই পদার্থ কি, তাহা কেহ বাবাইতে পারন বা না পােরন, কাব্যপ্রিয় ব্যক্তি মাত্রেই এক প্রকার অনভব করিতে পারেন। কাব্যের লক্ষণ যাহাই হউক না কেন, আমাদিগের বিবেচনায় অনেকগালিন গ্রন্থ, যাহার প্রতি সচরাচর কাব্য নাম প্রযক্ত হয় না, তাহাও কাব্য। মহাভারত, রামায়ণ ইতিহাস বলিয়া খ্যাত হইলেও তাহা কাব্য; শ্ৰীমদ্ভাগবত পরাণ বলিয়া খ্যাত হইলেও তাহা অংশবিশেষে কাব্য; সকটের উপন্যাসগলিকে আমরা উৎকৃষ্ট কাব্য বলিয়া স্বীকার করি: নাটককে আমরা কাব্যমধ্যে গণ্য করি, তাহা বলা বাহল্য। ভারতবষীয় এবং পাশ্চাত্ত্য আলঙ্কারিকেরা কাব্যকে নানা শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন। তাহার মধ্যে অনেকগালিন বিভাগ অনৰ্থক বলিয়া বোধ হয়। তাঁহাদিগের কথিত তিনটি শ্রেণী গ্ৰহণ করিলেই যথেস্ট হয়, যথা, ১ম দশ্যকাব্য, অর্থাৎ নাটকাদি; ২য় আখ্যানকাব্য অথবা মহাকাব্য; রঘবংশের ন্যায় বংশাবলীর উপাখ্যান, রামায়ণের ন্যায় ব্যক্তিবিশেষের চরিত, শিশপালবাধের ন্যায়। ঘটনাবিশেষের বিবরণ, সকলই ইহার অন্তর্গত; বাসবদত্তা, কাদশবরী প্রভৃতি গদ্য কাব্য ইহার অন্তগত, এবং আধনিক উপন্যাস সকল এই শ্রেণীভুক্ত। ৩য়, খন্ডকাব্য। যে কোন কাব্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তগত নহে, তাহাকেই আমরা খন্ডকাব্য বলিলাম। দেখা যাইতেছে যে, এই ত্ৰিবিধ কাব্যের রূপগত বিলক্ষণ বৈষম্য আছে। কিন্তু রূপগত বৈষম্য প্রকৃত বৈষম্য নহে। দশ্যকাব্য সচরাচর কথোপকথনেই রচিত হয়, এবং রঙ্গাঙ্গনে অভিনীত হইতে পারে, কিন্তু যাহাঁই কথোপকথনে গ্ৰন্থিত, এবং অভিনয়োপযোগী, তাহাই যে নাটক বা তচ্ছে,ণীস্থ, এমত নহে। এদেশের লোকের সাধারণতঃ উপরোক্ত ভ্ৰান্তিমলেক সংস্কার আছে। এই জন্য নিত্য দেখা যায় যে, কথোপকথনে গ্ৰন্থিত অসংখ্য পান্তক নাটক বলিয়া প্রচারিত, পঠিত, এবং অভিনীত হইতেছে। বাস্তবিক তাহার মধ্যে অনেকগলিই নাটক নহে। পাশ্চাত্ত্য ভাষায় অনেকগালিন উৎকৃষ্ট কাব্য আছে, যাহা নাটকের ন্যায়। কথোপকথনে গ্ৰন্থিত কিন্তু বস্তুতঃ নাটক নহে। “Comus’, ‘Manfred”, ‘Faust” ইহার উদাহরণ। অনেকে ‘শকুন্তলা ও উত্তররামচরিতকেও নাটক বলিয়া স্বীকার করেন না। তাঁহারা বলেন, ইংরাজি ও গ্ৰীক ভাষা ভিন্ন কোন ভাষায় প্রকৃত নাটক নাই। পক্ষান্তরে গেটে বলিয়াছেন যে, প্রকৃত নাটকের পক্ষে, কথোপকথনে গ্রন্থন বা অভিনয়ের উপযোগিতা নিতান্ত আবশ্যক নহে। আমাদিগের বিবেচনায় 'Bride of Lammermoor’ কে নাটক বলিলে অন্যায় হয় না। ইহাতে বাবা যাইতেছে যে, আখ্যানকাব্যও নাটকাকারে প্রণীত হইতে পারে; অথবা গীতপরম্পরায় সন্নিবেশিত হইয়া গীতিকাব্যের রােপ ধারণা করিতে পারে। বাঙ্গালা ভাষায় শেষোক্ত বিষয়ের উদাহরণের অভাব নাই। পক্ষান্তরে দেখা গিয়াছে, অনেক খন্ডকাব্য মহাকাব্যের আকারে রচিত হইয়াছে। যদি কোন একটি সামান্য উপাখ্যানের সত্রে গ্রন্থিত কাব্যমালাকে আখ্যানকাব্য বা মহাকাব্য নাম দেওয়া বিধেয় হয়, তবে ‘Excursion” এবং “Childe Harold” কে ঐ নাম দিতে হয়। কিন্তু আমাদিগের বিবেচনায় ঐ দাই কাব্য খন্ডকাব্যের সংগ্ৰহ মাত্র। খন্ডকাব্য মধ্যে আমরা অনেক প্রকার কাব্যের স্থান করিয়াছি। তন্মধ্যে এক প্রকার কাব্য প্রাধান্য লাভ করিয়া ইউরোপে গীতিকাব্য ( Lyric) নামে খ্যাত হইয়াছে। অদ্য সেই শ্রেণীর কাব্যের কথায় আমাদিগের প্রয়োজন। ইউরোপে কোন বস্তু একটি পথক নাম প্রাপ্ত হইয়াছে বলিয়া, আমাদিগের দেশেও যে একটি পথক নাম দিতে হইবে, এমন্ত নহে! যেখানে বস্তুগত কোন পার্থক্য নাই, সেখানে নামের পার্থক্য অনাথক এবং অনিস্টজনক। কিন্তু যেখানে বতুগলি পথক, সেখানে নামও

  • অবকাশরঞ্জিনী। কলিকাতা।

Selfis NI