পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-অনাকরণ চাষার ফসলের যোগাড় করিয়া দিতেছে; বিদ্যার ছােলা পিঠে করিয়া কালেজ হইতে ছাপাখানায় আনিয়া ফেলিয়া, চিনির বলদের নাম রাখিতেছে; সমাজ সংস্কারের গাড়িতে বিলাতি মাল বোঝাই দিয়া, রসের বাজারে চোলাই করিতেছে; এবং দেশহিতের ঘানিগাছে সবার্থ সষপ পেষণ করিয়া, যশের তেল বাহির করিতেছে। এত গণের গোরকে কি বধ করিতে আছে ? কিন্তু যিনি বাঙ্গালির যত নিন্দা করন, বাঙ্গালি তত নিন্দনীয় নহে। রাজনারায়ণবােবও বাঙ্গালির যত নিন্দা করিয়াছেন, বাঙ্গালি তত নিন্দনীয় নহে। অনেক সর্বদেশবৎসল যে অভিপ্ৰায়ে বাঙ্গালির নিন্দা করেন, রাজনারায়ণবাবও সেই অভিপ্ৰায়ে বাঙ্গালির নিন্দা করিয়াছেন-বাঙ্গালির হিতাৰ্থ । সেকালে আর একালে নিরপেক্ষ ভাবে তাঁহার উদ্দেশ্য নহে—একালের দোষনিব্বাচনই তাঁহার উদ্দেশ্য। একালের গণগলির প্রতি তিনি বিশেষ। দণ্টিনিক্ষেপ করেন নাই— করাও নিম্প্রয়োজন; কেন না, আমরা আপনাদিগের গণের প্রতি পলকের জন্য সন্দেহযক্ত নাহি। নব্য বাঙ্গালির অনেক দোষ। কিন্তু সকল দোষের মধ্যে, অন্যাকরণানরাগ সব্ববাদিসম্মত। কি ইংরেজ, কি বাঙ্গালি, সকলেই ইহার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে অহরহ তিরস্কৃত করিতেছেন। তদ্বিষয়ে রাজনারায়ণবাব যাহা বলিয়াছেন, তাহা উদ্ধত করিবার আবশ্যকতা নাই-সে সকল কথা আজিকালি সকলেরই মাখে শনিতে পাওয়া যায়। আমরা সে সকল কথা স্বীকার করি, এবং ইহাও স্বীকার করি যে, রাজনারায়ণবাব যাহা বলিয়াছেন তাহার অনেকগলিই সঙ্গত। কিন্তু অন্যাকরণসম্পবন্ধে দই একটি সাধারণ ভ্ৰম আছে। অন্যাকরণ মাত্র কি দােষ্য ? তাহা কদাচ হইতে পারে না। অন্যাকরণ ভিন্ন প্রথম শিক্ষার উপায় কিছই নাই। যেমন শিশ, বয়ঃপ্ৰাপ্তের বাক্যানকিরণ করিয়া কথা কহিতে শিখে, যেমন সে য়ঃপ্ৰাপ্তের কায্য সকল দেখিয়া কায্য করিতে শিখে, অসভ্য এবং অশিক্ষিত জাতি সেইরাপ সভ্য এবং শিক্ষিত জাতির অন্যাকরণ করিয়া সকল বিষয়ে শিক্ষা প্রাপ্ত হয়। অতএব বাঙ্গালি যে ইংরেজের অন্যাকরণ করবে, ইহা সঙ্গত ও ব্যক্তিসিদ্ধ। সত্য বটে, আদিম সভ্য জাতি বিনানকরণে স্বতঃশিক্ষিত এবং সভ্য হইয়াছিল; প্রাচীন ভারতীয় ও মিশরীয় সভ্যতা কাহারও অন্যাকরণলব্ধ নহে। কিন্তু যে আধনিক ইউরোপীয় সভ্যতা সব জাতীয় সভ্যতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তাহা কিসের ফল ? তাহাও রোম ও য়ােনানী সভ্যতার অন্যাকরণের ফল। রোমক সভ্যতাও য়ােনানী সভ্যতার অন্যাকরণফল। যে পরিমাণে বাঙ্গালি, ইংরেজের অন্যাকরণ করিতেছে, পরাবাত্তজ্ঞ জানেন যে, ইউরোপীয়েরা প্রথমাবস্থাতে তদপেক্ষা অলপ পরিমাণে য়ােনানীয়ের, বিশেষতঃ রোমকীয়ের অনাকরণ করেন নাই। প্রথমাবস্থাতে অনাকরণ করিয়াছিলেন বলিয়াই এখন এ উচ্চাসোপানে দাঁড়াইয়াছেন। শৈশবে পরের হাতে ধরিয়া যে জলে নামিতে না শিখিয়াছে, সে কখনই সাঁতার দিতে শিখে নাই; কেন না, ইহ জন্মে তাহার জলে নামাই হইল না। শিক্ষকের লিখিত আদশ দেখিয়া যে প্রথমে লিখিতে না শিখিয়াছে, সে কখনই লিখিতে শিখে নাই। বাঙ্গালি যে ইংরেজের অন্যাকরণ করিতেছে, ইহাই বাঙ্গালির ভরসা। তবে লোকের বিশ্বাস এই যে, অনাকরণের ফলে কখন প্রথম শ্রেণীর উৎকর্ষ প্রাপ্তি হয় না। 6म ङान्व् ? প্রথম, সাহিত্য সম্পবন্ধে দেখ। পথিবীর কতকগলি প্রথম শ্রেণীর কাব্য, কেবল অনাকরণ মাত্র। ড্রাইডেন এবং বোয়ালোর অনকারী পোপ, পোপের অনকারী জনসন। এইরপ ক্ষদ্র ক্ষদ্র লেখকদিগের দািণ্টান্ত দেখাইয়া আমরা এ কথা সম্প্রমাণ করিতে চাহি না। বাজিলের মহাকাব্য, হোমরের প্রসিদ্ধ মহাকাব্যের অন্যাকরণ। সমাদয় রোমকসাহিত্য, য়ােনানীয় সাহিত্যের অন্যাকরণ। যে রোমকসাহিত্য বৰ্ত্তমান ইউরোপীয় সভ্যতার ভিত্তি, তাহা অনাকরণ মাত্র। কিন্তু বিদেশীয় উদাহরণ দরে থাকুক। আমাদিগের সবদেশে দইখানি মহাকাব্য আছে।--তাহাকে মহাকাব্য বলে না, গৌরবাৰ্থ ইতিহাস বলে-তােহা পথিবীর সকল কাব্যের শ্রেষ্ঠ। গণে উভয়ে প্রায় তুল্য; অলপ তারতম্য। একখানি আর একখানির অন্যাকরণ। মহাভারত যে রামায়ণের পরকালে প্রণীত, তাহা হইলর সাহেব ভিন্ন বোধ হয়। আর কেহই সহজ অবস্থায় অস্বীকার করিবেন না। অন্যান্য অন্যকুত এবং অনাকরণের নায়কসকলে যতটা প্ৰভেদ দেখা যায়, রামে ও যাধিঠিরে তাহার অপেক্ষা অধিক প্রভেদ নহে। রামায়ণের অমিতবলধারী বীর, জিতেন্দ্ৰিয়, ভ্ৰাতৃবৎসল লক্ষণ মহাভারতে অজ্ঞজনে পরিণত হইয়াছেন, এবং ভরত শত্ৰঘা নকুল সহদেব হইয়াছেন। ভীম, নাতন সন্টি, তবে কুম্ভকর্ণের একটি ছায়ায় ROY