পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী দাঁড়াইয়াছেন। রামায়ণে রাবণ, মহাভারতে দায্যোধন ; রামায়ণে বিভীষণ, মহাভারতে বিন্দর; অভিমন্য, ইন্দ্ৰজিতের অস্থিমজা লইয়া গঠিত হইয়াছে। এদিকে রাম ভ্ৰাতা ও পত্নী সহিত বনবাসী; যধিঠিরও ভ্রাতা ও পত্নী সহিত বনবাসী। উভয়েই রাজ্যচু্যত। একজনের পত্নী অপহৃত, আর একজনের পত্নী সভামধ্যে অপমানিতা; উভয় মহাকাব্যের সারভুত সমরানলে সেই অগ্নি জৰলন্ত; একে সপস্টতঃ, অপরে অস্পষ্টতঃ । উভয় কাব্যের উপন্যাসভাগ এই যে, যােবরাজ রাজ্যচ্যুত হইয়া, ভ্রাতা ও পত্নীসহ বনবাসী, পরে সমরে প্রবত্ত, পরে সমরবিজয়ী হইয়া পানব্বার স্বরাজ্যে স্থাপিত। ক্ষদ্র ক্ষদ্র ঘটনাতেই সেই সাদশ্য আছে; কুশীলবের পালা মণিপারে বভ্ৰবাহন কর্তৃক অভিনীত হইয়াছে; মিথিলায় ধন ভঙ্গ, পাণ্ডালে মৎস্যবিন্ধনে পরিণত হইয়াছে; দশরথকৃত পাপে এবং পান্ডুকৃত পাপে বিলক্ষণ ঐক্য আছে। মহাভারতকে রামায়ণের অন্যাকরণ বলিতে ইচ্ছা না হয়, না বলেন; কিন্তু অন্যাকরণীয়ে এবং অনাকুতে ইহার অপেক্ষা ঘনিষ্ঠ সম্প্ৰবন্ধ অতি বিরল। কিন্তু মহাভারত অনাকরণ হইয়াও কাব্যমধ্যে পথিবীতে অন্যত্র অতুল—একা রামায়ণই তাহার তুলনীয়। অতএব অন্যাকরণ মাত্র হেয় নহে। পরে, সমাজ সম্পবন্ধে দেখ। যখন রোমকেরা য়ােনানীয় সভ্যতার পরিচয় পাইলেন, তখন তাঁহারা কায়মনোবাক্যে য়ােনানীয়দিগের অন্যাকরণে প্রবত্ত হইলেন। তাহার ফল, কিকিরোর বাগিমতা, তাসিতসের ইতিবত্তগ্রন্থ, ব্যক্তিজলের মহাকাব্য, প্লতস ও টেবোন্সের নাটক, হরেন্স ও ওবিদের গীতিকাব্য, পেপিনিয়নের ব্যবস্থা, সেনেকার ধৰ্ম্মননীতি, আন্তনৈনদিগের রাজধৰ্ম্ম, লকালসের ভোগাসক্তি, জনসাধারণের ঐশ্বৰ্য্য, এবং সম্রাটগণের স্থাপত্য কীৰ্ত্তি। আধনিক ইউরোপীয়দিগের কথা পকেবই উল্লিখিত হইয়াছে; ইতালীয়, ফরাসি-সাহিত্য, গ্রীক ও রোমীয় সাহিত্যের অন্যাকরণ; ইউরোপীয় ব্যবস্থা-শাস্ত্র, রোমক ব্যবস্থা-শাস্ত্রের অন্যাকরণ; ইউরোপীয় শাসন-প্ৰণালী, রোমকীয়ের অন্যাকরণ। কোথাও সেই ইপিরেটর, কোথাও সেই সেনেট, কোথাও সেই প্লেবের শ্রেণী; কোথাও ফোরাম, কোথাও সেই মিউনিসিপিয়ম। আধনিক ইউরোপীয় স্থাপত্য ও চিত্রবিদ্যাও য়নানী ও রোমক মলবিশিস্ট। এই সকলই প্রথমে অনাকরণ মাত্রই ছিল; এক্ষণে অনাকরণাবস্থা পরিত্যাগ করিয়া পথগতভাবাপন্ন ও উন্নত হইয়াছে। প্রতিভা থাকিলেই এরাপ ঘটে, প্রথম অনাকরণ মাত্র হয়; পরে অভ্যাসে উৎকর্ষ প্রাপ্ত হওয়া যায়। যে শিশ প্রথম লিখিতে শিখে, তাহাকে প্রথমে গােরর হস্তাক্ষরের অন্যাকরণ করিতে হয়-পরিণামে তাহার হস্তাক্ষর সর্বতন্ত্র হয়, এবং প্রতিভা থাকিলে সে গােরর অপেক্ষা ভাল লিখিয়াও থাকে। তবে প্রতিভাশন্যের অন্যাকরণ বড় কদৰ্য্য হয় বটে। যাহার যে বিষয়ে নৈসগিক শক্তি নাই, যে চিরকালই অনাকারী থাকে, তাহার সবাতন্ত্র্য কখন দেখা যায় না। ইউরোপীয় নাটক ইহার বিশিষ্পট উদাহরণ। ইউরোপীয় জাতি মাত্রেরই নাটক আদৌ য়ােনানী নাটকের অন্যাকরণ। কিন্তু প্রতিভার গণে স্পেনীয় এবং ইংলন্ডীয় নাটক। শীঘ্রই সর্বাতন্ত্র্য লাভ করিল—এবং ইংলশড এ বিষয়ে গ্রীসের সমকক্ষ হইল। এদিকে এতদ্বিষয়ে সবাভাবিক শক্তিশান্য রোমীয়, ইতালীয়, ফরাসি এবং জন্মানীয়গণ অনকারীই রহিলেন। অনেকেই বলেন যে, শেষোক্ত জাতিসকলের নাটকের অপেক্ষাকৃত অনৎকৰ্ষ তাঁহাদিগের অনচিকীষার ফল। এটি ভ্রম। ইহা নৈসগিক ক্ষমতার অপ্রতুলেরই ফল। অনচিকীষাও সেই অপ্রতুলের ফল। অনচিকীষাও কাৰ্য্য কারণ নহে । অন্যাকরণ যে গালি বলিয়া আজি কালি পরিচিত হইয়াছে, তাহার কারণ প্রতিভাশান্য ব্যক্তির অন্যাকরণে প্রবত্তি। অক্ষম ব্যক্তির কৃত অনাকরণ অপেক্ষা ঘণাকর আর কিছই নাই ; একে মন্দ, তাহাতে অনাকরণ। নচেৎ অনাকরণ মাত্ৰ ঘণ্য নহে; এবং বাঙ্গালির বিত্তমান অবস্থায় তাহা দোষের নহে। বরং এরপ অন্যাকরণই সর্বভাব সিদ্ধ। ইহাতে যে বাঙ্গালির সবভাবের কিছ: বিশেষ দোষ আছে, এমন বোধ করিবার কারণ নির্দেশ করা কঠিন। ইহা মানষের সর্বভাব সিদ্ধ দোষ বা গণ। যখন উৎকৃষ্ট এবং অপকূলেট একত্রিত হয়, তখন অপকৃলট সর্বভাবতই উৎকৃন্টের সমান হইতে চাহে। সমান হইবার উপায় কি ? উপায়, উৎকৃষ্ট যেরপ করে, সেইরাপ কর, সেইরূপ হইবে। তাহাকেই অনাকরণ বলে। বাঙ্গালি দেখে, ইংরেজ সভ্যতায়, শিক্ষায়, বলে, ঐশ্বষ্যে, সখে, সব্বাংশে বাঙ্গালি হইতে শ্রেষ্ঠ। বাঙ্গালি কেন না। ইংরেজের মত হইতে চাহিবে ? কিন্তু কি প্রকারে সেরাপ হইবে ? বাঙ্গালি মনে করে, ইংরেজ যাহা যাহা করে, সেইরূপ সেইরূপ করিলে ইংরেজের মত সভ্য, শিক্ষিত, সম্পন্ন, সখী হইব। অন্য যে কোন SRONR