পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী অধিকার করিতে পারে নাই। এইরূপ আরও অনেক কথা জানা গিয়াছে। পশ্চিমভারতবষীয়দিগের বীষ্যবত্তার অনেক চিহ্ন অদ্যাপি ভারতভুমে আছে। বাঙ্গালির পািৰব বীরত্ব, পািৰব। গৌরবের কি জানা আছে ? কেবল ইহাই জানি যে, যখন পশ্চিমভারতে বেদ সন্ট ও অধীত হইতেছিল, উপনিষদ সকল প্রণীত হইতেছিল, অযোধ্যার ন্যায়। সব্ব সম্পদশালিনী নগরীসকল স্থাপিতা এবং অলঙ্কৃত হইতেছিল-বাঙ্গালা তখন অনাৰ্য্যভূমি, আৰ্যগণের বাসের অযোগ্য বলিয়া পরিত্যক্ত (১)। কেবল ইহাই জানি যে, যখন উত্তরভারতে, সমস্ত আৰ্য্য বীরগণ একত্রিত হইয়া কুরক্ষেত্রজিত রাজ্যখন্ডসকল বিভাগ করিতেছিলেন, যখন পশ্চিমে মন্দবাদি অমর অক্ষয় ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰসকল প্রণীত হইতেছিল, তখন বঙ্গদেশে পৌন্ড্রাপ্রভৃতি অনায্যজাতির বাস। প্রাচীন কাল দরে থাকুক, যখন মধ্যকালে চৈনিক পরিব্রাজক হোয়েলথ সাঙ বঙ্গদেশপয্যটনে আসেন, তখন দেখিয়াছিলেন যে, এই প্রদেশ গৌরবশন্যে ক্ষদ্র ক্ষদ্র রাজ্যে বিভক্ত। বঙ্গদেশের পািকব গৌরব কোথায় ? তবে, ইহার পরে শানা যায় যে, পালবংশীয় ও সেনবংশীয় রাজগণ বহৎ রাজ্য স্থাপন করিয়াছিলেন, এবং গৌড়নগরী বড় সমদ্ধশালিনী হইয়াছিল। কিন্তু এমন কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না যে, তাঁহারা এই বাহাবলশান্য বাঙ্গালিজাতি এবং তাঁহাদিগের প্রতিবাসী। তদুপ দৰবল অনায্যজাতিগণ ভিন্ন অন্য কাহাকে আপন অধিকারভুক্ত করিয়াছিলেন। এই মাত্র প্রমাণ আছে বটে যে, মঙ্গের পয্যন্ত তাঁহাদিগের অধিকারভুক্ত ছিল। অন্যত্র তাঁহাদিগের অধিকার বিস্তার সম্পবন্ধে তিনটি মাত্র কথা আছে, তিনটিই অমলক।। প্রথম। কিম্বদন্তী আছে যে, দিল্লীতে বল্লালসেনের অধিকার ছিল। এ কথা একখানি দেশী গ্রন্থে লিখিত থাকিলেও নিতান্ত অমলক, এবং জেনেরাল কনিঙহাম সাহেব তাহার অমলকতা প্রতিপন্ন করিয়াছেন। বঙ্গেশ্বর বল্লালসেনের অধিকার দিল্লী পৰ্য্যন্ত বিস্তৃত হইলে এরােপ বহৎ ব্যাপার ঘটিত যে, অবশ্য একখানি সামান্য গ্রন্থে উল্লেখ ভিন্ন তাহার অন্য প্রমাণ কিছ পাওয়া যাইত। বঙ্গ হইতে দিল্লীর মধ্যে যে বহবিস্তৃত প্রদেশ, তথায় বঙ্গপ্রভুত্বের কোন কিম্বদন্তী, কোন উল্লেখ্য, কোন চিহ্ন অবশ্য থাকিত। কিছ নাই। দ্বিতীয়। ১৭৯৪ শালে গৌড়েশ্বর মহীপালরাজের একখানি শাসন কাশীতে পাওয়া গিয়াছিল। তাহা হইতে কেহ কেহ অনামান করেন, কাশীপ্রদেশ মহীপালের রাজ্যভুক্ত ছিল। এক্ষণে সে মত পরিত্যক্ত হইতেছে (২) । তৃতীয়। লক্ষণসেনের দই একখানি তাম্রশাসনে তাঁহাকে প্রায় সব্বদেশজেতা বলিয়া বৰ্ণনা করা আছে। পড়িলেই বাবা যায় যে, সে সকল কথা চাটকার কবির दकoवा भg । অতএব পািব্বকালে বাঙ্গালিরা যে বাহাবলশালী ছিলেন, এমত কোন প্রমাণ নাই। পািব্বকালে ভারতবর্ষস্থ অন্যান্য জাতি যে বাহাবলশালী ছিলেন, এমত প্রমাণ অনেক আছে, কিন্তু বাঙ্গালিদিগের বাহবিলের কোন প্রমাণ নাই। হোয়েলথ সাঙ সমতট রাজ্যবাসীদিগের যে কুনকীয়া গিয়াছেন, তাহা পড়িয়া বােধ হয়, প্রশ্বে বাঙ্গালিরা এইরূপ খৰাকৃত, দুবল বাঙ্গালিদিগের বাহাবল কখন ছিল না, কিন্তু কখন হইবে কি ? বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যৎ উক্তির নিয়ম এই যে, যেরপ যে অবস্থায় হইয়াছে, সেই অবস্থায় সেইরাপ আবার হইবে। যে যে কারণে বাঙ্গালি চিরকাল দৰবািল, সেই সেই কারুণ যত দিন বৰ্ত্তমান থাকিবে, তত দিন বাঙ্গালিরা বাহাবলশান্য থাকিবে। সে সকল কারণ কি ? আধনিক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকদিগের মতে, সকলই বাহ্য প্রাকৃতিক ফল। বাঙ্গালির দশাবলতাও বাহ্য প্রকৃতির ফল। ভূমি, জলবায় এবং দেশাচারের ফলে বাঙ্গালিরা দৰবল, ইহাই প্রচলিত মত। সেই সকল মতিগলির সংক্ষেপতঃ উল্লেখ করিতেছি। কেহ কেহ বলেন, এদেশের ভূমি অত্যন্ত উকবােরা-অলপ পরিশ্রমেই শস্যোৎপাদন হইতে (১) বঙ্গদর্শনের দ্বিতীয় খন্ডে “বঙ্গে ব্ৰাহ্মণাধিকার” দেখ। (S) See Introduction to Sherring's Sacred City of the Hindus, by F. E. Hall, xxxv, Note 2. RSO