পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু এই দৰবলতার যে সকল কারণ নিন্দিলন্ট হইয়াছে বা উল্লিখিত হইল, তাহতে এমত ভরসা করা যায় না যে, অলপকালে সে দলবলতা দরি হইবে। তবে ইহাও বলা যাইতে পারে যে, এমত কোন নিশ্চয়তা নাই যে, কোন কালে এ সকল কারণ অপনীত হইতে পারে না। বাল্যবিবাহই যদি এ দািব্বলতার কারণ হয়, তবে এমন ভরসা করা যাইতে পারে যে, সামাজিক রীতির পরিবত্তানে এ কুপ্ৰথা সমাজ হইতে দরি হইবে।; এবং বাঙ্গালির শরীরে বলসঞ্চার হইবে। যদি চাল এ অনিস্টের কারণ হয়, তবে এমন ভরসা করা যাইতে পারে যে, গোধমাদির চাষ এ দেশে বদ্ধি করাইলে, বাঙ্গালি ময়দা খাইয়া বলিষ্ঠ হইবে। এমন কি, কালে জলবায়রও পরিবত্তন হইতে পারে। এক্ষণে মনকেষ্যবাসের অযোগ্য যে সন্দরবন, তাহা এককালে বহজনাকীর্ণ ছিল, এমত প্রমাণ আছে। ভূতত্ত্ববিদেরা বলেন যে, ইউরোপীয় অনেক প্রদেশ, এক্ষণকার অপেক্ষা উষ্ণতর ছিল, এবং তথায় সিংহ হস্তী প্রভৃতি উষ্ণদেশবাসী জীবের আবাস ছিল। আবার এককালে সেই সকল প্রদেশ হিমশিলায় নিমগ্ন ছিল। সে সকল যােগান্তরের কথা-সহস্ৰ সহস্ৰ যাগে সে সকল পরিবত্তন ঘটিতে পারে। কিন্তু ঐতিহাসিক কালের মধ্যেও জলবায় শীততাপের পরিবত্তানের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। পািব্বকালে রোমনগরীর নিম্পেন্ন টৈবর নদের মধ্যে বরফ জমিয়া যাইত। এবং এক সময়ে ক্রমাগত চল্লিশ দিন তাহাতে বরফ জামিয়া ছিল। কৃষ্ণসাগরে (Euxine Sea) আবিদ নামক কবির জীবনকালে প্রতি বৎসর শীত ঋতুতে বরফ জামিয়া যাইত। এবং রীণ এবং রণ নামক নদীদ্বয়ের উপরে তৎসময়ে বরফ এরপ গাঢ় জমিত যে, তাহার উপর দিয়া বোঝাই গাড়ি চলিত। এক্ষণে রোমে বা কৃষ্ণসাগরে বা উক্ত নদীদ্বয়ে বরফের নামমাত্র নাই। কেহ কেহ বলেন, কৃষিকায্যের আধিকো, বন কাটায়, মাত্তিকা ভগ্ন করায়, এবং ঝিল বিল শম্পক করায় এ সকল পরিবত্তন ঘটিয়াছে। যদি কৃষিকায্যের আধিক্যে শীতপ্রদেশ উষ্ণ হয়, তবে উষ্ণপ্রদেশ শীতল হইবার কারণ কি ? গ্রীনল্যান্ড এককালে এরপ তাপযক্ত প্রদেশ ছিল যে, ইহাতে উদ্ভিদের বিশেষ আধিক্য এবং শোভা ছিল, এবং সেই জন্য উহার নাম গ্রীনলণড হইয়াছিল। এক্ষণে সেই গ্রীনল্যান্ড সৰ্ব্বদা এবং সব্বত্র হিমশিলায় মন্ডিত। এই দ্বীপের পািব্ব উপকালে বহসংখ্যক ঐশ্বৰ্য্যশালী উপনিবেশ ছিল,-এক্ষণে সে উপকলে কেবল বরফের রাশি, এবং সেই সকল উপনিবেশের চিহ্নমাত্র নাই। লাব্রাডর এক্ষণে শৈত্যাধিক্যের জন্য বিখ্যাত৷-কিন্তু যখন সহস্ৰ শ্ৰীস্টাব্দে নম্পমানেরা তথায় গমন করেন, তখন ইহারও শীতের অলপতা দেখিয়া তাঁহারা প্রীত হইয়াছিলেন, এবং ইহাতে দ্রাক্ষা জন্মিত বালিয়া ইহার দ্রাক্ষাভূমি নাম দিয়াছেন। (৭) । এ সকল পরিবত্তানের অতি দীর সম্ভাবনা। না ঘটিবারই সম্ভাবনা। বাঙ্গালির শারীরিক বল চিরকাল এইরুপ থাকবে, ইহা এক প্রকার সিদ্ধ; কেন না, দািব্বলতার নিবাৰ্য্য কারণ কিছ 62 13 की । তবে কি বাঙ্গালির ভরসা নাই ? এ প্রশেন আমাদের দাইটি উত্তর আছে। প্রথম উত্তর। শারীরিক বলই অদাপি পথিবী শাসন করিতেছে বটে। কিন্তু শারীরিক বল পশর গণ; মনষ্যে অদ্যপি অনেকাংশে পশপ্রেকৃতিসম্পন্ন, এজন্য শারীরিক বলের আজিও এতটা প্রাদ্যভাব। শারীরিক বল উন্নতি নহে। উন্নতির উপায় মাত্র। এ জগতে বাহবিল ভিন্ন কি উন্নতির উপায় নাই ? বাহবলকে উন্নতির উপায়ও বলিতে পারি না। বাহবিলে কাহারও উন্নতি হয় না। যে তাতার ইউরোপ আসিয়া জয় করিয়াছিল, সে কখন উন্নতাবস্থায় পদাপািণ করিল না। তবে বাহবিল উন্নতির পক্ষে এই জন্য আবশ্যক যে, যে সকল কারণে উন্নতির হানি হয়, সে সকল উপদ্রব হইতে আত্মরক্ষা করা চাই। সেই জন্য বাহবিলের প্রয়োজন। কিন্তু যেখানে সে প্রয়োজন নাই, সেখানে বাহবিল ব্যতীতও উন্নতি ঘটে। দ্বিতীয় উত্তরে আমরা যাহা বলিতেছি, বাঙ্গালার সব্বত্র, সৰুব নগরে, সব্ব গ্রামে সকল বাঙ্গালির হৃদয়ে তাহা লিখিত হওয়া উচিত। বাঙ্গালি শারীরিক বলে দৰবািল-তােহাঁদের বাহবিল হইবার সম্ভাবনা নাই-তবে কি বাঙ্গালির ভরসা নাই? এ প্রশেন আমাদিগের উত্তর এই যে, শারীরিক বল বাহবিল নহে। (q) The Scientific American. RSSR