পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ফ্রেনেলের মত গ্ৰহণ কর, ইহার কারণ কি ? ইহার কারণ সন্ধান করিলে, তলে অনামিতিকেই পাওয়া যাইবে। অনমানের দ্বারা তুমি জানিয়াছ যে, মাধ্যাকৰ্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের যে মত, তাহা সত্য, আলোক সম্পবন্ধে তাঁহার যে মত, তাহা অসত্য। যদি শব্দ একটি পথক প্রমাণ হইত, তবে তাঁহার সকল মতই তুমি গ্রাহ্য করিতে। সকল মতই গ্রাহ্য। ইহার কারণ শব্দ একটি সর্বতন্ত্র প্রমাণ বলিয়া গণ্য-আপ্তবাক্য মাত্র গ্রাহ্য, ইহা আষ্য দশনশাস্ত্রের আজ্ঞা। এইরপ বিশেষ বিচার ব্যতীত ঋষি ও পন্ডিতদিগের মতমাত্রই গ্রহণ করা, ভারতবষের অবনতির একটি যে কারণ, ইহা বলা বাহল্য। অতএব দার্শনিকদিগের এই একটি ক্ষ-দ্র ভ্ৰান্তিতে সামান্য কুফল ফলে নাই । প্রত্যক্ষ, অনমান এবং শব্দ ভিন্ন নৈয়ায়িকেরা উপমিতিকেও একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ বিবেচনা করেন। বিচার করিয়া দেখিলে সিদ্ধ হইবে যে, উপমিতি, অনামিতির প্রকারভেদ মাত্র, এবং সেই জন্য সাংখ্যাদি দর্শনে উপমিতি সর্বতন্ত্র প্রমাণ বলিয়া গণ্য হয় নাই। অতএব উপমিতির বিস্তারিত উল্লেখ প্রয়োজনীয় বোধ হইল না। বস্তুতঃ প্রত্যক্ষ এবং অন্যমানই জ্ঞানের মলে। তাহার পর দেখিতে হইবে যে, অনমানও প্রত্যক্ষমািলক। যে জাতীয় প্রত্যক্ষ কখন হয় নাই, সে বিষয়ে অনামান হয় না। তুমি যদি কখন পব্বে মেঘ না দেখিতে বা আর কেহ কখন না দেখিত, তবে তুমি রুদ্ধদ্বার গহমধ্যে মেঘগম্ভজন শনিয়া কখন মেঘান মান করিতে পারিতে না। তুমি যদি কখন যথিকা-গন্ধ প্রত্যক্ষ না করিতে, তবে অন্ধকার গহে থাকিয়া যাথিকা-স্ত্ৰাণ পাইয়া তুমি কখন অনামান করিতে পারিতে না যে, গহমধ্যে যাথিকা আছে। এইরূপ অন্যান্য পদার্থ সম্বন্ধে বলা যাইতে পারে। তবে অনেক সময়ে দেখা যাইবে যে, একটি অনমানের মািল, বহতর বহজাতীয় পািব্ব প্রত্যক্ষ। এক একটি বৈজ্ঞানিক নিয়ম সহস্ৰ সহস্ৰ জাতীয় প্রত্যক্ষের ফল। অতএব প্রত্যক্ষই জ্ঞানের একমাত্ৰ মলা-সকল প্রমাণের মল (১)। অনেকে দেখিয়া বিস্মিত হইবেন যে, দর্শনশাস্ত্রের দই তিন সহস্ৰ বৎসরের পর, ঘরিয়া ঘরিয়া আবার সেই চাব্বাকের মতে আসিয়া পড়িতেছে। ধন্য আৰ্যবদ্ধি!! যাহা এত কালে হম, মিল, বেন প্রভৃতির দ্বারা সংস্থাপিত হইয়াছে।--দাই সহস্ৰাধিক বৎসর পাবে বহিস্পতি তাহা প্রতিপন্ন করিয়া গিয়াছেন কেহ না ভাবেন যে, আমরা এমন বলিতেছি যে, প্রত্যক্ষ ভিন্ন প্রমাণ নাই-আমরা বলিতেছি যে, সকল প্রমাণের মলে প্রত্যক্ষ। বহিস্পতি ঠিক তাহাই বলিয়াছিলেন কি না, তাঁহার গ্রন্থ সকল লপ্ত হওয়ায় নিশ্চয় করা কঠিন। প্রত্যক্ষই জ্ঞানের একমাত্র মািল, কিন্তু এই তত্ত্বের মধ্যে ইউরোপীয় দার্শনিকদিগের মধ্যে একটি ঘোরতর বিবাদ আছে। কেহ কেহ বলেন যে, আমাদিগের এমন অনেক জ্ঞান আছে যে, তাহার মিলে প্রত্যক্ষে পাওয়া যায় না। যথা-কাল, আকাশ, ইত্যাদি। কথাটি বাঝা কঠিন। আকাশ সম্পবন্ধে একটি সহজ কথা গ্রহণ করা যাউক,-যথা, দাইটি সমানান্তরাল রেখা। যতদর টানা যাউক, কখন মিলিত হইবে না, ইহা আমরা নিশ্চিত জানি। কিন্তু এ জ্ঞান আমরা কোথা পাইলাম ? প্রত্যক্ষবাদী বালিবেন, “প্ৰত্যক্ষের দ্বারা! আমরা যত সমানান্তরাল রেখা দেখিয়াছি, তাহা কখন মিলিত হয় নাই।” তাহাতে বিপক্ষেরা প্ৰত্যািত্তর করেন। যে, “জগতে যত সমানান্তরাল রেখা হইয়াছে, সকল তুমি দেখা নাই-তুমি যাহা দেখিয়াছ, তাহা মিলে নাই বটে, কিন্তু তুমি কি প্রকারে জানিলে যে, কোন কালে কোথায় এমন দটি সমানান্তরাল রেখা হয় নাই বা হইবে না যে, তাহা টানিতে টানিতে এক স্থানে মিলিবে না ? যাহা মনষ্যের প্রত্যক্ষ হইয়াছে, তাহা হইতে তুমি কি প্রকারে অপ্রত্যক্ষীভূতের নিশ্চয় করিলে? অথচ আমরা জানিতেছি যে, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহা সত্য;-কস্মিন কালে কোথাও এমন দাইটি সমানান্তরাল রেখা হইতে পারে না যে, তাহা মিলিবে। তবে প্রত্যক্ষ ব্যতীত তোমার আর কোন জ্ঞানমল আছে--নিহিলে তুমি এই প্রত্যক্ষের অতিরিক্ত জ্ঞানটবুকু কোথায় পাইলে ?” এই কথা বলিয়া, বিখ্যাত জম্পমান দার্শনিক কান্ত, লক ও হামের প্রত্যক্ষবাদের প্রতিবাদ করেন। এই অতিরিক্ত জ্ঞানের মােল তিনি এই নিন্দেশ করেন যে, যেখানে বহিৰিবষয়ের জ্ঞান আমাদিগের ইন্দ্রিয়ের দ্বারা হইয়া থাকে, সেখানে বহি বিষয়ের প্রকৃতি সম্পবন্ধে কোন তত্ত্বের (১) এই সকল মত আমি এক্ষণে পরিত্যাগ করিয়াছি। RRO o