পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী ব্যতিব্যস্ত, তাঁহাদিগের আমরা জিজ্ঞাসা করি যে, আপনারা বালিকাদিগের হৃদয় হইতে প্রাচীন ধৰ্ম্মবন্ধন বিষাক্ত করিতেছেন, তাহার পরিবত্তে কি সংস্থাপন করিতেছেন ?* তিন রকম S বঙ্গদর্শনে ‘নবীনা এবং প্রাচীন” কে লিখিল ? যিনি লিখন, তিনি মনে করিয়াছেন, অবলা সত্ৰীজাতি কিছ কথা কহিবে না, অতএব যাহা ইচ্ছা, তাহা লিখি। জানেন না যে, সম্পমাজনী সত্ৰীলোকেরই আয়ন্ধ। ভাল, নবীন মহাশয়, আপনারা নবীনা প্রাচীনার গণ দোষের তুলনা করিয়াছেন, নবীন ও প্রাচীনে কি তুলনা হয় না ? তুলনা করিলে দোষের ভাগ কোন দিকে ভারি হইবে ? প্রাচীনের অপেক্ষা নবীনের গণের মধ্যে দেখি, তোমরা একটি ইংরেজি শিখিয়াছ। কিন্তু ইংরেজি শিখিয়া কাহার কি উপকার কারিয়াছ ? ইংরেজি শিখিয়া কেরাণীগিরি শিখিয়াছ দেখিতে পাই। কিন্তু মনীষ্যত্ব ? শান, প্রাচীনে নবীনে প্রভেদ কি, বলি। প্রাচীনেরা পরোপকারী ছিলেন; তোমরা আত্মোপকারী। প্রাচীনেরা সত্যবাদী ছিলেন; তোমরা কেবল প্রিয়বাদী। প্রাচীনেরা ভক্তি করিতেন। পিতা-মাতাকে; নবীনের ভক্তি করা পত্নী বা উপপত্নীকে। সোনার বেনে। সত্য বটে, তাঁহারা পৌত্তলিক ছিলেন, কিন্তু তোমরা বোতালিক। জগদীশ্বরীর স্থানে তোমরা অনেকেই ধ্যান্যেশ্বরীকে স্থাপনা করিয়াছে; ব্ৰহ্মা বিষ্ণৰ মহেশ্বরের স্থানে ব্রাপিড, রম, জিন। বিষয়, সেরি তোমাদের ষস্ঠী মনসার মধ্যে। বঙ্গীয় বাবর ভ্ৰাতৃস্নেহ সমন্বন্ধীর উপর বৰ্ত্তিয়াছে, অপত্যস্নেহ ঘোড়া কুক্কারের উপর বত্তিয়াছে; পিতৃভক্তি আপিসের সাহেবের উপর বৰ্ত্তিয়াছে, আর মাতৃভক্তি ? পাচিকার উপরে। আমরা অতিথি অভ্যাগত দেখিলে মহা বিপদ মনে করি বটে, তোমরা তাহাদিগকে গলা ধাক্কা দাও । আমরা অলস; তোমরা শােধ অলস নও— তোমরা বাবা! তবে ইংরেজ বাহাদর নাকে দড়ি দিয়া তোমাদের ঘানিগাছে ঘরোয়, বল নাই বলিয়া ঘোের। আর আমরাও নাকে দড়ি দিয়া ঘরাই, বদ্ধি নাই বলিয়া ঘোর। আমরা লেখাপড়া শিখি নাই বলিয়া আমাদের ধম্পেমার বন্ধন নাই, আর তোমাদের ? তোমাদের ধর্মের বন্ধন বড় দঢ়, কেন না, তোমাদের সে বন্ধনের দড়ি একদিকে শাড়ি, আর একদিকে বারসত্ৰী টানিয়া আটিয়া দিতেছে; তোমরা ধৰ্ম্মম-দাঁড়িতে মদের কলসী গলায় বধিয়া, প্রেমসাগরে ঝাঁপ দিতেছ-গরিব “নবীনা” খনের দায়ে ধরা পড়িতেছে। তোমাদের আবার ধমের ভয় কি - তোমরা কি মান ? ঠাকুর দেবতা ? যিশগ্ৰীলিট ট’ ধৰ্ম্মম মান ? পাপ পণ্য মান ? কিছ না-কেবল আমাদের এই আলতা-পরা মল-বেড়া শ্ৰীচরণ; সেও নাথির জবালায়। শ্ৰীচন্ডিকাসিন্দরী দেবী। ܓ ܗ সম্পাদক মহাশয়! আপনাদের শ্ৰীচরণে এ কিঙ্করীকুল কোন দোষে দোষী? আমরা কি জানি ?--আপনারা শিখাইবেন, আমরা শিখিব-আপনারা গর, আমরা শিষ্য-কিন্তু শিক্ষাদান এক, নিন্দা আর। বঙ্গদর্শনে “নবীনার” প্রতি এত কটক্তি কেন ? আমাদের সহস্ৰ দোষ আছে স্বীকার করি। একে সত্ৰীজাতি, তাতে বাঙ্গালির মেয়ে, জাতিতে কাঠমল্লিকা, তাহাতে মরভূমে জন্মিয়াছি-দোষ না থাকিবে কেন ? তবে কতকগলি দোষ আপনাদেরই গণে জন্মিয়াছে। আপনাদের গণে, দোষে নহে। আপনারা আমাদের এত ভাল না বাসিলে, আমাদের এত দোষ ঘটিত না। আপনারা আমাদের সখী করিয়াছেন, এজন্য আমরা অলস। মাথার ফলটি খসিয়া পড়িলে, আপনারা তুলিয়া পরান। আপনারা জল হইয়া যে

  • “নবীনা ও প্রাচীনা।” এই প্ৰবন্ধ বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইলে পর, সত্ৰীলোকের পক্ষ হইতে যে উত্তর আছে, তাহা নিম্নলিখিত কৃত্রিম পত্র তিনখানিতে লিখিত হইয়াছিল।

&68