পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রবন্ধ-ৰাজদেশের কৃষক পশিডতদিগের মতের অনৈক্য, তখন কলপনমাত্রপ্রসত ব্যাপারে নানা মানির নানা মত না হইবে কেন ? কেবল চক্ষ মাদিয়া, ভাবিয়া, মন হইতে অলঙ্কারের সন্টি করিতে থাকিলে, অলঙ্কারসম্বন্ধে মতভেদ হইবে, তাহার আশ্চৰ্য্য কি ? কিন্তু কতকগালিন শব্দ দ্বারা যে কতকগালিন ভাবের উদয় হয়, তাহা সকলকেই স্বীকার করিতে হইবে। তাকিকেরা বলিতে পারেন যে, কোমল সরে যদি শোেকও বকায়, প্রেমও বকায়, উন্মাদও ব্যবস্থায়, তবে সবরভেদ দ্বারা একটি ভাবই কি প্রকারে উপলব্ধি হইতে পারে ? উত্তর, সে উপলব্ধি কেবল সংস্কারাধীন। আমাদের সঙ্গীতবিদ্যায় সরের বাহাল্য এবং প্রভেদ অসীম, কিন্তু কেবল শিক্ষা এবং অভ্যাসেই তাহার তারতম্য উপলব্ধ হইতে পারে। সামান্য অভ্যাসে, বালকেরা সানাই শনিলে নাচে, হাইলন্ডরেরা বাগ পাইপে গা ফলায়, এবং প্রাচীন হিন্দরা আগমনী শানিলে কাঁদেন। এই অভ্যাস বদ্ধমলে এবং সশিক্ষায় পরিণত হইলে, ভাবসগুয়ের আধিক্য জন্মে, পাণ্ডখােন পঙখ অন্যভব করিতে পারা যায়। শিক্ষাহীন মঢ়েরা যাহাতে হাসে, ভাবকেরা তাহাতে কাঁদেন। অতএব লোকের যে সাধারণ সংস্কার আছে যে, সঙ্গীতসখান ভব মনষ্যের স্বভাব সিদ্ধ, তাহা ভ্ৰমাত্মক। কতক দর মাত্র ইহা সত্য বটে যে, সম্বর সকলেরই ভাল লাগে-স্বাভাবিক তাল বোধ সকলেরই আছে। কিন্তু উচ্চশ্রেণীর সঙ্গীতের সংখ্যানভব, শিক্ষা ভিন্ন সম্ভবে না। অভ্যাসশান্য ব্যক্তি যেমন পলাশডুভোজনে বিরক্ত, অশিক্ষিত ব্যক্তি তেমনি উৎকৃষ্টতর সঙ্গীতে বিরক্ত। কেন না, উভয় অভ্যাসাধীন। সংস্কারহীন ব্যক্তি রাগ-রাগিণী-পরিপািণ কালোয়াতি গান শনিতে চাহেন না, এবং বহামিলনবিশিস্ট ইউরোপীয় সঙ্গীত বাঙ্গালীর কাছে অরণ্যে রোদন। কিন্তু উভয় স্থানেই, অনাদরটি অসভ্যতার চিহ্ন বলিতে হইবে। যেমন রাজনীতি, ধৰ্ম্মমর্থনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি সকল মনষ্যেরই জানা উচিত, তেমনি শরীরার্থ স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম, এবং চিত্তপ্রসাদাৰ্থ মনোমোহিনী সঙ্গীতবিদ্যাও সকল ভদ্রলোকের জানা কৰ্ত্তব্য। শাস্ত্রে রাজকুমার রাজকুমারীদের অভ্যাসোপযোগী বিদ্যার মধ্যে সঙ্গীত প্রধান স্থান পাইয়াছে। বাঙ্গালীর মধ্যে পীরকন্যাদিগের সঙ্গীত শিক্ষা যে নিষিদ্ধ বা নিন্দনীয়, তাহা আমাদিগের অসভ্যতার চিহ্ন। কুলকামিনীরা সঙ্গীতনিপণা হইলে, গহমধ্যে এক অত্যন্ত বিমলানন্দের আকর স্থাপিত হয়। বাবদের মদ্যাসক্তি এবং অন্য একটি গারতের দোষ অনেক অপনীত হইতে পারে। এতদ্দেশে নিৰ্ম্মমল আনন্দের অভাবই অনেকের মদ্যাসক্তির কারণ-সঙ্গীতপ্রিয়তা হইতেই অনেকের বারসত্ৰীবশ্যতা জন্মে। বঙ্গদেশের কৃষক [ “বঙ্গদেশের কৃষকে” এ দেশীয় কৃষকদিগের যে অবস্থা বৰ্ণিত হইয়াছে, তাহা আর নাই। জমীদারের আর সেরাপ অত্যাচার নাই। - নতেন আইনে তাঁহাদের ক্ষমতাও কমিয়া গিয়াছে। কৃষকদিগের অবস্থারও অনেক উন্নতি হইয়াছে। অনেক স্থলে এখন দেখা যায়, প্রজাই অত্যাচারী, জমীদার দািব্বল। এই সকল কারণে আমি এতদিন এ প্রবন্ধ পনিমাদিত করি নাই। এক্ষণে যে আমি ইহা পনিমাদিত করিতেছি, তাহার অনেকগলি কারণ আছে। (১) ইহাতে পাঁচিশ বৎসর পর্বে দেশের যে অবস্থা ছিল, তাহা জানা যায়। ভবিষ্যৎ ইতিহাসবেত্তার ইহা কায্যে লাগিতে পারে। (২) ইহার পর হইতে কৃষকদিগের অবস্থা সমাজে আন্দোলিত হইতে লাগিল। এক্ষণে যে উন্নতি সাধিত হইয়াছে, ইহাতে তাহার প্রথম সত্রপাত, সতরাং পনিমাদ্রিত হইবার এ প্রবন্ধ একটি দাবি দাওয়া রাখে। (৩) ইহাতে কৃষকদিগের যে অবস্থা বর্ণিত হইয়াছে, তাহা এখনও অনেক প্রদেশে অপরিবত্তি তই আছে। যতগলি উৎপাতের কথা আছে, তাহা সব কোন স্থানেই এখনও অন্তহিত হয় নাই। (৪) এ প্রবন্ধ যখন প্রকাশিত হয়, তখন কিছ যশোলাভ করিয়াছিল, এবং (৫) আমি বঙ্গদর্শনে “সাম্য” নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করিয়া পশ্চাৎ তাহা পনিমাদ্রিত করিয়াছিলাম। “বঙ্গদেশের কৃষক” আর পনিমাদিত করিব না, বিবেচনায় তাহার কিয়দংশ “সাম্য”-মধ্যে প্রক্ষিপ্ত করিয়াছিলাম। এক্ষণে সেই “সাম্য” শীৰ্ষক পান্তকখানি বিলপ্ত করিয়াছি। সতরাং “বঙ্গদেশের কৃষক’ পনিমাদ্রিত করার আর একটা কারণ হইয়াছে। অর্থশাস্ত্রাঘটিত ইহাতে কয়েকটা কথা আছে, তাহা আমি এক্ষণে ভ্ৰান্তিশ্যান্য মনে করি না। কিন্তু অর্থশাস্ত্র সম্পবন্ধে কোন কথা ভ্ৰান্তি, আর কোন কথা খুব সত্য, ইহা নিশ্চিত করা দঃসাধ্য। অতএব কোন প্রকার সংশোধনের চেষ্টা করিলাম না। ] SRfA