পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাৰলী প্রথম পরিচ্ছেদ-দেশের শ্ৰীবদ্ধি আজি কালি বড় গোল শানা যায় যে, আমাদের দেশের বড় শ্ৰীবদ্ধি হইতেছে। এত কাল আমাদিগের দেশ উৎসন্ন ঘাইতেছিল, এক্ষণে ইংরাজের শাসনকৌশলে আমরা সভ্য হইতেছি। কি মঙ্গল, দেখিতে পাইতেছ না ? ঐ দেখ, লৌহবত্মো লৌহতুরঙ্গ, কোটি উচ্চৈঃশ্রবাকে বলে অতিক্ৰম করিয়া, এক মাসের পথ এক দিনে যাইতেছে। ঐ দেখ, ভাগীরথীর যে উত্তাল তরঙ্গমালায় দিগগজ ভাসিয়া গিয়াছিল, অগ্নিময়ী তরণী ক্রীড়াশীল হংসের ন্যায় তাহাকে বিদীণ করিয়া বাণিজ্য দ্রব্য বহিয়া ছটিতেছে। কাশীধামে তোমার পিতার অদ্য প্রাতে সাংঘাতিক রোগ হইয়াছে-বিদ্যুৎ আকাশ হইতে নামিয়া আসিয়া তোমাকে সংবাদ দিল, তুমি রাত্রিমধ্যে তাঁহার পদপ্রান্তে বসিয়া তাঁহার শাশ্রষা করিতে লাগিলে। যে রোগ পকেব। আরাম হইত না, এখন নবীন চিকিৎসাশাস্ত্রের গণে ডাক্তারে তাহা আরাম করিল। যে ভূমিখণ্ড, নক্ষত্রময় আকাশের ন্যায় অট্টালিকাময় হইয়া এখন হাসিতেছে, উহা ব্যাঘ্র ভল্লকের আবাস ছিল। ঐ যে দেখিতেছ। রাজপথ, পঞ্চাশ বৎসর পক্ষেব ঐ স্থানে সন্ধ্যার পর, হয় কাদার পিছলে পা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া থাকিতে, না হয়। দসহস্তে প্রাণত্যাগ করিতে; এখন সেখানে গ্যাসের প্রভাবে কোটি চন্দ্র জীবলিতেছে। তোমার রক্ষার জন্য পাহারা দাঁড়াইয়াছে, তোমাকে বহনের জন্য গাড়ি দাঁড়াইয়া আছে। যেখানে বসিয়া আছ, তাহা দেখ। যেখানে আগে ছোড়া কাঁথা, ছোড়া সাপ ছিল, এখন সেখানে কাপোিট, কোচ, ঝাড়, কান্ডেলাৱা, মারবেল, আলাবাস্টার-কত বলিব ? যে বাব দরবীণ কাষিয়া বহিস্পতি গ্রহের উপগ্ৰহগণের গ্রহণ পৰ্যবেক্ষণ করতেছে, পঞ্চাশ বৎসর পকেবা জন্মিলে উনি এত দিন চাল কলা ধােপ দীপ দিয়া বহিস্পতির পজা করিতেন। আর আমি যে হতভাগ্য, চেয়ারে বসিয়া ফলিস্কেপ কাগজে বঙ্গদর্শনের জন্য সমাজতত্ত্ব লিখিতে বসিলাম, এক শত বৎসর পর্বে হইলে, আমি এতক্ষণ ধরাসনে পশবিশেষের মত বসিয়া ছোড়া তুলট নাকের কাছে ধরিয়া নবমীতে লাউ খাইতে আছে কি না, সেই কচকচিতে মাথা ধরাইতাম । তবে কি দেশের বড় মঙ্গল হইতেছে না ? দেশের বড় মঙ্গল-তোমরা একবার মঙ্গলের জন্য জয়ধবনি কর! এই মঙ্গল ছড়াছড়ির মধ্যে আমার একটি কথা জিজ্ঞাসার আছে, কাহার এত মঙ্গল ? হাসিম শেখ আর রামা কৈবৰ্ত্ত দই প্রহরের রৌদ্রে, খালি মাথায়, খালি পায়ে এক হাঁট, কাদার উপর দিয়া দইটা অস্থিচৰ্ম্মম বিশিষ্ট বলদে, ভোঁতা হাল ধার করিয়া আনিয়া চাষিতেছে, উহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে ? উহাদের এই ভদ্রের রৌদ্রে মাতা ফাটিয়া যাইতেছে, তৃষায় ছাতি ফাটিয়া যাইতেছে, তাহার নিবারণজন্য অঞ্জলি করিয়া মাঠের কদম পান করিতেছে; ক্ষধায় প্রাণ যাইতেছে, কিন্তু এখন বাড়ী গিয়া আহার করা হইবে না, এই চাষের সময়। সন্ধ্যাবেলা গিয়া উহারা ভাঙ্গা পাতরে রাঙ্গা রাঙ্গা বড় বড় ভাত, লন, লঙ্কা দিয়া আধাপেটা খাইবে। তাহার পর ছোড়া মাদরে, না হয়। ভূমে, গোহালের এক পাশে শয়ন করিবে-উহাদের মশা লাগে না। তাহারা পরদিন প্রাতে আবার সেই এক হাঁট কাদায় কাজ করিতে যাইবে-যাইবার সময়, হয়। জমীদার, নয়। মহাজন, পথ হইতে ধরিয়া লইয়া গিয়া দেনার জন্য বসাইয়া রাখবে, কাজ হইবে না। নয় ত চাষিবার সময় জমীদার জমীখানি কাড়িয়া লইবেন, তাহা হইলে সে বৎসর কি করিবে ? উপবাস-সপরিবারে উপবাস। বল দেখি চসমা-নাকে বাব! ইহাদের কি মঙ্গল হইয়াছে ? তুমি লেখাপড়া শিখিয়া ইহাদিগের কি মঙ্গল সাধিয়াছ ? আর তুমি ইংরাজ বাহাদর! তুমি যে মেজের উপরে এক হাতে হংসপক্ষ ধরিয়া বিধির সন্টি ফিরাইবার কলপনা করিতেছি, আর অপর হস্তে ভ্ৰমরকৃষ্ণ শমিশ্রগেছে কলডিয়িত করিতেছি,-তুমি বল দেখি যে, তোমা হইতে এই হাসিম শেখ আর রামা কৈবত্তের কি উপকার হইয়াছে ? আমি বলি, অণমাত্র না, কণামাত্ৰও না। তাহা যদি না হইল, তবে আমি তোমাদের সঙ্গে মঙ্গলের ঘটায় হলধৰনি দিব না। দেশের মঙ্গল ? দেশের মঙ্গল, কাহার মঙ্গল ? তোমার আমার মঙ্গল দেখিতেছি, কিন্তু তুমি আমি কি দেশ ? তুমি আমি দেশের কয় জন ? আর এই কৃষিজীবী কয় জন ? তাহদের ত্যাগ করিলে দেশে কয় জন থাকে ? হিসাব করিলে তাহারাই S&bዖህ