পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক দেশ-দেশের অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী। তোমা হইতে আমা হইতে কোন কাৰ্য্য হইতে পারে ? কিন্তু সকল কৃষিজীবী ক্ষেপিলে কে কোথায় থাকিবে ? কি না হইবে ? যেখানে তাহাদের মঙ্গল নাই, সেখানে দেশের কোন মঙ্গল নাই। দেশের শ্ৰীবদ্ধি হইতেছে, স্বীকার করি। আমরা এই প্রবন্ধে একটি উদাহরণের দ্বারা প্রথমে দেখাইব যে, দেশের কি প্রকারে শ্ৰীবদ্ধি হইতেছে। পরে দেখাইব যে, কৃষকেরা সে শ্ৰীবদ্ধির ভাগী নহে। পরে দেখাইব যে, তাহা কাহার দোষ। ব্রিটিশ অধিকারে রাজ্য সশাসিত। পরজাতীয়েরা জনপদপীড়া উপস্থিত করিয়া যে দেশের অর্থাপহরণ করিবে, সে আশঙ্কা বহকাল হইতে রহিত হইয়াছে। আবার স্বদেশীয়, সািবজাতীয়ের মধ্যে পরস্পরে যে সঞিতাৰ্থ অপহরণ করবে, সে ভয়ও অনেক নিবারণ হইয়াছে। দস্যভীতি, চৌরভীতি, বলবৎকর্তৃক দািব্বলের সম্পত্তিহরণের ভয়, এ সকলের অনেক লাঘব হইয়াছে। আবার রাজা বা রাজপরিষেরা প্রজার সঞ্চিতাৰ্থ সংগ্ৰহ-লালসায় যে বলে ছলে কৌশলে লোকের সব্বস্বাপহরণ করবেন, সে দিনও নাই। অতএব যদি কেহ অৰ্থসঞ্চায়ের ইচ্ছা! করে, তবে তাহার ভরসা হয় যে, সে তাহা ভোগ করিতে পরিবে, এবং তাহার উত্তরাধিকারীরাও তাহা ভোগ করিতে পারিবে। যেখানে লোকের এরপ ভরসা থাকে, সেখানে লোকে সচরাচর সংসারী হয়। যেখানে পরিবারপ্রতিপালনশক্তি সম্পবন্ধে অনিশ্চয়তা, সেখানে লোকে সংসারধমে বিরাগী। পরিণয়াদিতে সাধারণ লোকের অন্যরাগের ফল প্রজাবদ্ধি। অতএব, ব্রিটিশ শাসনে প্রজাবদ্ধি হইয়াছে। প্রজাবদ্ধির ফল, কৃষিকায্যের বিস্তার। যে দেশে লক্ষ লোকের মাত্র আহারোপযোগী শস্যের আবশ্যক, সে দেশে বাণিজ্যের প্রয়োজন বাদে কেবল তদােপযক্ত ভূমিই কষিত হইবে,-কেন না, অনাবশ্যক শস্য-যাহা কেহ খাইবে না, ফেলিয়া দিতে হইবে,-তাহা কে পরিশ্রম স্বীকার করিয়া উৎপাদন করিতে যাইবে ? দেশের অবশিষ্ট ভূমি পতিত বা জঙ্গল বা তদ্রুপ অবস্থাবিশেষে থাকিবে। কিন্তু প্রজাবদ্ধি হইয়া যখন সেই এক লক্ষ লোকের স্থানে দেড় লক্ষ লোক হয়, তখন আর বেশী ভূমি আবাদ না করিলে চলে না। কেন না, যে ভূমির উৎপন্নে লক্ষ লোকমাত্র প্রতিপালিত হইত, তাহার শস্যে দেড় লক্ষ কখন চিরকাল জীবনধারণ করিতে পারে না। সতরাং প্রজাব,দ্ধি হইলেই চাষ বাড়িবে। যাহা পর্বে পতিত বা জঙ্গল ছিল, তাহা ক্রমে আবাদ হইবে। ব্রিটিশ শাসনে প্রজাবদ্ধি হওয়াতে সেইরূপ হইয়াছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পকেবর অপেক্ষা এক্ষণে অনেক ভূমি কষিত হইতেছে। আর এক কারণে চাষের বদ্ধি হইতেছে। সেই দ্বিতীয় কারণ বাণিজ্যবদ্ধি। বাণিজ্য বিনিময় মাত্র। আমরা যদি ইংলন্ডের বস্ত্ৰাদি লই, তবে তাহার বিনিময়ে আমাদের কিছ সামগ্ৰী ইংলন্ডে পাঠাইতে হইবে, নাহিলে আমরা বস্ত্ৰ পাইব না। আমরা কি পাঠাই ? অনেকে বলিবেন, “টাকা”; তাহা নহে, সেটি আমাদের দেশীয় লোকের একটি গারতের ভ্রম। সত্য বটে, ভারতবষের কিছ. টাকা ইংলন্ডে যায়,-সেই টাকাটি ভারতব্যাপারে ইংলন্ডের মনোফা। সে টাকা ইংলন্ড হইতে প্রাপ্ত সামগ্রীর কোন অংশের মাল্য নহে, যদি বিবেচনা কর, তাহাতেও হানি নাই। অধিকাংশের বিনিময়ে আমরা কৃষিজাত দ্রব্যসকল পাঠাই-যথা, চাউল, রেশম, কাপািশ, পাট, নীল ইত্যাদি। ইহা বলা বাহাল্য যে, যে পরিমাণে বাণিজ্যবদ্ধি হইবে, সেই পরিমাণে এই সকল কৃষিজাত সামগ্রীর আধিক্য আবশ্যক হইবে। সতরাং দেশে চাষও বাড়িবে। ব্রিটিশ রাজ্য হইয়া পৰ্যন্ত এ দেশের বাণিজ্য বাড়িতেছে-সতরাং বিদেশে পাঠাইবার জন্য বৎসর বৎসর অধিক কৃষিজাত সামগ্রীর আবশ্যক হইতেছে, অতএব এ দেশে প্রতি বৎসর চাষ t চাষ বদ্ধির ফল কি ? দেশের ধনবদ্ধি, শ্ৰীবদ্ধি। যদি পাৰোব ১০০ বিঘা জমী চাষ করিয়া বার্ষিক ১০০ টাকা পাইয়া থাকি, তবে ২০০ বিঘা চাষ করিলে, নানাধিকক্ষ ২oo, টাকা পাইব, ৩oo শত বিঘা চাষ করিলে, ৩oo, টাকা পাইব । বঙ্গদেশে দিন দিন চাষের বদ্ধিতে দেশের কৃষিজাত ধন বদ্ধি পাইতেছে। আর একটা কথা আছে। সকলে মহাদঃখিত হইয়া বলিয়া থাকেন, এক্ষণে দিনপাত করা

  • সমাজতত্ত্ববিদেরা বঝিবেন, এখানে “নানাধিক” শব্দটি ব্যবহার করিবার বিশেষ তাৎপৰ্য্য আছে, কিন্তু সাধারণপাঠ্য এই প্রবন্ধে তাহা বক্সাইবার প্রয়োজন নাই।

3 S-SS RbyNS