পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক অধিকার থাক বা না থাকা, জমীদার উঠিতে বলিলেই উঠিতে হয়। কয়জন প্ৰজা জমীদারের সঙ্গে বিবাদ করিয়া ভিটায় থাকিতে পারে ? সতরাং যে বেশী খাজানা স্বীকৃত হইবে, তাহাকেই জমীদার বসাইবেন। পর্বেই কথিত হইয়াছে, লোকসংখ্যা বদ্ধি হইতেছে। তাহার বিশেষ কোন প্রমাণ নাই বটে,* কিন্তু ইহা অন্যভবের দ্বারা সিদ্ধ। প্রজাব,দ্ধি হইলেই জমীর খাজনা বাড়িবে। যে ভূমির আগে এক জন প্রাথী ছিল, প্রজাবদ্ধি হইলে তাহার জন্য দাই জন প্রাথী দাঁড়াইবে। যে বেশী খাজানা দিবে, জমীদার তাহাকেই জমী দিবেন। রামা কৈবত্তের জমীটকু ভাল, সে এক টাকা হারে খাজনা দেয়। হাসিম শেখ সেই জমী চায়-সে। দেড় টাকা হার স্বীকার করিতেছে। জমীদার রামাকে উঠিতে বললেন। রামার হয় তা দখলের অধিকার নাই, সে অমনি উঠিল। নয় তা অধিকার আছে, কিন্তু কি করে ? কুমীরের সঙ্গে বিবাদ করিয়া জলে বাস করিবে কি প্রকারে? অধিকার বিসঙ্জন দিয়া সেও উঠিল। জমীদার বিঘা পিছ আট আনা বেশী পাইলেন। এইরপে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর কোন সময়ে না কোন সময়ে, কোন সংযোগে না কোন সযোগে, দেশের অধিকাংশ ভূমির হার বদ্ধি হইয়াছে। আইন আদালতের আবশ্যক করে নাই —বাজারে যেরূপ গ্রাহকবদ্ধি হইলে ঝিঙ্গা পটলের দর বাড়ে, প্রজাবদ্ধিতে সেইরােপ জমীর হার বাড়িয়াছে। সেই বদ্ধি, জমীদারের উদরেই গিয়াছে। অনেকেই রাগ করিয়া এ সকল কথা অস্বীকার করবেন। তাঁহারা বলিবেন, আইন আছে, নিরিখ আছে, জমীদারের দয়া ধৰ্ম্মম আছে। আইন-সে। একটা তামাসা মাত্র-বড় মানষেই খরচ করিয়া সে তামাসা দেখিয়া থাকে। নিরিখ পাকবািবশিত প্ৰণালীতে বাড়িয়া গিয়াছে। আর জমীদারের দয়া ধৰ্ম্মম-যখন আর সন্ধু ফিরে না, তখন লোকের দয়া ধৰ্ম্মেমর আবিৰ্ভাব হয়। সক্রি ফিরাইয়া ফিরাইয়া, বঙ্গদেশের অধিকাংশ বদ্ধিত ধায্য আয় ভূস্বামীগণ আপনাদিগের হস্তগত করিয়াছেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ে জমীদারের যে হস্তবিদ ছিল, অনেক স্থানেই তাহার స్టోక్లాస్ হইয়াছে। কোথাও দশগণ হইয়াছে। কিছ না বাড়িয়াছে, এমন জমীদারী অলপ । পৃষ্ণু খুলে বণিক পারেন, মহাজন পায়েন-ক্ষী কি পায়? যে এই ফসল উৎপন্ন করে, সে কি পায় ? আমরা এমত বলি না যে, সে কিছই পায় না। বিন্দ বিসগমাত্র পাইয়া থাকে। যাহা পায়, তাহাতে তাহার কিছ অবস্থার পরিবত্তন হয় নাই। অদ্যাপি ভূমির উৎপলেন তাহার দিন চলে না। অতএব যে সামান্য ভাগ কৃষকসম্প্রদায় পায়, তাহা না পাওয়ারই মধ্যে। যার ধন, তার ধন নয়। যাহার মাথার কালঘাম ছটিয়া ফসল জন্মে, লাভের ভাগে সে কেহ হইল না। আমরা দেখাইলাম যে, দেশের অত্যন্ত শ্ৰীবদ্ধি হইয়াছে। অসাধারণ কৃষিলক্ষী দেশের প্রতি সম্প্রসন্না। তাঁহার কৃপায় অথবষণা হইতেছে। সেই অর্থ রাজা, ভুস্বামী, বণিক, মহাজন সকলেই কুড়াইতেছে। অতএব সেই শ্ৰীবদ্ধিতে রাজা, ভুস্বামী, বণিক, মহাজন। সকলেরই শ্ৰীবদ্ধি। কেবল কৃষকের শ্ৰীবদ্ধি নাই। সহস্ৰ লোকের মধ্যে কেবল নয় শত নিরানব্বই জনের তাহাতে শ্ৰীবদ্ধি নাই। এমত শ্ৰীবদ্ধির জন্য যে জয়ধবনি তুলিতে চাহে, তুলক; আমি তুলিব না। এই নয় শত নিরানব্বই জনের শ্ৰীবদ্ধি না দেখিলে, আমি কাহারও জয় গান করিব না। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ-জামীদার জীবের শত্র জীব; মনষ্যের শত্ৰ মনষ্যে; বাঙ্গালী কৃষকের শত্র বাঙ্গালী ভূস্বামী। ব্যাপ্লাদি বহজন্তু, ছাগাদি ক্ষদ্র জন্তুগণকে ভক্ষণ করে; রোহিত্যাদি বহৎ মৎস্য, সফরীদিগকে ভক্ষণ করে; জমীদার নামক বড় মানষি, কৃষক নামক ছোট মানষেকে ভক্ষণ করে। জমীদার প্রকৃত

  • যখন এ প্রবন্ধ লিখিত হয়, তখন Census হয় নাই।

আমরা মক্তকণ্ঠে স্বীকার করি, সকল ভূস্বামী এ চরিত্রের নহেন। অনেকের যথাৰ্থ দয়া ধৰ্ম্মম আছে। &SS