পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী পক্ষে কৃষকদিগকে ধরিয়া উদারস্থ করেন না বটে, কিন্তু যাহা করেন, তাহা অপেক্ষা হৃদয়শোণিত পান করা দয়ার কাজ। কৃষকদিগের অন্যান্য বিষয়ে যেমন দদশা হউক না কেন, এই সব্বরত্নপ্ৰসবিনী বসন্মতী কষণ করিয়া তাহাদিগের জীবনোপায় যে না হইতে পারিত, এমত নহে। কিন্তু তাহা হয় না; কৃষকে পেটে খাইলে জমীদার টাকার রাশির উপর টাকার রাশি ঢালিতে পারেন না। সতরাং তিনি কৃষককে পেটে খাইতে দেন না। আমরা জমীদারের দ্বেষক নাহি। কোন জমীদার কর্তৃক কখন আমাদিগের অনিস্ট হয় নাই। বরং অনেক জমীদারকে আমরা বিশেষ প্রশংসাভাজন বিবেচনা করি। যে সহৃদগণের প্রীতি আমরা এ সংসারের প্রধান সখের মধ্যে গণনা করি, তাঁহাদিগের মধ্যে অনেকে জমীদার। জমীদারেরা বাঙ্গালী জাতির চড়া, কে না। তাঁহাদিগের প্রীতিভাজন হইবার বাসনা করে ? কিন্তু আমরা যাহা বলিতে প্রবত্ত হইতেছি, তাহতে প্ৰীতিভাজন হওয়া দরে থাকুক, যিনি আমাদের কথা ভাল করিয়া না বঝিবেন, হয় তা তাঁহার বিশেষ অপ্ৰীতিপাত্ৰ হইব। তাহা হইলে, আমরা বিশেষ দঃখিত হইব। কিন্তু কৰ্ত্তব্য কাৰ্য্যােনরোধে তাহাও আমাদিগকে স্বীকার করিতে হইতেছে। বঙ্গীয় কৃষকেরা নিঃসহায়, মনষ্যিমধ্যে নিতান্ত দন্দ শাপন্ন, এবং আপনাদিগের দঃখ সমাজমধ্যে জানাইতেও জানে না। যদি মকের দঃখ দেখিয়া তাহা নিবারণের ভরসায় একবার বাক্যব্যয় না করিলাম, তবে মহাপাপ সম্পশে । আমরা এই প্রবন্ধের জন্য হয় তা সমাজশ্রেষ্পাঠ ভুস্বামিমন্ডলীর বিরাগভাজন হইব-অনেকের নিকট তিরস্কৃত, ভৎসিত, উপহাসিত, অমৰ্যাদাপ্রাপ্ত হইব-বন্ধবেগের অপ্রীতিভাজন হইব। কাহারও নিকট মাখ, কাহারও নিকট দ্বেষক, কাহারও নিকট মিথ্যাবাদী বলিয়া প্ৰতিপন্ন হইব। সে সকল ঘটে, ঘটক। যদি সেই ভয়ে বঙ্গদর্শন, কাতরের হইয়া কাতরোক্তি না করে,-পীড়িতের পীড়া নিবারণের জন্য যত্ন না করে,-যদি কোন প্রকার অন্যুরোধের বশীভুত হইয়া সত্য কথা বলিতে পরাজমখ হয়, তবে যত শীঘ্ৰ বঙ্গদর্শন বঙ্গভূমি হইতে লিপ্ত হয়, ততই ভাল। যে কন্ঠ হইতে কাতরের জন্য কাতরোক্তি নিঃসতে না হইল, সে কন্ঠ রদ্ধ হউক। যে লেখনী আত্তের উপকারার্থ না লিখিল, সে লেখনী নিৰ্ম্মফলা হউক। যাঁহারা নীচ, তাঁহারা যাহা ইচ্ছা বলিবেন, আমরা ক্ষতি বিবেচনা করিব না। যাঁহারা মহৎ, তাঁহারা আমাদিগকে ভ্ৰান্ত বলিয়া মাজজনা করিবেন -এই ভিক্ষা। আমরা জানিয়া শনিয়া কোন অযথার্থ্যেক্তি করিব না। বরং আমাদিগের ভ্ৰম দেখাইয়া দিলে, কৃতজ্ঞ হইয়া তাহা স্বীকার একরিব। যতক্ষণ না যে ভ্ৰম দেখিব, ততক্ষণ যাহা বলিব, মক্তকণ্ঠেই বলিব। আমাদিগের বিশেষ বক্তব্য এই আমরা যাহা বলিতেছি, তাহা ‘জমীদার সম্প্রদােয়’ সম্পবন্ধে বলিতেছি না। যদি কেহ বলেন, জমীদার মাত্রেই দারাত্মা বা অত্যাচারী, তিনি নিতান্ত মিথ্যাবাদী। অনেক জমীদার সদাশয়, প্রজাবৎসল এবং সত্যনিষ্ঠ। সতরাং তাঁহাদিগের সম্পবন্ধে এই প্ৰবন্ধপ্রকাশিত কথাগালি বত্তে না। কতকগলি জমীদার অত্যাচারী; তাঁহারা এই প্রবন্ধের লক্ষ্য। আমরা সংক্ষেপের জন্য এ কথা আগেই বলিয়া রাখিলাম। যেখানে জমীদার বলিয়াছি সেইখানে ঐ অত্যাচারী জমীদারগালিই বাবাইবে। পাঠক মহাশয় ‘জমীদার সম্প্রদায়” NT বাঙ্গালী কৃষক যাহা ভূমি হইতে উৎপন্ন করে, তাহা কিছ অধিক নহে। তাহা হইতে প্রথমতঃ চাষের খরচ হয়। তাহা অলপ নহে। বীজের মাল্য পোষাইতে হইবে, কৃষণের বেতন দিতে , গোেরর খোরাক আছে; এ প্রকার অন্যান্য খরচও আছে। তাহা তাহা পরিশোধ করিতে হইবে। কেবল পরিশোধ নহে, দেড়ী সািদ দিতে হইবে। শ্রাবণ মাসে দই বিশ ধান লইয়াছে বলিয়া, পৌষ মাসে তিন বিশ দিতে হইবে। যাহা রহিল, তাহা অলপ। তাহা হইতে জমীদারকে খাজনা দিতে হইবে। তাহা দিল। পরে যাহা বাকি রহিলঅপাবশিষ্ট, অলপ খদের খাদ, চব্বিতি ইক্ষর রস, শাক পঢ়বলের মাত্তিকাগত বারি-তােহাতে অতি কন্টে দিনপাত হইতে পারে, অথবা দিনপাত হইতে পারে না। তাঁহাই কি কৃষকের ঘরে যায় ? পাঠক মহাশয় দেখােন - পৌষ মাসে ধান কাটিয়াই কৃষকে পৌষের কিস্তি খাজনা দিল। কেহ কিস্তি পরিশোধ করিল। -কাহারও বাকি রহিল। ধান পালা দিয়া, আছড়াইয়া, গোলায় তুলিয়া, সময়মতে হাটে লইয়া গিয়া, বিক্রয় করিয়া কৃষক সম্পবৎসরের খাজনা পরিশোধ করিতে চৈত্র মাসে জমীদারের কাছারিতে RSSR