পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক আসিল। পরাণ মন্ডলের পৌষের কিস্তি পাঁচ টাকা; চারি টাকা দিয়াছে, এক টাকা বাকি আছে। আর চৈত্রের কিস্তি তিন টাকা। মোটে চারি টাকা সে দিতে আসিয়াছে। গোমস্তা হিসাব করিতে বসিলেন। হিসাব করিয়া বলিলেন, “তোমার পৌষের কিস্তি তিন টাকা বাকি আছে।” পরাণ মণডেল অনেক চীৎকার করিল-দোহাই পাড়িল-হয় তা দাখিলা দেখাইতে পারিল, নয় তা না। যাহা হউক, তিন টাকা বাকি সস্বীকার না করিলে সে আখিাঁর কবচ পায় না। হয় তা তাহা না র টাকা করিয়া নালিশ করবে। সতরাং পরাণ মন্ডল বাকি সস্বীকার করিল। মনে কর, তিন টাকাই তাহার যথার্থ দেন। তখন গোমস্ত য়। চারি। আনা। তিন বৎসরেও চারি। আনা, এক মাসেও তিন টাকা বাকির সােদ দ০ আনা। পরাণ তিন টাকা বাের আনা দিল। পরে চৈত্র কিস্তি তিন টাকা দিল। তাহার পর গোমস্তার হিসাবানা। তাহা টাকায় দই পয়সা। পরাণ মন্ডল ৩২ টাকার জমা রাখে। তাহাকে হিসাবানা ১ টাকা দিতে হইল। তাহার পর পাকবাণী। নাএব। গোমস্তা, তহশীলদার, মহরি, পাইক, সকলেই পাব্বিাণীর হকদার। মোটের উপর পড়তা গ্রাম হইতে এত টাকা আদায় হইল। সকলে ভাগ করিয়া লইলেন। পরাণ মন্ডলকে তত্তজন্য उाल प्रई का निरऊ श्ल। এ সকল দৌরাত্ম্য জমীদারের অভিপ্রায়ানসারে হয় না, তাহা স্বীকার করি। তিনি ইহার মধ্যে ন্যায্য খাজনা এবং সােদ ভিন্ন আর কিছই পাইলেন না, অবশিষ্ট সকল না এব। গোমস্তার উদরে গেল। সে কাহার দোষ ? জমীদার যে বেতনে দ্বারবান রাখেন, না এবেরও সেই বেতন; গোমস্তার বেতন খানসামার বেতন অপেক্ষা কিছল কম। সতরাং এ সব না করিলে তাহদের দিনপাত হয় কি প্রকারে ? এ সকল জমীদারের আজ্ঞানসারে হয় না বটে, কিন্তু তাঁহার কাপণ্যের ফল। প্রজার নিকট হইতে তাঁহার লোকে আপনি উদরপত্তির জন্য অপহরণ করিতেছে, তাহাতে তাঁহার ক্ষতি কি ? তাঁহার কথা কহিবার কি প্রয়োজন আছে ? তাহার পর আষাঢ় মাসে নববর্ষের শােভ পণ্যাহ উপস্থিত। পরাণ পণ্যাহের কিস্তিতে দই টাকা খাজানা দিয়া থাকে। তাহা ত সে দিল, কিন্তু সে কেবল খাজানা। শািভ পণ্যাহের দিনে জমীদারকে কিছ নজর দিতে হইবে। তাহাও দিল। হয় তা জমীদারেরা অনেক শরিক, প্রত্যেককে পথক পথক নজর দিতে হয়। তাহাও দিল। তাহার পর নাএব মহাশয় আছেন —তাঁহাকেও কিছ নজর দিতে হইবে। তাহাও দিল। পরে গোমস্তা মহাশয়েরা, তাঁহাদের ন্যায্য পাওনা তাঁহারা পাইলেন। যে প্রজার অর্থ নজর দিতে দিতে ফরাইয়া গেল-তাহার কাছে বাকি রহিল। সময়ান্তরে আদায় হইবে। পরাণ মন্ডল সব দিয়া থাইয়া ঘরে গিয়া দেখিল, আর আহারের উপায় নাই। এদিকে চাষের সময় উপস্থিত। তাহার খরচ আছে। কিন্তু ইহাতে পরাণ ভীত নহে। এ ত প্রতি বৎসরই ঘটিয়া থাকে। ভরসা মহাজন। পরাণ মহাজনের কাছে গেল। দেড়ী সদে ধান লইয়া আসিল, আবার আগামী বৎসর তাহা সাদ সমেত শান্ধিয়া নিঃসব হইবে। চাষা চিরকাল ধার করিয়া খায়, চিরকাল দেড়ী সদা দেয়। ইহাতে রাজার নিঃসব হইবার সম্ভাবনা, চাষা কোন ছার! হয় তা জমীদার নিজেই মহাজন। গ্রামের মধ্যে তাঁহার ধানের গোলা ও গোলাবাড়ী আছে। পরাণ সেইখান হইতে ধান লইয়া আসিল। এরপ জমীদারের ব্যবসায় মলদ’ নহে। স্বয়ং প্রজার অর্থাপহরণ করিয়া, তাহাকে নিঃস্ব করিয়া, পরিশেষে কােজ দিয়া, তাহার কাছে দেড়ী সদ ভোগ করেন। এমত অবস্থায় যত শীঘ্র প্রজার অর্থ অপহৃত করিতে পারেন, ততই তাঁহার লাভ। সকল বৎসর সমান নহে। কোন বৎসর উত্তম ফসল জন্মে, কোন বৎসর জন্মে না। অন্য কীটের দৌরাত্ম্যও আছে। যদি ফসলের সােলক্ষণ দেখে, তবেই মহাজন কােজ দেয়; নচেৎ দেয় না। কেন না, মহাজন বিলক্ষণ জানে যে, ফসল না হইলে কৃষক ঋণ পরিশোধ করিতে পরিবে না। তখন কৃষক নিরাপায়। অন্নাভাবে সপরিবারে প্রাণে মারা যায়। কখন ভরসার মধ্যে বন্য অখাদ্য ফলমল, কখন ভরসা “রিলিফা”, কখন ভিক্ষা, কখন ভরসা কেবল জগদীশ্বর। অলপসংখ্যক মহাত্মা ভিন্ন কোন জমীদারই এমন দঃসময়ে প্রজার ভরসার স্থল নহে। মনে কয়, সে বার সবৎসর। পরাণ মন্ডল কলেেজ পাইয়া দিনপাত করিতে লাগিল। R O