পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্ৰবন্ধ-বঙ্গদেশের কৃষক “ডাকটেক্স”। গবৰ্ণমেণ্ট নানাবিধ করা বসাইতেছেন, জমীদারেরা তাহা লইয়া মহা কোলাহল করিয়া থাকেন। কিন্তু তাঁহারা সকলেই কি ঘর হইতে টেক্স দিয়া থাকেন ? ঐ “ডাকটেক্স” কথাটি তাহার প্রমাণ। গবৰ্ণমেণ্ট বিধান করিলেন, মফঃস্বলে ডাক চলিবে, জমীদারেরা তাহার খরচা দিবেন। জমীদারেরা মনে মনে বলিলেন, “ভাল, দিতে হয় দিব, কিন্তু ঘরে থেকে দিব না। আমরাও প্রজাদের উপর টেক্স বসাইব। যদি বসাইতে হইল, তবে একট চাপাইয়া বসাই, যেন কিছ মনোফা থাকে।” তাহাই করিলেন। প্রজার খরচে ডাক চলিতে লাগিল—জমীদারেরা মাঝে মুক্তি লাভ করলেন। গবর্নমেন্ট যখন টেক্স বসান একবার যেন ভাবিয়া দেখেন, কাঞ্ছা! ঘাড়ে পড়ে। : ইনকিম টেক্সও ঐরােপ। প্রজারা জমীদারের ইন কমটেক্স দেয়। এবং জমীদার তাহা হইতে কিছ মনোফা রাখেন। খাস মহল যাঁহারা গ্রহণ করেন, তাঁহাদিগকে রোড ফন্ড দিতে হয়। ঐ রোড ফন্ড আমরা ভূস্বামীর জমাওয়াশীল বাকিভুক্ত দেখিয়াছি। রোডসেন্স এই প্রবন্ধ লিপির সময় পৰ্যন্ত গবৰ্ণমেণ্ট কোথাও হইতে আদায় করেন নাই। কিন্তু জমীদারেরা কেহ কেহ আদায় করিতেছেন। আদায় করিবার অধিকার আছে, কিন্তু তাহা টাকায় এক পয়সার অধিক হইতে পারে না। এক জেলায় এক জন জমীদার। ইহার মধ্যে টাকায় চারি। আনা আদায় করিতে আরম্ভ করিলেন। এক জন প্ৰজা দিতে স্বীকৃত না হওয়াতে, তাহাকে ধরিয়া আনিয়া পীড়ন আরম্ভ করিলেন। প্ৰজা নালিশ করিল, এবার আসামী “আইন অনসারে।” খালাস পাইল না। জমীদার মহাশয় এক্ষণে শ্ৰীঘরে বাস করিতেছেন। সব্বাপেক্ষা নিম্নলিখিত “হাসপাতালির” বক্তান্তটি কৌতুকাবহ। সবডিবিসনের হাকিমেরা স্কুল, ডিসেম্পন্সরি করিতে বড় মজবন্ত।। ২৪ পরগণার কোন আসিল্টাণ্ট মাজিস্ট্রেট স্বীয় সাব-ডিবিসনে একটি ডিসেপন্সর করিবার জন্য তৎপ্রদেশীয় জমীদারগণকে ডাকাইয়া সভা করিলেন। সকলে কিছ কিছ মাসিক চাঁদা দিতে স্বীকৃত হইয়া গেলেন। একজন বাটী। গিয়া হকুম প্রচার করিলেন যে, “আমাকে মাসে মাসে এত টাকা হাসপাতালের জন্য চাঁদা দিতে হইবে, অতএব আজি হইতে প্ৰজাদিগের নিকট টাকায় /০ আনা হাসপাতালি আদায় করিতে থাকিবে।” গোমস্তারা তদ্রােপ আদায় করিতে লাগিল। এদিকে ডিপেন্সরির সকল যোগাড় হইয়া উঠিল না-তােহা সংস্থাপিত হইল না। সতরাং ঐ জমীদারকে কখন এক পয়সা চাঁদা দিতে হইল না। কিন্তু প্ৰজাদিগের নিকট চিরকাল টাকায় এক আনা হাসপাতালি আদায় হইতে লাগিল। কয়েক বৎসর পরে জমীদার ঐ প্রজাদিগের খাজনার হার বাড়াইবার জন্য ১৮৫৯ সালের দশ আইনের নালিশ করিলেন। প্রজারা জবাব দিল যে, “আমরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় হইতে এক হারে খাজানা দিয়া আসিতেছি-কখন হার বাড়ে কমে নাই-সতরাং আমাদিগের খাজনা বাড়িতে পারে না।” জমীদার তাহার প্রত্যুত্তর এই দিলেন যে, উহারা আমােক সন হইতে হাসপাতালি বলিয়া /o খাজনা বেশী দিয়া আসিতেছে। সেই হেতুতে আমি খাজনা বদ্ধি করিতে চাই। A? এক্ষণে জমীদারদিগের পক্ষে কয়েকটি কথা বলিবার প্রয়োজন আছে। প্রথমতঃ, আমরা পকেবই বলিয়াছি যে, সকল জমীদার অত্যাচারী নহেন। দিন দিন অত্যাচারপরায়ণ জমীদারের সংখ্যা কমিতেছে। কলিকাতাস্থ সশিক্ষিত ভূস্বামীদিগের কোন অত্যাচার নাই-যাহা আছে, তাহা তাঁহাদিগের অজ্ঞাতে এবং অভিমতবিরদ্ধে, নায়েব গোমস্ত গণের দ্বারায় হয়। মফঃস্বলেও অনেক সশিক্ষিত জমীদার আছেন, তাঁহাদিগেরও প্রায় ঐরােপ। বড় বড় জমীদারদিগের অত্যাচার তত অধিক নহে-অনেক বড় বড় ঘরে অত্যাচার একেবারে নাই। সামান্য সামান্য ঘরেই অত্যাচার অধিক। যাঁহার জমীদারী হইতে লক্ষ টাকা আইসেঅধৰ্ম্মমাচরণ করিয়া প্ৰজাদিগের নিকট আর ২৫ হাজার টাকা লইবার জন্য তাঁহার মনে প্রবত্তি দৰবলা হইবারই সম্ভাবনা, কিন্তু যাঁহার জমীদারী হইতে বার মাসে শত টাকা আসে না, অথচ জমীদারী চাল-চলনে চলিতে হইবে, মারপিট করিয়া আর কিছ সংগ্ৰহ করিবার ইচ্ছা! তাঁহাতে সতরাং বলবতী হইবে। আবার যাঁহারা নিজে জমীদার, আপন প্রজার নিকট খাজনা আদায় করেন, তাঁহাদের অপেক্ষা পত্তনীদার, দরপত্তনীদার, ইজারাদারের দৌরাত্ম্য অধিক। আমরা সংক্ষেপনরোধে উপরে কেবল জমীদার শব্দ ব্যবহার করিয়াছি। জমীদার অথোঁ &Sa