পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী করগ্রাহী বঝিতে হইবে। ইহারা জমীদারকে জমীদারের লাভ দিয়া, তাহার উপর লাভ করিবার জন্য ইজারা পত্তানি গ্রহণ করেন, সতরাং প্রজার নিকট হইতে তাঁহাদিগকে লাভ পোষাইয়া লইতে হইবে। মধ্যবত্তীর্ণ তালকের সজেন প্রজার পক্ষে বিষম অনিষ্কণ্টকর। দ্বিতীয়তঃ, আমরা যে সকল অত্যাচার বিবত করিয়াছি, তাহার অনেকই জমীদারের অজ্ঞাতে, কখন বা অভিমতবিরদ্ধে, নায়েব গোমস্ত প্রভৃতি দ্বারা হইয়া থাকে। প্রজার উপর যে কোনরাপ পীড়ন হয়, অনেকেই তাহা জানেন না। তৃতীয়তঃ, অনেক জমীদারীর প্রজাও ভাল নহে। পীড়ন না করিলে খাজানা দেয় না। সকলের উপর নালিশ করিয়া খাজনা আদায় করিতে গেলে জমীদারের সব্বনাশ হয়। কিন্তু এতৎসম্পবন্ধে ইহাও বক্তব্য যে, প্রজার উপর আগে অত্যাচার না হইলে, তাহারা বিরাদ্ধভােব ধারণ कद का । যাঁহারা জমীদারদিগকে কেবল নিন্দা করেন, আমরা তাঁহাদিগের বিরোধী। জমীদারদের দ্বারা অনেক সৎকাৰ্য্য অনস্ঠিত হইতেছে। গ্রামে গ্রামে যে এক্ষণে বিদ্যালয় সংস্থাপিত হইতেছে, আপামর সাধারণ সকলেই যে আপন আপন গ্রামে বসিয়া বিদ্যোপাডজািন করিতেছে, ইহা জমীদারদিগের গণে। জমীদারেরা অনেক স্থানে চিকিৎসালয়, রথ্যা, অতিথিশালা ইত্যাদির সােজন করিয়া সাধারণের উপকার করিতেছেন। আমাদিগের দেশের লোকের জন্য যে ভিন্নজাতীয় রাজপরিষদিগের সমক্ষে দটাে কথা বলে, সে কেবল জমীদারদের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিএশন-জমীদারদের সমাজ। তদ্দ্বারা দেশের যে মঙ্গল সিদ্ধ হইতেছে, তাহা অন্য কোন সম্প্রদায় হইতে হইতেছে না বা হইবারও সম্ভাবনা দেখা যায় না। অতএব জমীদারদিগের কেবল নিন্দা করা অতি অন্যায়পরতার কাজ। এই সম্প্রদায়ভুক্ত কোন কোন লোকের দ্বারা যে প্রজাপীড়ন হয়, ইহাই তাঁহাদের লজাজাজনক কলঙ্ক। এই কলঙ্ক অপনীত করা জমীদারদিগেরই হাত। যদি কোন পরিবারে পাঁচ ভাই থাকে, তাহার মধ্যে দাই ভাই দশচরিত্র হয়, তবে আর তিন জনে দশচরিত্র ভ্রাতৃদ্বয়ের চরিত্রসংশোধনজন্য যত্ন করেন। জমীদারসম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের বক্তব্য এই যে, তাঁহারাও সেইরাপ করন। সেই কথা বলিবার জন্যই আমাদের এ প্রবন্ধ লেখা। আমরা রাজপরিষদিগকে জানাইতেছি না-জনসমাজকে জানাইতেছি না। জমীদারদিগের কাছেই আমাদের নালিশ। ইহা তাঁহাদিগের অসাধ্য নহে। সকল দণড অপেক্ষা, আপন সম্প্রদায়ের বিরাগ, আপনি সম্প্রদায়ের মধ্যে অপমান সব্বাপেক্ষা গরতর, এবং কাৰ্যকরী। যত কুলোক চুরি করিতে ইচ্ছক হইয়া চৌয্যে বিরত, তাহদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিবাসীদিগের মধ্যে চোর বলিয়া ঘণিত হইবার ভয়ে চুরি করে না। এই দন্ড যত কাৰ্যকরী, আইনের দন্ড তত নহে। জমীদারের পক্ষে এই দশান্ড জমীদারেরই হাত। অপর জমীদারদিগের নিকট ঘণিত, অপমানিত, সমাজচ্যুত হইবার ভয় থাকিলে, অনেক দৰবত্ত জমীদার দািব্বত্তি ত্যাগ করিবে। এ কথার প্রতি মনোযোগ করিবার জন্য আমরা ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনকে অনরোধ করি। যদি তাঁহারা কুচরিত্র জমীদারগণকে শাসিত করিতে পারেন, তবে দেশের যে মঙ্গল সিদ্ধ হইবে, তৰ্ভুজন্য তাঁহাদিগের মাহাত্ম্য অনন্ত কাল পৰ্যন্ত ইতিহাসে কীৰ্ত্তিত হইবে। এবং তাঁহাদিগের দেশ উচ্চতর সভ্যতার পদবীতে আরোহণ করবে। এ কাজ না হইলে, বাঙ্গালা দেশের মঙ্গলের কোন ভরসা নাই। যাঁহা হইতে এই কায্যের সত্রপাত হইবে, তিনি বাঙ্গালীর মধ্যে শ্রেজঠ বলিয়া পজিত হইবেন। কি উপায়ে এই কায্য সিদ্ধ হইতে পারে, তাহা অবধারিত করা কঠিন, ইহা স্বীকার করি। কঠিন, কিন্তু অসাধ্য নহে। উক্ত সমাজের কার্য্যাধ্যক্ষগণ যে এ বিষয়ে অক্ষম, আমরা এমত বিশ্বাস করি না। তাঁহারা সশিক্ষিত, তীক্ষাবদ্ধি, বহােদশী, এবং কায্যক্ষম। তাঁহারা ঐকান্তিকচিত্তে যত্ন করিলে অবশ্য উপায় স্থির হইতে পারে। আমরা যাহা কিছ. এ বিষয়ে বলিতে পারি, তদপেক্ষা তাঁহাদিগের দ্বারা সচার প্রণালী আবিস্কৃত হইতে পরিবে বলিয়াই আমরা সে বিষয়ে কোন কথা বলিলাম না। যদি আবশ্যক হয়, আমাদিগের সামান্য বদ্ধিতে যাহা আইসে, তাহা বলিতে প্ৰস্তৃত আছি। এক্ষণে কেবল এই বক্তব্য যে, তাঁহারা যদি এ বিষয়ে অন্যরাগহীনতা দেখাইতে থাকেন, তাহা হইলে তাঁহাদিগেরও অখ্যাতি । RS by